বাংলাদেশে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ৩০ হাজার
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১০ লাখ ৩০ হাজার জনের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে তাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করছে বাংলাদেশ সরকার।
গত বছরের ২৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন শুরুর পর জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হয়। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন কাজ শুরু হয়। পাসপোর্ট অধিদপ্তর নিবন্ধন কাজ বাস্তবায়ন করছে।
সোমবার সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, “আজ পর্যন্ত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোট ১০ লাখ ২৯ হাজার ৮৩৬ জনের নিবন্ধন করা হয়েছে।”
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমার নাগরিকদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় ছয়টি ক্যাম্পের মাধ্যমে নিবন্ধিত করা হচ্ছে।
তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর এ পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৩৭৩ জন এতিম শিশুকে শনাক্ত করেছে। এদের মধ্যে ১৭ হাজার ৩৯৫টি ছেলে এবং ১৮ হাজার ৯৭৮টি মেয়ে। বাবা-মা কেউ নেই এমন শিশুর সংখ্যা ৭ হাজার ৭৭১ জন।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬ লাখ ৮০ হাজার। তার আগে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়ে আছে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গাদের ফেরাতে গত ২৩ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে এ দ্বিপক্ষীয় ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী দুই মাস অর্থাৎ মঙ্গলবারের মধ্যে এসব রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হওয়ার কথা। এই চুক্তি বাস্তবায়নে ১৬ জানুয়ারি আরেকটি ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সম্মত হওয়ার সময় থেকে দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে দেড় হাজার রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিতে রাজিও হয়েছে মিয়ানমার।
তবে, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই বিক্ষোভ শুরু করেছে কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা। দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির চুক্তির বাইরে নতুন করে ছয়টি শর্ত দিয়ে কয়েক দিন ধরেই কক্সবাজারের বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা শিবিরে বিক্ষোভ করছে তারা। তাছাড়া জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী মিয়ানমারে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত তড়িঘড়ি প্রত্যাবসনের ব্যাপরে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ২৩ জানুয়ারির মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়া উচিত কিন্তু সম্ভব নয়। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে না হলেও ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই প্রত্যাবাসন শুরু হবে। কারণ আমরা স্বেচ্ছায়, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে চাই। খুব শিগগিরই রোহিঙ্গাদের তালিকা দেয়া হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।