সম্পদের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য

৪২ ধনী বনাম ৩৭০ কোটি দরিদ্র

Rich Poorমাত্র ৪২ জন ধনী ব্যক্তির হাতে যে সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে আছে তা পৃথিবীর অর্ধেক গরিব মানুষের হাতে থাকা সম্পদের সমান। দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ৪২ ধনী ব্যক্তি বিশ্বের ৩৭০ কোটি দরিদ্রতম মানুষের সমান সম্পদের অধিকারী। গতকাল সোমবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, ২০১৭ সালে বিশ্বে যে পরিমাণ সম্পদ উৎপাদিত হয়েছে তার ৮২ শতাংশই গেছে মাত্র ১ শতাংশ ধনীর হাতে। এই পরিস্থিতিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে ধনী ও গরিবের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য কমানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার জন্য বিশ্বনেতাদের তাগিদ দিয়েছে অক্সফাম।
বিশ্বের ধনী-গরিব সম্পদের বৈষম্য নিয়ে প্রতি বছরই প্রতিবেদন প্রকাশ করে অক্সফাম। ২০১৭ সালে অক্সফাম প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল বিশ্ব-জনসংখ্যার দরিদ্রতম অর্ধেক মানুষের সমান সম্পদ কুক্ষিগত রয়েছে মাত্র ৬১ জন ধনী ব্যক্তির হাতে। ২০১৬ সালে ৬২ ধনীর হাতে দরিদ্রতম অর্ধেক মানুষের সম্পদ কুক্ষিগত থাকার কথা জানিয়েছিল অক্সফাম। আর ২০০৯ সালে অর্ধেক গরিবের সমান সম্পদ কুক্ষিগতকারী ধনীর সংখ্যা ছিল ৩৮০ জন। এবার অক্সফাম বলছে, বিশ্বের মাত্র ৪২ জন ধনীর হাতে দরিদ্রতম অর্ধেক মানুষের সমান সম্পদ কুক্ষিগত রয়েছে। সংস্থাটির দাবি, গত ১২ মাসে ধনকুবেরদেরকে প্রতি দুই দিন পর পরই সম্পদ অর্জনের নতুন রেকর্ড গড়তে দেখা গেছে। অতচ একই সময়ে বিশ্ব জনসংখ্যার দরিদ্রতম ৫০ শতাংশ মানুষের সম্পদের পরিমাণ বাড়ার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।
অক্সফাম গ্রেট ব্রিটেনের প্রধান নির্বাহী মার্ক গোল্ডরিং বলেন, ‘শীর্ষ কাতারে এতো বেশি সম্পদ অর্জনটা সমৃদ্ধ অর্থনীতির চিহ্ন নয়, বরং এটি এমন এক ব্যবস্থার লক্ষণ যা কম মজুরিতে আমাদের জন্য পোশাক ও খাদ্য উৎপাদনকারী লাখ লাখ শ্রমিককে ব্যর্থ করছে।’ অক্সফাম জানিয়েছে, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে বিশ্বের ধনকুবেরদের সম্পদের পরিমাণ ১৩ শতাংশ করে বেড়েছে।
সংস্থাটি মনে করে, যখন ন্যুনতম মজুরি পাওয়ার জন্য লাখ লাখ মানুষ সংগ্রাম করছে তখন এতো অল্প সংখ্যক মানুষের হাতে এতো বেশি সম্পদ কুক্ষিগত থাকাটা ‘অগ্রহণযোগ্য’। বৈষম্য কমাতে কর ফাঁকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং শ্রমিকদের মজুরি নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অক্সফাম।
গত ডিসেম্বরে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ২০১৭ সালে বিশ্বের ধনকুবেররা আগের চেয়ে আরও বেশি সম্পদের মালিক হয়েছেন। শীর্ষস্থানীয় ৫০০ ধনীর সম্পদের পরিমাণ হিসাব করে ব্লুমবার্গ জানায়, ২০১৭ সালে তারা সবাই মিলে আগের চেয়ে ১ ট্রিলিয়ন (১ লাখ কোটি) ডলার বেশি ধনী হয়েছেন। আগের বছরের তুলনায় এর পরিমাণ চার গুণ বেশি। ব্লুমবার্গ বিলিওনিয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বিশ্বের ধনী শ্রেণির সম্পদের পরিমাণ ২৩ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৭ সালে অ্যামাজন.কম এর প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এর সম্পদের ভা-ারে সবচেয়ে বেশি যুক্ত হয়েছে। অক্টোবরে বিশ্বের শীর্ষ ধনী এবং মাইক্রোসফট করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের স্থান দখল করে নেন তিনি। ২০১৩ সালের মে মাস থেকে শীর্ষ স্থানটি ধরে রেখেছিলেন ৬২ বছর বয়সী গেটস। তবে নভেম্বরের শেষ নাগাদ বেজোসের সম্পদের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায় এবং তিনি গেটসকে টপকে যান।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button