অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরাতে আর্থিক সহায়তা দেবে ইইউ
ইউরোপে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের একটি উন্নয়ন মডেলের অধীনে ফেরত আনতে চায় সরকার। যাতে তারা নিজে থেকেই দেশে ফিরে আসতে উৎসাহিত বোধ করে। ইতোমধ্যে ওই উন্নয়ন মডেলের আওতায় ইউরোপ ত্যাগ করা বাংলাদেশিদের প্রণোদনা দিতে সাড়ে ১২ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করেছে ইইউ।
এ বিষয়ে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা চাই ইউরোপে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা নিজ আগ্রহে দেশে ফেরত আসুক। এজন্য অভিবাসীরা দেশে ফেরত আসার সময় একটি ডেভেলপমেন্ট মডেলের আওতায় তাদের আর্থিক প্রণোদনা দিতে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) বলেছি। যাতে তারা দেশে ফেরত এসে নিজস্ব উদ্যোগে কিছু করতে পারে। ইতোমধ্যে প্রণোদনার জন্য অর্থ বরাদ্দও করেছে ইইউ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা ইউরোপে যায়, তারা প্রচুর অর্থ খরচ করেই যায়। তারা প্রধানত অর্থনৈতিক কারণেই যায়। ফলে তারা সেখানে অবৈধভাবে অবস্থান করে যত বেশি অর্থ আয় করা সম্ভব সেই চেষ্টা করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি অনুযায়ী, ইউরোপের দেশগুলো সেখান থেকে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে পারবে। বাংলাদেশ এই গোটা প্রক্রিয়াটি একটি উন্নয়ন মডেলের আওতায় করতে চায়। এই মডেলের মধ্যে অভিবাসীদের পুনর্বাসন, কর্মসংস্থানের জন্য অর্থ যোগান ও প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয় থাকবে।
ওই কর্মকর্তা জানান, এই খাতে ইইউ আগে সাড়ে ছয় মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ রেখেছিল। বর্তমানে তারা আরও ছয় মিলিয়ন বরাদ্দ করেছে। পরে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে ইউরোপের দেশগুলোর এই জোট।
চুক্তিরবাস্তবায়ন
গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং ইইউর অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী দিমিত্রিস আভ্রেমোপোলস ইউরোপ থেকে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত আনার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেন। গত মাসে এর প্রথম যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত হয়।
সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের পর এর অধীনে গত চার মাসে অন্তত ৪০ জন বাংলাদেশি ফেরত এসেছেন। জার্মানি কমপক্ষে ১০০ জনের একটি তালিকা দিয়েছিল। সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে অনিয়মিতদের ফেরত আনা হয়েছে এবং বাকিদের বিষয়ে যাচাই বাছাই চলছে।
এ চুক্তির অধীনে প্রথম ছয় মাস প্রতিমাসে ১০০ জনের বেশি তারা ফেরত পাঠাতে পারবে না।
ইউরোপে কত জন অনিয়মিত বাংলাদেশি আছে এর কোনও তালিকা আছে কিনা জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা একাধিকবার তাদের কাছে তালিকা চেয়েছি কিন্তু তারা এটি সরবরাহ করতে পারেনি।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, গতমাসে ডেনমার্ক ও নরওয়েতে অনিয়মিত ১২ জন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর যারা বাংলাদেশি তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে। তিনি বলেন, একজন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর আগে তার নাগরিকত্ব ইউরোপেই নিশ্চিত করতে হবে এবং তার বিরুদ্ধে সব ধরনের প্রশাসনিক ও আইনগত বিধিবিধান শেষ করতে হবে।
২০১৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় ২৬ হাজার, ২০১৫ সালে প্রায় ২১ হাজার এবং ২০১৬ সালে প্রায় ২৫ হাজার রেসিডেন্ট পারমিট ইস্যু করে। কিন্তু ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত মাত্র ৪ হাজার ১০০ পারমিট ইস্যু করা হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাজ্য বাদে ইইউর বাকি ২৭টি দেশে প্রায় দুই লাখ বৈধ ভিসাধারী বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। যাদের সেখানে থাকার এবং কাজ করার অনুমতি আছে। অন্য আরেকটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৬ সালে প্রায় ৮ হাজার ২০০ জন এবং ২০১৭ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বাংলাদেশি ইতালিতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে।