‘আমেরিকা ফার্স্ট’ মানে আমেরিকা একা নয়
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ মানে আমেরিকা একা নয়। গতকাল শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের উদ্বোধনী ভাষণে ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগান নিয়েই নির্বাচনী মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছিলেন ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিজয়ী হওয়ার পর অন্তত দুটি বাণিজ্য চুক্তি আর বৈশ্বিক জলবায়ু সংক্রান্ত চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন, এবার সেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই সুর বদলে ‘উন্মুক্ত আর প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাণিজ্যের’ বার্তা দিলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকেই প্রথমে রাখবেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র একা নয়।
শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে সমাপনী ভাষণে ট্রাম্প আরও বলেছেন, ‘অন্যায্য বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আর চোখ বন্ধ করে থাকবে না।’ একই সঙ্গে ‘লুণ্ঠনমূলক’ বাণিজ্যের বিষয়ে অংশীদারদের সতর্ক করেছেন তিনি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের স্কি রিসোর্ট দাভোসে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবার জন্য উন্মুক্ত।
কর কমানো ও নীতি শিথিল আর বিনিয়োগ পরিবেশের দিকে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প বলেন, আপনার অর্থ, কাজ, ব্যবসা আমেরিকায় নিয়ে আসার এটাই সবচেয়ে ভালো সময়।
এক বছরের অচলাবস্থা কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আবারও মজবুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভিজ্ঞতা লাভ করছে মন্তব্য করে ট্রাম্প বলেন, বিশ্ব দেখছে একটি দৃঢ় ও গর্বিত আমেরিকার পুনরুত্থান।
ট্রাম্প সবসময়ই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রচার চালান। আশা করেন, বিশ্বের সব দেশের নেতারাই নিজেদের দেশ নিয়ে একই প্রচার চালাবেন। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট মানে আমেরিকা একা নয়। আমেরিকার বড় হওয়া মানে বিশ্বেরও বড় হওয়া’।
তবে একই সঙ্গে তিনি বাণিজ্য নীতি কঠোর করার কথাও বলেন। তার মতে, অনেক দেশই অন্যায্য বাণিজ্য কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি আত্মসাৎ ছাড়াও রাষ্ট্রীয় সহায়তা শিল্পে বিনিয়োগ হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, আমরা আমাদের বাণিজ্য আইনপ্রয়োগের পাশাপাশি অখণ্ড বাণিজ্য ব্যবস্থা পুনরায় প্রবর্তন করব। শুধু ন্যায্য আর পারষ্পরিক বাণিজ্যে জোর দিয়ে আমরা এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করতে চাই যার মাধ্যমে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, সব দেশই এর সুবিধা পাবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, অন্যায্য বাণিজ্যের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আর চোখ বন্ধ করে থাকবে না। যদি কয়েকটি দেশ পুরো বাণিজ্য ব্যবস্থাটিকে নষ্ট করতে চায় তাহলে আমরা মুক্ত বাণিজ্য করতে পারব না। আমরা মুক্ত বাণিজ্য সমর্থন করি তবে তা হতে হবে ন্যায্য আর পারষ্পরিক।
বহুপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিতে অনীহার ইতিহাস থাকলেও ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অন্য কোনও রাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করবার ক্ষেত্রে পারষ্পরিক লাভের বিষয়টি বিবেচনা করবে। ট্রান্স প্যাসিফিক বাণিজ্য চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়া প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, তাদের সঙ্গে সমন্বিত আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ থাকলে তা বিবেচনা করা হবে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আমেরিকা ফার্স্টনীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ১১ দেশের মধ্যে থাকা বাণিজ্য চুক্তি (ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ) থেকে সরে দাঁড়িয়েছে৷ এছাড়া কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে সই হওয়া ‘নর্থ অ্যামেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ নিয়ে পুনরায় আলোচনা করতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈশ্বিক চুক্তি থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।
এবারের অর্থনৈতিক সম্মেলনেও ট্রাম্পের এই নীতির সমালোচনা করেছেন অনেক রাষ্ট্রনেতা। সবচেয়ে বড় সমালোচনা এসেছে ইউরোপ থেকেই। বৃহস্পতিবার ভারত, কানাডা, ফ্রান্স ও জার্মানি বৈশ্বিক বাণিজ্যিক ব্যবস্থা রক্ষায় বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ও আক্রমণাত্মক ভাষণ দেন। এসব ভাষণে কর্মকর্তারা ট্রাম্প ও অন্যান্য জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হওয়ার কথা জানান। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাণিজ্যমন্ত্রী সেসিলিয়া মাল্মস্টর্ম বলেন, ‘বৈশ্বিক বাণিজ্যিক পর্যায়ের যুক্তরাষ্ট্রের নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘটনায় সারা বিশ্ব উদ্বিগ্ন।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকেই প্রথমে রাখবেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র একা নয়।
গতকাল শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের উদ্বোধনী ভাষণে ট্রাম্প এই বার্তা দেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগে ব্যবাসায়ীদের মধ্যে ভীতি ছিল যে, তাঁর সরকার হয়তো সংরক্ষণ করতে গিয়ে মুক্ত বাণিজ্যের পথে বাধা তৈরি করবে। কিন্তু এখন নতুন ইশতেহার শোনা যাচ্ছে ট্রাম্পের গলায় যে, তিনি বাণিজ্যযুদ্ধ নয়, ন্যায্যবাণিজ্য চান।