মিশরের বইমেলায় বাংলাদেশি আলেমের ২৩ খণ্ডের গ্রন্থ
বাংলাদেশে আলেম বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও মুহাদ্দিস মুফতি হিফজুর রহমান রচিত ‘আল বুদুরুল মুজিয়্যাহ ফি তারাজিমিল হানাফিয়্যাহ’ নামের তেইশ খণ্ডের কিতাব মিশরের রাজধানী কায়রোর ‘দারুস সালিহ’ প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হতে যাচ্ছে। যা মিশর আন্তর্জাতিক বইমেলায় স্থান পাবে।
তেইশ খণ্ডের এই কিতাবটি ইমাম আবু হানীফা (রহ:) (৬৯৯ সাল) থেকে চলমান শতাব্দি পর্যন্ত মোট ১৪ শ’ বছরের হানাফি ফকিহদের জীবন নির্ভর প্রামাণ্য গ্রন্থ। লেখকের দীর্ঘ জীবনের সাধনা এই কিতাব। ইতোমধ্যেই কিতাবটি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন মাকতাবায় সমাদৃত হয়েছে। উচ্ছসিত হয়েছেন দেওবন্দ, করাচিসহ বিখ্যাতসব ইলমি প্রাণকেন্দ্রের আলেম, মুহাদ্দিস ও ফকিহগণ।
এ প্রসঙ্গে কিতাবটির রচয়িতা মুফতি হিফজুর রহমান জানান, ‘এটা আমার জন্য খুবই আনন্দের বিষয়, আমার মতো একজন অযোগ্য দূর বাঙালির একটি কিতাব আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমি খুবই খুশি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শুকরিয়া ছাড়া আমার আর কিছুই নেই।
মুফতি হিফজুর রহমান বলেন, মিশর আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক’জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা আমার পরিচয় জেনেছে। তারপর আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। দুই বছরের জন্য তারা আমার সাথে চুক্তি করেছে। আমিও তাদের সাদরে অনুমতি দিয়েছি। মিশরে অনুষ্ঠিত বইমেলায় আজ কিতাবটি উঠবে বলে তারা আমাকে জানিয়েছে।
আরবের প্রখ্যাত আলেম শায়েখ আওয়ামা কিতাবটি দেখে যারপরনাই খুশি হয়েছেন। তিনি ফোন করে মারকাজুদ দাওয়া ইসলামিয়া’র আমিনুত তালিম মাওলানা আবদুল মালেককে বলেছেন, তিনি যেন হজে যাওয়ার সময় দুই সেট কিতাব শায়েখের জন্য নিয়ে আসেন।
শায়েখ আওয়ামা মুফতি হিফজুর রহমানের সাথে এক ফোনালাপে তিনি বলেন, ‘আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছে ছিল এমন একটি কিতাব লিখব, আল্লাহ আপনার মাধ্যমে এই খেদমতটি কবুল করেছেন।’
মুফতি হিফজুর রহমান বলেন, কিতাবটি লিখতে আমার দশ বছর সময় ব্যয় হয়েছে।
এ কাজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি যখন পাকিস্তানে ইফতা পড়ছিলাম। হজরত মাওলানা আবদুর রশিদ নোমানি (রহ:) এর অধীনে একটি গবেষণাপত্র তৈরি করি। আমার শিক্ষক তখন আমাকে বলেন, ‘যদি তোমার সুযোগ হয় তুমি হানাফি মাজহাবের ‘রিজাল’ (স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব) উপর একটি বড় গ্রন্থ রচনা করবে।’ তার এ উপদেশকে আমি ওসিয়ত হিসেবে গ্রহণ করি। বিষয়টি আমার মনের ভেতর লালন করছিলাম। শিক্ষকের ওসিয়ত রক্ষার জন্য এ গ্রন্থ রচনা করি।
বাংলায় না লিখে আরবিতে লেখার কারণ সম্পর্কে মুফতি হিফজুর রহমান বলেন, আরবি ভাষাভাষী মানুষ মনে করে এদেশের মানুষ মিসকিন। এখানে জ্ঞানের কোনো চর্চা হয় না। অথচ ভারতীয় উপমহাদেশে বিশ্ববরেণ্য অনেক আলেমের জন্মেছেন। শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা থেকে শুরু করে শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভি, কারী মুহাম্মদ তৈয়্যব, মুফতি মুহাম্মদ শফী, আনওয়ার শাহ কাশ্মীরি রহ. এর মতো মনীষীদের জন্ম এ ভারতের মাটিতে। আরবরা তাদের সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখে না। আরব ভাষাভাষী মানুষ যেনো উপমহাদেশের আলেমদের সম্পর্কে জানতে পারে সেজন্যই বাংলা ভাষায় না লিখে আরবি ভাষায় লিখেছি। তবে বাংলা ভাষায় লিখার ইচ্ছে তো আছেই কিন্তু আমার জীবনের দীর্ঘ সময় কেটে গেছে আরবি রচনাটা প্রস্তুত করতেই। এখন সম্ভব হয়ে উঠবে কিনা জানি না। হয়তো পরবর্তীতে কোনো অনুজ এ বিশাল বইয়ের বাংলা করার সাহস করবেন।
এ ক্ষেত্রে শায়খ আবুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ. ও তার শিষ্য শায়খ আওয়ামার কথা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তারা বার বার দুঃখ করে বলেছেন, যদি আরবি ভাষায় ভারতীয় আলেমদের জীবনী লেখা থাকতো তবে আরবদের ধারণা পাল্টে যেতো। তারা বলেছিলেন, কারণ ভারতে তাদের যাতায়াত ছিলো।
বিখ্যাত একটি প্রবাদ হলো, ‘কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে আরবে, পঠিত হয়েছে মিসরে আর বুঝেছে ভারতীয়রা।’ যারা বুঝলো কুরআন তাদের জীবনী ইসলামি বিশ্বের লোকেরা জানে না।
আলেকজান্দ্রিয়ার মসজিদুল ওসিয়্যার খতিব, দারুল আজহারি লি তাহফিজিল কুরআনের পরিচালক খতিব মুস্তফা আলী আল-আজহারী তার এই কিতাবটি সম্পর্কে লিখেছন, ‘হানাফিদের জন্য সুসংবাদ! আল্লামা হিফজুর রহমান কুমিল্লায়ী, বাংলাদেশির কলমে প্রকাশিত হলো ‘আল বুদূ..’ মোট তেইশ খণ্ডে।’
কিতাবটি হানাফি ফকিহদের জীবনীর ওপর সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষগুলোর একটি। যাতে ইমাম আবু হানিফা থেকে বর্তমান পর্যন্ত ফকিহদের জীবনী সন্নীবেশিত হয়েছে।
কায়রোর দারুস সালেহ প্রকাশনী খুব চমৎকার মোড়কে এটিকে বাজারে এনেছে। জানা গেছে, ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই গ্রন্থমেলায় এটি পাওয়া যাবে। যার মূল্য ১৫০ ডলার।
প্রথমে লেখক নিজ প্রকাশনী মাকতাবায়ে শায়খুল ইসলাম থেকে কিতাবটি প্রকাশ করেন। কিতাবটি সৌন্দর্য, চাহিদা ও গ্রহণযোগ্যতায় উত্তীর্ণ হওয়ায় এর প্রকাশনার দায়িত্ব নিয়েছেন আন্তর্জাতিক প্রকাশনী মিশরের ‘দারুস সালিহ’।