শরণার্থীদের দুর্ভোগ বেদনাদায়ক: অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
আট বছর ধরে চলা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে শরণার্থী জীবন বেছে নিতে বাধ্য হওয়া ৮০ হাজার মানুষের একটি ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন হলিউড অভিনেত্রী ও জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। পঞ্চমবারের মতো জর্ডানের জাত্তারি শরণার্থী শিবিরের কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি বলেছেন, বারবার এসব মানুষের দুর্ভোগ আর মানসিক আঘাত প্রত্যক্ষ করা তার জন্য বেদনাদায়ক। চলমান সিরিয়া সংকট সমাধানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে পথ খোঁজার আহ্বান জানান তিনি।
সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ২০১১ সালের মার্চে বিদ্রোহ ঘোষণা করে কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। তা নিয়ে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ এখনও চলছে। কয়েক লাখ মানুষ নিহত হওয়ার ছাড়াও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনের (ইউএনএইচসিআর) মতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৫৫ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রতিবেশী জর্ডান, লেবানন, তুরস্ক ও ইরাকে মানবেতর শরণার্থী জীবন কাটাচ্ছে তারা।
রবিবার জর্ডানে সিরীয় শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে জোলি বলেন, ‘এক সঙ্গে এতো মানুষের শরণার্থী হয়ে পড়াটা বিশ্বের জন্য উদাহরণ।’
জাত্তারি শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এই হলিউড অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘জর্ডানে ফিরে এসে সিরীয় শরণার্থীদের দুর্ভোগ আর মানসিক আঘাতের তীব্রতা প্রত্যক্ষ করা আমার জন্য বেদনাদায়ক।’
৮০ হাজার শরণার্থীর এই ক্যাম্পের কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন জোলি। পরে তিনি জানান, শরণার্থীরা এখন ত্রাণ স্বল্পতায় ভুগছে। যদিও মানবিক সহায়তা দীর্ঘমেয়াদি কোনও সমাধান হতে পারে না বলেও মত দেন তিনি। হলিউড অভিনেত্রী জোলি বলেন, কয়েক বছর ধরেই এই সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে ইউএনএইচসিআর এই সব শরণার্থীদের মৌলিক প্রয়োজনটুকুও মেটাতে পারছে না। তিনি জানান, সিরিয়া যুদ্ধের শিকার এসব মানুষদের প্রয়োজনের তুলনায় গত বছর ইউএনএইচসিআর মাত্র ৫০ শতাংশ অর্থের যোগান দিতে পেরেছে। আর এই বছরের শুরুতে এর পরিমাণ মাত্র সাত শতাংশ।
জোলি বলেন, সিরীয় শরণার্থীদের এভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়তে দেখে আমার মন ভেঙে পড়ে।
এ কারণে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোকে এই অঞ্চলে এসে শরণার্থী ক্যাম্প ও ক্যাম্পের বাইরে থাকা শরণার্থী জীবন দেখার পর সমাধানের উপায় খোঁজার আহ্বান এই হলিউড অভিনেত্রী। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই যুদ্ধ সমাধানের রাস্তা খোঁজারও আহ্বান জানান তিনি।
জোলি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আজ আমার বার্তা হলো বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া সিরীয় পরিবারগুলো ও তাদের আশ্রয় দেওয়া দেশগুলোর জন্য আর একটু বেশি করে চেষ্টা করুন।
ইউএনএইচসিআর বলছে, জর্ডানে নিবন্ধিত সিরীয় শরণার্থীর সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখ। তবে আম্মানের দাবি, তারা ১৩ লাখ সিরীয় নাগরিককে আশ্রয় দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, সিরিয়ায় ২০১১ সালের ১৮ মার্চ গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রায় তিন লাখ ১ হাজার ৭৮১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তবে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি হবে বলে দাবি মানবাধিকার সংগঠনের। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলছে, ওই যুদ্ধে প্রাণহানির সংখ্যা চার লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ সময়ের মধ্যে ঘরহারা হয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ।