নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতির মর্যাদা দিন: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশের মাসব্যাপী বইমেলার উদ্বোধন করে নিজ দেশের ভাষা ও কৃষ্টি, শিল্প-সাহিত্য এবং সংস্কৃতিকে মর্যাদা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজেদের সংস্কৃতি, নিজেদের ভাষা, নিজেদের শিল্প-সাহিত্যকে যদি আমরা মর্যাদা দিতে না পারি, তার উৎকর্ষ সাধন করতে না পারি, তাহলে জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বের দরবারে আরো উন্নত হতে পারবো না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী এই গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে- অশুভ পথে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা কখনও ভাষা বা সংস্কৃতির চর্চা করতে জানে না। কারণ, এদের মানসিকতা একটু ভিন্ন।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের যে চেতনা সেই চেতনা নিয়েই বাংলাদেশকে গড়তে চান উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ হবে অসাম্প্রদায়িক, যে বাংলাদেশ হবে শান্তিপূর্ণ, যে বাংলাদেশে প্রত্যেক ধর্মের মানুষ তাঁদের ধর্ম-কর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে, এমনকি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরাও তাদের ভাষার চর্চা করতে পারবে। তাছাড়া আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছি। যেখানে হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষা নিয়ে গবেষণা হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি এবং এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামন নূর বক্তৃতা করেন।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইব্রাহিম হোসেন খান এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটনও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বিদেশি অতিথিদের মধ্যে-যুক্তরাজ্যের কবি ও লেখক এগনিস মিডোস, ক্যামেরুনের কবি ও সৃষ্টিশীল লেখক অধ্যাপক ড. জয়েস অ্যাসউনটেনটং, মিসরের লেখক ও প্রখ্যাত টেলিভিশন সাংবাদিক ইব্রাহিম এলমাসরি এবং সুইডেনের কবি ও সাহিত্য সমালোচক অরনে জনসন বক্তৃতা করেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী ১২ জন কবি, সাহিত্যিক ও প্রবন্ধকারের হাতে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সম্মাননা স্মারক এবং নগদ অর্থের চেক তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ‘আলোকচিত্রে বাংলা একাডেমির ইতিহাস’ এবং ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক দু’টি বই উপহার দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সদস্যগণ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, জাতীয় সংসদের সদস্যবৃন্দ, সরকারের পদস্থ ও সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অধ্যাপকবৃন্দ, কূটনিতিকবৃন্দ, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, প্রকাশকসহ দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশনায় জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে একুশের গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সূচনা সঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশিত হয় এবং অমর একুশের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ীরা হচ্ছেন- কবিতায়- কবি মো. সাদিক ও কবি মারুফুল ইসলাম, কথা সাহিত্যে- মামুন হোসেন, প্রবন্ধে- অধ্যাপক মাহবুবুল হক, গবেষণায়- অধ্যাপক রফিক উল্লাহ খান, অনুবাদে- লেখক আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সাহিত্যে- মুক্তিযোদ্ধা কামরুল হাসান ভূঁইয়া ও সুরমা জাহিদ, ভ্রমণ কাহিনীতে- শাকুর মজিদ, নাটকে- অধ্যাপক মলয় ভৌমিক, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে- মোশতাক আহমেদ এবং শিশু সাহিত্যে ঝর্ণা দাস পুরকায়স্থ। -বাসস