২২তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন
দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। আজ শুক্রবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান বিচারপতির নিয়োগ আদেশে স্বাক্ষর করেন। পরে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ নিয়োগের মধ্য দিয়ে আবারো জেষ্ঠতা লংঘনের ঘটনা ঘটলো। আগামীকাল শনিবার ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রধান বিচারপতিকে শপথ দেবেন রাষ্ট্রপতি।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক। এতে বলা হয়, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক মাননীয় বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন-কে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করিয়াছেন।’ প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, এই আদেশ শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদিন গণমাধ্যমকে জানান, শুক্রবার দুপুরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান বিচারপতির নিয়োগ আদেশে স্বাক্ষর করেন। আগামীকাল (শনিবার) সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে নতুন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে শপথ পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এরপর বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে। আড়াই মাস আগে বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগের পর আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারক হিসেবে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা।
বিচারক হিসেবে ওয়াহহাব মিঞার চাকরির বয়স আছে আর ১০ মাস। অন্যদিকে সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের চাকরি আছে আরও তিন বছর।
নানা নাটকীয়তার মধ্যে বিচারপতি এস কে সিনহা গত নভেম্বরে পদত্যাগ করার পর থেকে প্রধান বিচারপতির পদটি শূন্য। রাষ্ট্রপতি তখন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে দায়িত্বটি পালন করে যেতে বলেন।
সময় গড়ালেও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না হওয়ায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রতিনিয়ত প্রশ্নের মুখে পড়ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক; এটা ‘রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার’ বলে প্রশ্ন এড়াচ্ছিলেন তিনি।
ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় বলেন, আমার মনে হয় মহামান্য রাষ্ট্রপতি আজকেই কিছুক্ষণের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির নাম ঘোষণা করবেন। এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বঙ্গভবন থেকে তা নিশ্চিত করা হয়।
বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞার দুই বছর পর ২০০১ সালের শুরুতে হাই কোর্ট বিভাগে বিচারকের দায়িত্ব শুরু করেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
জানা গেছে, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের জন্ম ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। বিএসসি ডিগ্রি নেওয়ার পর এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে ১৯৮১ সালে আইন পেশায় যুক্ত হন তিনি। তার দুই বছর পর ওকালতি শুরু করেন হাই কোর্টে। ১৯৮১ সালে জেলা জজ আদালতে ও ১৯৮৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এডভোকেট হিসেবে তিনি অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। পরে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরে ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। সৈয়দ মাহমুদ হোসেন দু’বার নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য গঠিত সার্চ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
আপিল বিভাগে এখন পাঁচজন বিচারপতি রয়েছেন। জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুযায়ী প্রথমে আছেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। চাকরির বয়স আছে ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। তার পরের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের মেয়াদ আছে ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর পর ক্রম অনুযায়ী রয়েছেন বিচারপতি মো. ইমান আলী, তিনি অবসরে যাবেন ২০২৩ সালে। এর আছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, তিনি অবসরে যাবেন ২০২৩ সারে। আর পঞ্চম স্থানে আছেন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার, তিনি অবসরে যাবেন ২০২১ সালে।
অবশ্য এদের মধ্য থেকে যে কাউকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার আইনগত কোনো বাধা নেই। সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন।’
২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এরপর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনায় বেশকিছু উদ্যোগ নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। সম্প্রতি বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে তার নাম। এ কারণে পদত্যাগ করেন তিনি।
গত বছরের ১১ নভেম্বর এসকে সিনহার পদত্যাগপত্র পৌঁছায় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের ঘটনা এটাই প্রথম। ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি।
এর আগে, একমাসের ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ায় যান এসকে সিনহা। এই ছুটি শেষ হয় গত ১০ নভেম্বর। তার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। তিনি ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত চাকরিতে বহাল আছেন।
জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না : আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা মানা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতার লঙ্ঘন হলেও কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না। গতকাল শুক্রবার বিকালে মিন্টু রোডে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মাহবুবে আলম বলেন, সংবিধানের বিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। সুতরাং এটি রাষ্ট্রপতির বিচার বিবেচনার বিষয়। তবে আমাদের দেশে এর আগেও এরকম হয়েছে। জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, এটি শুধু আমাদের দেশে নয় আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এবং রোববার থেকে আদালতে বসবেন।