‘হিন্দি সিরিয়াল বন্ধ করলে ঐশীদের সংখ্যা কমে যাবে’
শর্মী চক্রবর্তী: ‘আমরা ঐশীর ঘটনার পর তাকেই দোষ দিচ্ছি। কিন্তু ভেবে কি দেখেছি কখনও; কিভাবে এই ‘মাদকাসক্ত ঐশী’র জন্ম? নিশ্চয় সে জন্ম নেয়নি মাদকাসক্ত হয়ে। পরিবেশ প্রতিবেশ আর পরিবারই তাকে উৎসাহিত করেছে ওই পথে অগ্রসর হওয়ার। সুতরাং দোষ অন্য জায়গায়।’ মনবজমিনের সঙ্গে একান্তে আলাপকালে কথাগুলো বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. নাসরিন ওয়াদুদ। তিনি মানবজমিনকে স্পষ্ট বলেছেন, সমাজে যে সব মাদকাসক্ত ঐশী আছে, তা হয়ে ওঠায় তাদের কোন দোষ নেই। দোষ তাদের মা-বাবারই। তাদের ব্যর্থতার কারণে তৈরি হচ্ছে ঐশীরা। একই ভাবে কিন্তু এ থেকে আমাদের সমাজ, স্কুল, সরকার কেউই নিজের দোষ এড়াতে পারে না। তাদের কারণেই এই ঐশী সৃষ্টি হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতকারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঐশীর ভেতরে বাবা-মায়ের এ ধরনের শাসন, নিরাপত্তাহীনতা, মাদক থেকে দূরে সরানো, খারাপ বন্ধুদের কাজ থেকে দূরে সরানো- এসব কিছু বাসা বাঁধতে বাঁধতে সে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে এই কাজটি করেছে। আমি মনে করি, যখন মা-বাবাকে হত্যা করে তখন সে অবশ্যই মাদকাসক্ত ছিলো। তা না হলে সে এমন কাজ করতে পারতো না। কারণ, বাবা-মা সবার কাছেই খুব প্রিয়। তাদের যদি ঐশীকে এসব পথ থেকে সরানোর ইচ্ছে থাকতো তাহলে সে ভাবে ব্যবস্থা নিতে পারতেন, যাতে করে কোন ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে। কিন্ত তারা সেটা না করে বন্দি রেখেছেন। তারা তো জানতেন যে, তাদের মেয়ে মাদক সেবন করে। তখন তারা কেন কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নিলেন না? যদি তারা এটা করতেন, আজ এই ঐশী আমাদের সমাজে সৃষ্টি হতো না।
‘তাহলে কি শুধু পরিবার, সমাজকেই দায়ি মনে করেন আপনি? নৈতিকতার বাইরে যেতে ভিন্ন মনস্তাত্বিক সত্ত্বা তৈরিতে প্রযুক্তির কোন দায় নেই?’- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ আমি মনে করি, এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিও অনেকটা দায়ি। কেননা অবাধে তথ্য পাওয়ার ফলে এখনকার ছেলে-মেয়েরা অনেক কিছুই হাতের কাছে পেয়ে যাচ্ছে। আর ভালো দিকটা রেখে খারাপটা গ্রহণ করছে। এজন্য আমাদের সরকারের উচিৎ এই দিকটাতে নজর রাখা। বিশেষ করে পশ্চাত্য সব সংস্কৃতি বন্ধ করা। এর মধ্যে হিন্দি সিরিয়াল, ইংলিশ সিনেমা এসব কিছু আমাদের দেশে বন্ধ করে দেয়া উচিত। তাহলে আমরা পুরোপুরি না হলেও কিছুটা ভালোর দিকে যেতে পারবো। তা না হলে আমাদের দেশ ধ্বংসের দিকেই শুধু এগিয়ে যাবে। আর নতুন নতুন ঐশীর জন্ম হবে। -মানবজমিন