যেভাবে ভোটের অধিকার পেয়েছেন ব্রিটেনের মেয়েরা
‘তুমি যে হাসপাতালে সেটা শুনে খুব প্রীত হলাম। আমৃত্যু যেন তুমি যন্ত্রণা ভোগ কর সেটাই কামনা করি, নির্বোধ কোথাকার! ’ চিঠিটার নীচে স্বাক্ষর করা হয়েছিল ‘একজন ইংলিশম্যান’ নামে।
১৯১৩ সালের জুনে এমিলি উইল্ডিং ডেভিডসন যখন হাসপাতালের মৃত্যু শয্যায়, তখন তার কাছে এই চিঠি আসে। এমিলি ডেভিডসন ছিলেন মেয়েদের ভোটাধিকারের আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী।
এর কয়েকদিন আগে ইংল্যান্ডের এপসমে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যরা থেকে শুরু করে অভিজাত সমাজের মানুষের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে ভোটাধিকার চেয়ে বিক্ষোভ করতে গিয়েছিলেন এমিলি ডেভিডসন। সেখানে তার ওপর রাজার ঘোড়া চালিয়ে দেয়া হয়েছিল।
গুরুতর আহত এমিলি ডেভিডসনকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়। তার জ্ঞান আর ফেরেনি। সেখানেই ৮ই জুন মারা যান তিনি। মেয়েদের ভোটাধিকারের আন্দোলন এক নতুন বাঁক নিয়েছিল তার মৃত্যুর ঘটনায়।
এমিলি ডেভিডসন হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় শুয়েও তাকে গালাগালি দেয়া যে ধরনের চিঠি পেয়েছিলেন, তা থেকে বোঝা যায় কিরকম ঘৃণা, বিদ্বেষ এবং হুমকির মোকাবেলা করতে হচ্ছিল ভোটাধিকারের আন্দোলনে সামিল হওয়া নারীদের। এসব চিঠি সম্প্রতি উন্মুক্ত করা হয়েছে আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য।
বিশ শতকের শুরুতেও ব্রিটেনে মেয়েদের অবস্থা ছিল দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো। পুরুষদের তুলনায় তাদের স্বাধীনতা এবং অধিকার ছিল সীমিত। ভোটের অধিকারের জন্য মেয়েদের তখন লড়াই করতে হচ্ছিল। তারা ধরণা দিচ্ছিলেন, দরখাস্ত লিখছিলেন। সভা করছিলেন।
কিন্তু এভাবে যে কিছুই হবে না, সেই উপলব্ধি প্রবল হতে শুরু করলো অনেকের মধ্যে। তারা ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশনের’ মাধ্যমে সরাসরি রাস্তায় নেমে অধিকার আদায়ের পক্ষে। তাদের নেত্রী ছিলেন এমিলি প্যাংকহার্স্ট।
ব্রিটেনের ডেইলি মেইল পত্রিকা মেয়েদের ভোটাধিকার আদায়ের এই জঙ্গি গোষ্ঠীটির নাম দিয়েছিল ‘স্যাফ্রাজেটস’। সেই নামেই তারা পরিচিত হয়ে উঠলেন, কিন্তু বদলে দিলেন ইতিহাস।
ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলনে তারা দু:সাহসিক সব কাজ করতেন। বাড়িঘরের ওপর হামলা চালাতেন। নিজেদের শেকল দিয়ে বাড়ির রেলিং এর সঙ্গে আটকে রাখতেন। ব্রিটেনের পত্রিকাগুলো এবং জনমত তাদের বিপক্ষে চলে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল।
স্যাফ্রাজেটরা বাড়ির জানালার কাঁচ ভাঙ্গতো, টেলিগ্রাফের তার কেটে দিত, লেটার বক্সের ভেতর দিয়ে রাসায়নিক বোমা ফেলে দিয়ে আসতো। পুলিশ ব্যাপক হারে তাদের ধরপাকড় করে জেলে ভরতো। জেলে বন্দী নারীরা যখন অনশন ধর্মঘটে যেতেন, তখন তাদের জোর করে খাওয়ানো হতো।
শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলনের জয় হলো। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আইন করে ১৯১৮ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি নারীদের ভোটাধিকার দিল। তবে তাদের বয়স হতে হবে ৩০ এর বেশি এবং বাড়ির মালিক হতে হবে।
এর আগে ১৮৬৬ সালে ব্রিটেনের পার্লামেন্টে প্রথম মেয়েদের ভোটাধিকার চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কিছু নারী ভোটাধিকার পেলেও সার্বজনীন ভোটাধিকারের জন্য মেয়েদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১৯২৮ সাল পর্যন্ত। অবশ্য ১৯১৯ সালে হাউস অব পার্লামেন্টে প্রথম মহিলা এমপি হিসেবে আসন নিয়েছিলেন ন্যান্সি অ্যাস্টর। -বিবিসি