‘আপনাদের খালেদা জিয়া কোনো অন্যায় করেনি’
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশবাসীর উদ্দেশে সগৌরবে জানাতে চাই, আপনাদের খালেদা জিয়া কোনো অন্যায় করেনি। কোনো দুর্নীতি আমি করিনি। ন্যায়বিচার হলে বেকসুর খালাস পাব।
আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বেগম খালেদা জিয়া। বিকাল ৫টার দিকে ওই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য আছে। এর আগের দিন আজ সংবাদ সম্মেলন করলেন বেগম খালেদা জিয়া।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা জানেন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় রায় হবে। এ রায়কে কেন্দ্র করে শাসক মহল আমাদের চেয়ে বেশি অস্থির।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভিত্তিহীন ও মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদে ভীত হয়ে এ হীন পথ বেছে নিয়েছে এ অবৈধ সরকার। সারা দেশে তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, আদালত রায় দেওয়ার বহু আগে থেকেই শাসক মহল চিৎকার করে বেড়াচ্ছে আমার জেল হবে। যেন বিচারক নয়, ক্ষমতাসীনরাই রায় ঠিক করে দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, কথিত সংসদে নেই প্রকৃত বিরোধী দল।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মাদকের বিষাক্ত ছোবলে তরুণ সমাজ ধ্বংস হচ্ছে। সমাজে দেখা যাচ্ছে অবক্ষয়। এই অবক্ষয় থেকে মানুষ মুক্তি পেতে চায়। তারা অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপির অগণিত নেতাকর্মী, অসংখ্য মানুষ হামলা ও মামলার শিকার হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষ তাদের নির্বাচন করেনি। তাদের দেশ পরিচালনায় জনগণের সম্মতি নেই। নৈতিক দিক দিয়ে তারা অবৈধ। তিনি বলেন, জনগণের সমর্থন নেই বলেই তারা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে ভয় পায়।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকারি খরচে এক বছর আগে থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। মানুষ প্রহসনের নয় সত্যিকারের নির্বাচন চায়।
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, বারবার গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। তথাকথিত উন্নয়নের নামে দেশে দুঃশাসন চলছে। এই স্বৈরশাসন জণগনকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। মানুষকে ভাতে মারছে। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করছে। দেশে লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে। শেয়ার বাজার এরা লুটে খেয়েছে। অর্থ লোপাট করে ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করেছে। সুইস ব্যাংকে অর্থ পাচার করে পাহাড় গড়েছে। তদন্ত করা হয় না। তদন্ত হলেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দোষীদের বিচার হয় না। লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে সকল প্রতিবাদের পথ এরা বন্ধ করে দিয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, গণতন্ত্রের আজ লক্ষ কর্মী মানবেতর জীবনযাপন করছে। অপহরণ, খুনে ঘরে ঘরে আজ হাহাকার। মানুষ স্বাধীন মত প্রকাশ করতে পারছে না। ভয় ভীতির মাধ্যমে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে প্রহসনের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। যারা লগিবৈঠা দিয়ে মানুষ খুনের নির্দেশ দেয়। যারা গান পাউডার দিয়ে মানুষ মারে। আন্দোলনের নামে ব্যাংকে আগুন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আগুন, চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে আগুন, বন্দরে আগুন দিয়েছে তারাই আজ আমাদের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে। দেশের সব কয়টি প্রতিষ্ঠানেকে ধ্বংস করা হয়েছে। ১০ টাকা ধরে চাল খাওয়ানোর ওয়াদাকে ভয়াবহভাবে ভঙ্গ করা হয়েছে। চালের দাম এখন কেজি ধরে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, শাসকদের কোথাও কোনো জবাবাদিহিতা নেই। সশস্ত্র বাহিনীর সম্পর্ক বৈরী প্রচারণা ও ঘুণা ছড়ানো হচ্ছে। আইনশৃ ঙ্খলা বাহিনীকে জণগনের বিরুদ্ধে দাড় করানো হয়েছে। মানুষের কাজ নেই। ব্যবসা নেই। মাদকের বিষাক্ত চোবলে তরুণ সমাজ ধ্বয়ংস হয়ে যাচ্ছে। এই দুঃসহ অবস্থা থেকে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তি চায়। তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের আশার প্রতিফলন ঘটনাতে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম শুরু করেছি। সেই সংগ্রামে অনেক প্রাণ ঝরে গেছে। অগণিত নেতাকর্মী ও মানুষ হামলা মামলার শিকার হয়েছে। রক্তপিপাসু শাসকদের কবল থেকে দেশবাসীকে রক্ষার সংগ্রামে নেমেছি। জণগণ পরাজিত হবে না। দুঃশাসন একদিন থাকবে না। কিন্তু তারা যে কলংকের ইতিহাস রচনা করেছে তা চিহ্নিত থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া আরো আছেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিএনপি কার্যালয়ের চারপাশের রাস্তার প্রবেশমুখ ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে।