ইডিএল-এর ঘেরাও কর্মসূচি ঠেকাতে আলতাব আলী পার্কে ১০ সহস্রাধিক লোকের সমাবেশ
মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম: ইংলিশ ডিফেন্স লীগের (ইডিএল)-এর ঘেরাও কর্মসূচি নিয়ে শনিবার পূর্ব লন্ডনে দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করে। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী হোয়াইট চ্যাপেলের পূর্ব লন্ডন মসজিদ এলাকায় না এলেও তারা কয়েক মাইল দূরে অলগেইট এলাকায় অবস্থান নেয়। পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদেরকে সেখানে থামিয়ে দেয়। এ সময় ইডিএল বিরোধীরা তাদেরকে প্রতিহত করার চেষ্টা চালালে কমপক্ষে ৪০ জন বাঙালি তরুণকে আটক করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, ইডিএলের ঘেরাও কর্মসূচি ঠেকাতে সকাল থেকে সর্বস্তরের মানুষ ইস্ট লন্ডনের রাস্তায় নেমে আসেন। এ কারণে পূর্ব লন্ডনের জীবনযাত্রা অনেকটা ব্যাহত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজপথে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে ইস্ট লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ জমায়েত হতে থাকেন। এ কারণে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। সেখানে ছুটে আসেন ব্যারোনেস পলা মঞ্জিলা উদ্দিন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান, ডেপুটি মেয়র ওহিদ আহমদ, ভারপ্রাপ্ত স্পীকার আব্দুল মুকিত চুন্নু এমবিই, কাউন্সিলর খালিস উদ্দিন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের লেবার গ্রুপের মেয়র পদপ্রার্থী জন বিগস এএম, টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক স্পীকার রাজিব আহমদ, গ্রেটার সিলেট ডেভলাপম্যান্ট কাউন্সিল ইন ইউকে’র সভাপতি ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, সাবেক সভাপতি এ কে এম আবু তাহের চৌধুরী,চেয়ার অব কালেকটিভ বাংলাদেশী স্কুল গভর্নরস শাহানুর আহমদ খান, গ্রেটার সিলেট ইস্ট লন্ডন ব্রাঞ্চের সাবেক সেক্রেটারী সুফি সুহেল আহমদসহ হাজার হাজার লোক। এক পর্যায়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে পুরো আলতাব আলী পার্ক। পার্ক গড়িয়ে জনস্রোত রাস্তা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। পরে পার্কের সম্মুখে উন্মুক্ত মঞ্চে সর্বস্তরের লোকজন বক্তৃতা করেন। এ সময় সমবেত লোকজন ইডিএল-এর বিরুদ্ধে নানামুখী শ্লোগান দেন।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, ইডিএল ব্যর্থ হয়েছে। বর্ণবাদী এই সংগঠনের বিরুদ্ধে তিনি সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় তাদেরকে কোন ভাবেই বরদাশত করা হবে না।
আলাপকালে গ্রেটার সিলেট ডেভলাপম্যান্ট ইন ইউকে’র প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার আতাউর রহমান বলেন, মুসলমানদের চরমপন্থী হিসাবে আখ্যায়িত করতেই ইডিএলের এ কর্মসূচি।
তিনি বলেন, সত্তরের দশকে স্কিন হ্যাড নামে সংগঠনটির আত্ম প্রকাশ হয়। আশির দশকে ন্যাশনাল ফ্রন্ট, নব্বইয়ের দশকে বৃটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি এবং ২০০০ সাল থেকে এটি ইডিএল হিসাবে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থেই তাদেরকে জিইয়ে রেখেছে। এ কারণে তারা একেক সময় একেক পার্টি নিয়ে আবির্ভূত হয়। তিনি বলেন, ইডিএল প্রথমে ইহুদীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। আর তারা এখন অবস্থান নিয়েছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে। এদের বিরুদ্ধে তিনি সকলকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের লেবার পার্টির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী জন বিগস এএম ইডিএলকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি তুলেন। তিনি বলেন, তাদেরকে প্রতিরোধ করা সকলের দায়িত্ব। ইডিএলকে প্রতিহত করার কমিউনিটির এ উদ্যোগের প্রতি তাদের সর্বাতœক সমর্থন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
চেয়ার অব কালেকটিভ বাংলাদেশী স্কুল গভর্নরস শাহানুর আহমদ খান বলেন, আমরা এক হিউম্যানিটিতে বিশ্বাস করি। আমরা কোন বর্ণবাদে বিশ্বাস করি না। আমরা এক ভূমি, এক দেশ, এক শিশু এবং এক কান্ট্রিতে বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই। ইডিএলের বিরুদ্ধে পূর্ব লন্ডনের সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ বলে তিনি মন্তব্য করেন।