প্রকৃতিকে নতুন রূপে সাজাতে এলোরে ফাল্গুন…

fagunইবরাহীম খলিল: আজ পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তেরও প্রথম দিন। দিনটিকে কবি সাহিত্যিকরা নানাভাবে চিত্রায়িত করেছেন। এই সময়ে প্রকৃতি নতুন সাজে সজ্জিত  বলেই মানুষের মনে আসে এক ধরনের পরিবর্তন।
‘… তুমি ভালো থাকো আর না-থাকো / ফাল্গুন আসবেই এ দেশে। ফুল যদি ঝরে যায়, নদী যদি মরে যায়/ ফাল্গুন আসবেই এ দেশে’। বর্তমান কালের অন্যতম কবি খালেদ হোসাইন ফাল্গুনকে নিয়ে লিখেছেন এভাবে। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন- ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত।
ঋতুরাজ বসন্ত এলে প্রকৃতিতে যে পরিবর্তন আসে তা হলো – গাছে গাছে সবুজ পাতা আর নানা রঙ্গের ফুল। শিমুল বন আর কৃষ্ণচূড়ারা সাজে সূর্যের সাথে তাল মিলিয়ে রক্তিম রঙে। কোকিলরা গান ধরে ভ্রমরের গুনগুনানির তালে তালে। চারদিকে শোনা যায় ঝড়া পাতার নিক্কন ধ্বনি। বসন্ত বারৈ খুঁজে পায় নিজের নামের স্বার্থকতা।
এ দিন একশ্রেণির তরুণী বাসন্তি রঙের শাড়ি আর মাথায় হলুদ গাঁদা ফুল দিয়ে নিজেদের নুতন করে সাজিয়ে তোলে। অন্যদিকে ছেলেরা সাজে হলুদ রঙের পাঞ্জাবিতে। গ্রাম-বাংলায় বিশেষ আয়োজনে চলে পিঠা উৎসব। আর শহরে এটি পায় বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা।
বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বরণ করা হয় বসন্তকে। এরমধ্যে চীনেও বসন্ত বরণ হয়ে থাকে। এই বসন্ত বরণ উৎসব হলো তাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। তারা চন্দ্রপুঞ্জিকা অনুযায়ী এ উৎসব করে থাকে। তারা সিন চুন খোয়াইলা বলে পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকে। যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় আপনাকে বসন্তের শুভেচ্ছা।
সারা পৃথিবীর ঋতু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এই বসন্ত ঋতু তথা ফাল্গুন মাসে দক্ষিণ এশীয় নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানেই এ সময়টি আশীর্বাদ রূপে আসে। এ সময়টা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মৃদু মানের বর্ষা হয় যার ফলে সেসব স্থানে বৃক্ষরা পত্রপল্লবে নিজেদের জানান দেয়। অন্যদিকে হীমাচল প্রদেশসহ কাশ্মীর অঞ্চলের তুষারপাত ক্রমে কমে আসে এবং মানুষ তাদের স্বাভাবিক কাজকর্মের ভরসা পেতে থাকে।
পৃথিবী সূর্যের দিকে ঢলে পড়ে বলেই শীত তার ইতি টানতে বাধ্য হয়। এই সময়টাতে প্রাণিকূলের প্রজননের মোক্ষম সময়। পৃথিবী জুড়ে নুতন নুতন প্রাণের সঞ্চার হতে থাকে। তারা প্রকৃতির শ্রী বৃদ্ধির পাশাপাশি টিকিয়ে রাখে পরিবেশ ও প্রতিবেশ।
আমাদের দেশে ফাল্গুন শব্দের পাশাপাশি বসন্ত শব্দের নানাবিধ ব্যবহার হচ্ছে। যেমন : যৌবনের তেজ বুঝাতে বলে থাকি ফাগুনের আগুন। আবার মজা করে টিপ্পুনি কেটে বলে থাকি আরে হ্যাঁ বুঝি বুঝি আর বলতে হবে না, তোর মনে যে ফাগুনের হাওয়া বইছে তা আর বলতে হবে না। অন্যদিকে কারো প্রেমিক ভাবকে ইঙ্গিত করতে বলা হয়ে থাকে বসন্তের বাতাস লেগেছে। আমরা ফাল্গুন মাসকে আদর করে ফাগুনও ডেকে থাকি। এতে শ্রুতি শ্রী বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি কাব্যিকের ছন্দের দোলনটাও মসৃণ হয়।
এই ফাল্গুন মাসকে নিয়ে আমাদের লোক গানের পাশাপাশি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় রয়েছে নানা রচনা। যেমন বাউল সুরে গাওয়া হয় ‘নারী হয় লজ্জাতে লাল, ফাল্গুনে লাল শিমুল বন, এ কোন রঙে রঙিন হলো বাউল মন..মন রে….এ কোন রঙে রঙিন হলো বাউল মন’। নারী লজ্জাতে লাল হয় না পুরুষ লজ্জাতে লাল হয় তা বিতর্কের বিষয়। তবে ফাগুনে শিমুলের বন যে লাল হয় তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন… ফাল্গুনে বিকশিত/কাঞ্চন ফুল/ ডালে ডালে পুঞ্জিত/ আম্রমুকুল। চঞ্চল মৌমাছি/ গুঞ্জরি গায়/  বেণুবনে মর্মরে দক্ষিণবায়।
বাংলা উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, পয়লা ফাল্গুন বা পহেলা ফাল্গুন বাংলা পঞ্জিকার একাদশতম মাস। ফাল্গুনের প্রথম দিন তাই বসন্তেরও প্রথম দিন। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৩ই ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন পালিত হয়। বসন্তকে বরণ করে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, ঝাড়খ- ও ওড়িষ্যাসহ অন্যান্য রাজ্যে দিনটি বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। বাংলাদেশে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ এই দিনকে বরণ করতে চারুকলার বকুলতলায় এবং ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে প্রতিবছর জাতীয় বসন্ত উৎসব আয়োজন করে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button