দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চান প্রধানমন্ত্রী
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার রায়ের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চান।দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং উন্নয়নের স্বার্থেই এটি করা প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মঙ্গলবার রোমে ইতালি প্রবাসীদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি এটুকু বলতে চাই, দুর্নীতি যারা করবে, সন্ত্রাস যারা করবে, জঙ্গিবাদের সাথে যারা জড়িত, তাদের বিচার হতেই হবে।
“কারণ বাংলাদেশটাকে একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আমরা আনতে চাই। বাংলাদেশের উন্নয়ন আমরা চাই। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নত হোক সেটাই আমরা চাই। সেটা সম্ভব যখন দেশে দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, স্বজনপ্রীতি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।”
ইতালি সফরে ভ্যাটিকানে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে বৈঠক এবং আইএফএডির পরিচালনা পর্ষদের সভায় যোগ দেওয়ার পর পারকো দেই প্রিনচিপি গ্র্যান্ড হোটেলে ইতালি আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসেন শেখ হাসিনা।
বক্তব্যে দুর্নীতির মামলায় দণ্ড পেয়ে কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
তিনি বলেন, “২০১৪ ও ২০১৫ সালে নির্বাচন প্রতিরোধ ও সরকার পতনের নামে এই বিএনপি জ্বালাও পোড়াও ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। ২০১৩ সালে ঠিক একইভাবে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করে দেয়।
“এই সময়ে সমানে তারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে। প্রায় তিন হাজারের উপরে মানুষকে তারা আগুন দিয়ে ঝলসে দিয়েছে। ওই তিন বছরে প্রায় পাঁচশর কাছাকাছি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। পুলিশ, বিজিবি, সেনা সদস্যকে পুড়িয়ে মেরেছে।”
প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কত অন্যায় তারা করেছে চিন্তা করেন। সারা বাংলাদেশে এই ধরনের তাণ্ডব তারা করেছে”।
শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে যে মামলায় খালেদা জিয়ার শাস্তি হয়েছে সে মামলা কে দিয়েছে? খালেদা জিয়ার প্রিয় ব্যক্তিত্ব। সেনাবাহিনীর ৯ জন জেনারেলকে ডিঙিয়ে মইন উদ্দিনকে সে সেনাপ্রধান করেছিলো। আর বিশ্ব ব্যাংকে চাকরি করত ফখরুদ্দীন সাহেব, তাকে নিয়ে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর করেছিল। তাদের দলীয় লোক ইয়াজউদ্দীন সাহেবকে বানালো রাষ্ট্রপতি।
“ফখরুদ্দীন, মইন উদ্দিন, ইয়াজউদ্দীন তারাই তো তার বিরুদ্ধে মামলা দিল। এ মামলা তো আওয়ামী লীগ দেয়নি।”
খালেদা জিয়ার রায়ের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “বিএনপি লোকেরা বলে হ্যাঁ মাত্র এতটুকু টাকার জন্য এই শাস্তি দেওয়ার কি দরকার ছিল? এতটুকু মানে দুই কোটি টাকার জন্য এই শাস্তি কেন দেওয়া হলো?”
‘টাকাটা কোন এতিমের কাছে গেছে’- এ প্রশ্ন করে তিনি বলেন, “যদি খালেদা জিয়া বলতো আমার দুই ছেলে এতিম, তার জন্য রেখেছি। তাও একটা যুক্তি ছিল। সেটাও উনি করেননি।”
তখন দুই কোটি টাকায় ধানমণ্ডিতে চারটি ফ্ল্যাট কেনা যেত মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “টাকার মায়া ছাড়তে পারেনি। নিজের কাছে কুক্ষিগত করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে।
“আমার প্রশ্ন, আজকে যারা বিএনপি দরদি, আঁতেলরাও আছে তারা বলে দুই কোটি টাকার জন্য কেন এত মামলা। তাহলে আমার এখানে একটা প্রশ্ন আছে, দুর্নীতির করার জন্য কি একটা সিলিং থাকবে যে এত কোটি পযন্ত দুর্নীতি করা জায়েজ। তারা কি সেটা বলতে চায়?
“বিএনপি তাহলে একটা দাবি করুক যে এত কোটি পর্যন্ত তারা দুর্নীতি করতে পারবে। সেটা নিয়ে একটা রিট করুক।”
সরকার প্রধান বলেন, “আদালত রায় দিয়েছে। এখানে আমাদের তো করার কিছু নেই। আর আমরা যদি করতামই তাহলে ১০ বছর তো চলতে দিতাম না। ২০০৮ এ যখন ক্ষমতায় আসলাম, তখনই তো করতে পারতাম।
“আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন। এখানে আমাকে গালি দেয়া বা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কী যুক্তি থাকতে পারে আমরাতো সেটা বুঝি না।”