আল আকসা মসজিদে ইসরাইলী পুলিশের হামলা : মুসল্লিদের গ্রেফতার
আরব বিশ্ব যখন মিসর ও সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করে আছে ঠিক সে সময়েই ইসরাইলী পুলিশ অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেমের পবিত্র আল আকসা মসজিদে হামলা চালিয়েছে।
গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর পুলিশ এই হামলা চালায়। এ সময় তারা কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে এবং বহু ফিলিস্তিনী মুসল্লিকে গ্রেফতার করে। মসজিদের প্রধান শায়খ নাজেহ্্ বাকিরাত জেহ্ বুকাইরাত আনাডোলু এজেন্সিকে গত শুক্রবার বলেন, ইসরাইলী বাহিনী আল-আকসা কম্পাউন্ডে কেবলি মসজিদের ভেতরে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়্ ফেলে অনেকেরই দম বন্ধ হওয়ার যোগাড় হয়। শুক্রবারের জুমার নামাজের পর ইসরাইলী পুলিশ আল আকসা মসজিদের পশ্চিম পাশের সিলসিলা ও আল মাগরিবা গেট দিয়ে জোর করে মসজিদ কম্পাউন্ডে প্রবেশ করে। তারা মুসল্লিদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার উদ্দেশ্যে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে মুসল্লিরা মসজিদের ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। প্রতিবাদে তরুণ ফিলিস্তিনী মুসল্লিরা পুলিশের প্রতি পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। তিনি জানান, পরে জেরুসালেম শহরের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, পুলিশ আল আকসা মসজিদ কম্পাউন্ড থেকে মুসল্লিদের বের করে দেয়। এ সময় তারা ১৫ জনকে আটক করে। শত শত ইহুদি বসতি স্থাপনকারী গত বুধবার ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান আল আকসা মসজিদে হামলা চালালে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ইহুদিদের নববর্ষ উপলক্ষে এ হামলা চালানো হয় বলে খবরে উল্লেখ করা হয়।
জবাবে নির্যাতিত ফিলিস্তিনীরা মসজিদ কম্পাউন্ডে গণবিক্ষোভের ডাক দেয়। আল আকসা মসজিদ ছিল মুসলমানদের প্রথম কিবলাহ এবং মক্কার পবিত্র কাবা ও মদিনার মসজিদে নববীর পরই এটা তৃতীয় পবিত্র স্থান। এই স্থানটির আলাদা আরেকটি গুরুত্ব রয়েছে। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) মিরাজের রাতে মক্কার পবিত্র কাবা শরীফ থেকে মিরাজ গমনের পথে আল আকসা মসজিদে যান এবং সেখানে নামাজ আদায় করেন। এরপর তিনি ঊর্ধ্বাকাশে গমন করেন।
ইহুদিদের দাবি, তাদের কথিত সোলায়মান (আ:) এর মসজিদ মুসলমানদের মসজিদের মাটির নিচে অবস্থিত ছিল। এজন্য তারা এই মসজিদটি ধ্বংস করে সেখানে নিজেদের উপাসনালয় স্থাপন করতে চায়।
ওয়াকফ নামের ইসলামী কর্তৃপক্ষ আল আকসা কমপ্লেক্স নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এই কর্তৃপক্ষ ইহুদীদের শুধু মাগরাবি গেট দিয়ে তাদের পবিত্র স্থানে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। ইসরাইলী পুলিশ প্রবেশকারীদের উপর নজরদারি করে থাকে। আল আকসা মসজিদে ইসরাইলের এই নতুন আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন মহল। তুরস্কের পররাষ্ট্র দফতর গত শুক্রবার এই হামলার নিন্দা জানিয়ে এবং অভিযোগ করেছে ইসরাইল আল আকসা মসজিদে মুসলমানদের বাধা সৃষ্টি করতেই এই হামলা চালিয়েছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা ইসরাইলের এই আগ্রাসন বন্ধ করার আহ্বান জানাই। তাদের এই উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে মুসলমানদের নামাজ আদায়ের স্বাধীনতা হরণ করা এবং আল আকসা মসজিদের পবিত্রতা বিনষ্ট করা। তুর্কী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমদ দাভুতগলু জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অবস্থান করায় তার অবর্তমানে তার দফতর থেকে এই বিবৃতি প্রদান করা হয়।
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ইসরাইলী নিরাপত্তা কর্মকর্তারা নামাজরত মুসল্লিদের উপর নির্বিচারে বল প্রয়োগ করে এবং তাদের আহত করে। অথচ তারা গত বুধবার ধর্মোন্মাদ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের হামলা বন্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় ইসরাইলের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, আল আকসা মসজিদে মুসলমানদের অন্যায় ও একতরফাভাবে নামাজ আদায়ে বাধা দেয়া এবং বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ বছর আল আকসা মসজিদে এই হামলার ঘটনা প্রথম নয়। গত মার্চে আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতরত কয়েকটি ফিলিস্তিনী ছোট মেয়ের উপর হামলা চালায় ইসরাইলী সৈন্যরা। ঐ সময় একজন সৈন্য পবিত্র কুরআনে লাথি মারে এবং পা দিয়ে তা মাড়ায়।
আরব লীগ শুক্রবারের ইসরাইলী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। গত জানুয়ারির প্রথমদিকে ইহুদিদের চরম দক্ষিণপন্থী দল হাবাইত হায়েহুদি পার্টির সদস্য জেরেমি গিমপেল আল আকসা মসজিদ বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানায়। এতে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইল জেরুসালেম নগরী দখল করে নেয় এবং পরবর্তীতে তা নিজেদের অধিভুক্ত করে নেয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের কাছে স্বীকৃতি চায় কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন পক্ষই ইসরাইলের এই আবদারে সাড়া দেয়নি। জেরুসালেম দখল করে নেয়ার পর থেকে ইসরাইল পর্যায়ক্রমে সেখান থেকে ফিলিস্তিনীদের উৎখাতে নির্যাতনমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং তাদের বাড়িঘর মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে। পরবর্তীতে সেসব স্থানে ইহুদি বসতি স্থাপন করা হচ্ছে।