এখনো আসছে রোহিঙ্গারা, অত্যাচার চলছেই
প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের হাতে রোহিঙ্গাদের তালিকা তুলে দেবে বাংলাদেশ। কিন্তু এখনো প্রতিদিন আসছেন নতুন নতুন শরণার্থী। কেন তারা এখনও দেশ ছাড়ছেন?
গত বছর নভেম্বর মাসের শেষভাগে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেবার ব্যাপারে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ নামের একটি চুক্তি হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক এই চুক্তি হবার পরও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত দশ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী এবং শিশু।
কুতুপালংয়ে ইউএনএইচসিআর পরিচালিত একটি অন্তর্বর্তীকালীন আশ্রয় শিবিরের অফিসঘরের পেছনে বসে ছিলেন জনা দশেক রোহিঙ্গা শরণার্থীর একটি দল।
এই দলটির মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ সানোয়ারার সাথে কথা বলে জানা গেলো, বাড়ির পুরুষেরা সহিংসতার কারণে নিখোঁজ ও নিহত হবার পরও গত ছ’মাস ধরে তারা মিয়ানমারে মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন।
এখন আর সেখানে সরাসরি কোন শারীরিক অত্যাচার নির্যাতন নেই। কিন্তু সেখানকার প্রশাসন ও সেনাবাহিনী কার্যত তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে এবং রুজি-রোজগারের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। নানারকম বাধা-নিষেধের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে সেখানে আর থাকবার উপায় নেই তাদের।
“কাজ করতে পারি না। খেতে পাই না। সেনাবাহিনী সন্ধেবেলায় ঘরে আলো জ্বালতে দেয় না। জঙ্গলে কাঠ কাটতে দেয় না। কাজ নেই। খাব কি”? বলছিলেন মিয়ানমারের বুচিডংয়ের সিন্নিপ্রাং গ্রামের বাসিন্দা সানোয়ারা।
কিন্তু গত বছর নভেম্বর মাসের শেষভাগে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেবার ব্যাপারে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ নামের একটি চুক্তি হবার পরেও কেন আসতে হচ্ছে সানোয়ারাদের?
তার বক্তব্যে অবশ্য উঠে আসছে বাধাবিঘ্নের কথা। দেখা যাচ্ছে চুক্তি হবার পরও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত দশ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে এসেছে কুড়ি জন। আর গত ২রা ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসেছে ৪শর বেশী।
ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র ক্যারোলিন গ্লাক বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “গত কয়েক সপ্তাহে অনেক বেশী সংখ্যায় এসেছে তারা”।
“তারা বলছে, তারা এখনো ভীত। তারা চলাফেরার স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হবার কথা বলছে। কাজের অভাবের কথা বলছে। দৈনন্দিন কাজ করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হবার কথা বলছে। সেনাবাহিনী আতংকও এখনো রয়ে গেছে তাদের মধ্যে”। বলছিলেন মিজ গ্লাক।
অথচ ওদিকে দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবার জন্যও কর্মতৎপরতা শুরু করেছে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ।
সেখানে থেকে বিবিসি বার্মিজ বিভাগের সংবাদদাতার পাঠানো ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বুলডোজার ব্যাবহার করে মাটি সমান করার কাজ হচ্ছে। চলছে টিন ও কাঠ দিয়ে বাড়ি নির্মাণের কাজও।
কিন্তু সেই তুলনায় বাংলাদেশে এখনো চোখে পড়ার মতো কোন তৎপরতা নেই।
গত প্রায় ছ’মাস ধরে নিবন্ধন কর্মসূচী চালিয়ে নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে সাড়ে দশ লাখের বেশী রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নিবন্ধিত করবার পর বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ এখন বলছে তারা নতুন করে পারিবারিক ভিত্তিক তালিকা তৈরি করতে শুরু করেছে।এই কাজ এখনো শেষ হয়নি।
ওদিকে মিয়ানমার শরণার্থীদের গ্রহণ করবার আগে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো তালিকা যাচাই-বাছাই করবে বলে শর্ত রয়েছে।
আশার কথা হচ্ছে, মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়ার জন্য পরিবার ভিত্তিক রোহিঙ্গাদের ছোট একটি তালিকা চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ।
এমন প্রেক্ষাপটে শরণার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে বৃহস্পতিবারই বাংলাদেশে এসেছেন মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিয়াও সোয়ে।
কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বলছেন, পরিবারভিত্তিক রোহিঙ্গাদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা এরই মধ্যে প্রস্তুত করে রেখেছেন তারা।
জেনারেল সোয়ের এই সফরেই তার হাতে সেই তালিকাটি তুলে দেবার জোর সম্ভাবনা আছে বলে বিবিসিকে জানাচ্ছেন মি. কালাম। -বিবিসি