বিশ্বব্যাংক একটি অপদার্থ প্রতিষ্ঠান : অর্থমন্ত্রী
পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংককে আবারো আক্রমণ করলেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের ইনটিগ্রিটি ইউনিটটি একটি ‘অপদার্থ’ অরগানাইজেশন। কারণ এই ইউনিটটির সাথে মতদ্বন্দ্বে পদ্মা সেতুতে ঋণদাতা সংস্থাটির অর্থ আসেনি। তাই আমরা পদ্মা বহুমুখী সেতুর কাজ শুরু করতে পারিনি। এটা হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল করা উচিত হয়নি। তারা যেভাবে আমাদের এই প্রকল্পের অর্থায়ন বাতিল করেছিল, সেটা করার অধিকার তাদের ছিল না।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসির সম্মেলন কে রোববার পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) আয়োজিত ‘জুন ২০১৩ পর্যন্ত দেশের সামষ্টিক পরিস্থিতির চালচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য অধ্যাপক ড. সামসুল আলম। পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জোর দিয়ে বলেন, আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি, পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো ধরনের দুর্নীতি হয়নি। এমনকি বিশ্বব্যাংকও এই প্রকল্পের কোনো দুর্নীতি খুঁজে পায়নি। কিন্তু গণমাধ্যমগুলো দুর্নীতির খবর উগ্রভাবে ছড়িয়েছে। আমাদের বড় ব্যর্থতা আমরা পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করতে পারিনি।
তিনি বলেন, আমি জোর দিয়ে বলছি, মন্ত্রী আমি থাকি বা না থাকি, বিশ্বব্যাংকের ইনটিগ্রিটি ইউনিটের বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ করে যাবো। এ ধরনের ইউনিট শুধু অসুবিধাই করে। কোনো সাহায্য করে না। এই ধরনের অপদার্থ ইউনিট কোনো উন্নয়ন সংস্থার থাকা উচিত নয়।
বিশ্বব্যাংকের কঠোর সমালোচনা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, তাদের সব কিছুই ধীরগতিতে চলে। এই সেতু নিয়ে কানাডায় মামলা চলছে। আর এই পদ্মা সেতুর বিষয়ে সার্বিক রিপোর্ট দিতে দুই বছর সময় লেগে যাবে। কিন্তু আমরা সেটার জন্য বসে থাকতে পারি না। এই সেতুতে অর্থায়ন করতে নতুন চারটি পার্টি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সেই বিষয়ে আমরা যাচাই-বাছাই করছি। তিনি বলেন, পরে অবশ্য তারা বুঝতে পেরে ফিরে এসেছিল। কিন্তু আমরা যখন বুঝতে পারলাম তাদের সাথে থাকলে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করতে আরো দুই বছর লেগে যাবে। তখনই আমরা তাদের না করে দিয়েছিলাম।
বিশ্বব্যাংকের আচরণকে ‘জিহাদি’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, জিহাদি মনোভাব বড় ধ্বংসাত্মক। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতি প্রমাণ করতে জিহাদি মনোভাব নিয়ে নেমেছিল। সেটা মোটেই উচিত নয়। জিহাদি স্পিরিট অনেক উদ্দেশ্যকে নষ্ট করে দেয়। প্রকৃত অপরাধী খালাস পেয়ে যায়। তাদেরকে সুযোগ করে দেয়া হয়।
গণমাধ্যম প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় গণমাধ্যম অর্থনৈতিক বিষয়ে ‘বোগাস রিপোর্ট’ করে। তারা বিশ্ব অর্থনীতি না বুঝেই এমন সব রিপোর্ট করে। আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলো শুধু বলে, এটা সঙ্কট ওটা সঙ্কট। তারা শুধু সঙ্কটের কথাই প্রকাশ করে থাকে।
দেশের সার্বিক অর্থনীতি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও আমরা অনেক এগিয়েছি। আমাদের অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স অনেক ভালো। রফতানি পরিস্থিতি অনেক ভালো। আগামীতে যে সরকারই মতায় আসুক না কেন, তারা এই ধারা যেন অব্যাহত রাখেন। অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, রফতানির খাত হিসেবে ওষুধ শিল্পকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এই সেক্টরে অনেক ভালো সম্ভাবনা আছে। আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে সফটওয়্যার ক্ষেত্রে। পোশাক শিল্পও আমাদের জন্য গর্ব। এই সেক্টরে ১০০ বিলিয়নের সাফল্যে পৌঁছাতে সময় লেগেছে পাঁচ বছর। তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, পরিকল্পনা কমিশন একটি রাজনৈতিক বডি। অনেকে এখানে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পেয়ে থাকেন।