চ্যানেল ফোরকে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি

মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী হতে পারেন সু চি

suchiমিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নির্মূল অভিযানের সব ধরনের আলামত পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিকভাবে গণহত্যা ও নিপীড়ন চালিয়ে তাদের পরিচয় মুছে ফেলতে সমন্বিতভাবে চেষ্টা চালিয়েছে মিয়নমার সরকার। আর এসব অপকর্মের দায়ে দেশটির নেত্রী অং সান সুচি দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন।
যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোর নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি এসব মন্তব্য করেছেন। গত বুধবার চ্যানেল ফোর নিউজ তাদের বিশেষ সংবাদদাতা জনাথন মিলারের নেওয়া সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার করেছে।
রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় মুছে ফেলার অংশ হিসেবে সেখানে গণহত্যা চালানো হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ইয়াংহি লি বলেন, ‘অবশ্যই। কাউকে গণহত্যায় অভিযুক্ত করতে হলে আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তা নির্ধারণ করতে হয়। তাই আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, এখানে গণহত্যার আলামত রয়েছে।’ তাঁর মতে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিপীড়ন চালিয়ে তাদের পরিচয় মুছে ফেলতে সমন্বিতভাবে চেষ্টা চালানো হয়েছে।
রাখাইনে যে কয়জন রোহিঙ্গা নিহতের খবর প্রকাশ হয়েছে তার চেয়ে এই সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করেন ইয়াংহি লি।
‘সেখানে আরও গণকবর পাওয়া যাবে তা তাড়াতাড়ি বা পরে হোক না কেন। কারণ সেখানে এরকম কিছু ঘটেছে বলে আমার কাছে খবর এসেছে।’
বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ওপর সমীক্ষার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা বিষয়ক দাতব্য সংস্থা মিতসঁ সঁ ফ্রঁতিয়ে (এমএসএফ) বলেছে, মিয়ানমারে ২৫ অগাস্ট সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর একমাসেই অন্তত ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
এ বিষয়ে সু চির অবস্থান নিয়ে তার মনোভাব জানতে চাইলে লি বলেন, ‘হয় তিনি বিষয়টি অস্বীকার করছেন অথবা প্রকৃত ঘটনা থেকে তিনি অনেক দূরে আছেন।’
সাক্ষাৎকারগ্রহীতা মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সু চিকে ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দেবী’ অভিহিত করলে জাতিসংঘের বিশেষ দূত লি বলেন, ‘তিনি কখনোই মানবাধিকারের দেবী ছিলেন না। তিনি একজন রাজনীতিক ছিলেন এবং এখনও তিনি একজন রাজনীতিক।’
সু চির বিরুদ্ধে ‘গুরুতর অপরাধ’ প্রমাণিত হবে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপরাধ সংঘটনে সহযোগিতাও জবাবদিহির আওতায় থাকে।
ইয়াংহি লি ২০১৪ সালে জাতিসংঘের বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে ছয়বার মিয়ানমার সফর করেছেন। তবে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা বলে মিয়ানমার তাকে সব সময় অবাধে কাজ করার সুযোগ দেয়নি। তিনি সর্বশেষ মিয়ানমারে গিয়েছিলেন গত জুলাইয়ে। এরপরই রাখাইনে সহিংসতা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা পালাতে শুরু করলে মিয়ানমারে তার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটির সরকার।
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে লি বলেন, ‘তারা বলে, আমি ন্যায়নিষ্ঠ নই এবং পক্ষপাতিত্ব করি। প্রতিবার আমি জিজ্ঞেস করেছি, কোন বিষয়ে আমি পক্ষপাতিত্ব ও অন্যায্য কিছু করেছি বা বলেছি, তার কোনো স্পষ্ট জবাব আসেনি।’
‘যখন আমি বলেছি, রোহিঙ্গাদের এটা-ওটা, তখন মিয়ানমার সরকার বলেছে, ‘আমাদের কোনো রোহিঙ্গা নেই’। আমি নীতিগতভাবে এটা মেনে নিতে পারিনি। তাই কি পক্ষপাতিত্ব?
‘যখন আমি বলেছি, সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নিবর্তনমূলক গ্রেপ্তার বা ধর্ষণ হয়েছে, তারা (মিয়ানমার সরকার) তখন বলে, ‘না, আমরা কখনও এটা করিনি।’
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন হবে না বলে মনে করেন জাতিসংঘের দূত লি।
‘আমি বলছি যে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যেসব বৈষম্য ও নিপীড়নমূলক আইন আছে সেগুলো বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আপনারা আবারও একই ঘটনা ঘটতে দেখবেন। এমনকি, তারা ফিরে যাওয়ার পরও।’
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার বছরের পর বছর মুসলিম রোহিঙ্গাদের ‘কানা গলিতে গবাদি চরানোর’ মতো আচরণ করছে বলে মনে করেন ইয়াংহি লি। এবং বাস্তবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে এটাই হচ্ছে। মানসিক ও শারীরিকভাবে তাদের খুব ক্ষুদ্র এলাকায় বিচারণ করতে হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button