উইঘুরে জোরদার হচ্ছে স্বাধীনতার লড়াই
সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা: গণচীনের উইঘুর মুসলিম অধ্যুষিত পশ্চিমাঞ্চলী রাজ্য জিনজিয়াংয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন ক্রমেই তীব্র হতে তীব্রতর হচ্ছে। স্বাধীনতা আন্দোলন দমনে চীনা সরকারের কঠোর দমন-পীড়নের পরও তা কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না বরং ক্রমেই তার বিস্তৃতি ঘটছে। মূলত চীনের এ প্রদেশটি প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলে পূর্ণ হওয়ায় চীনা সরকার কিছুতেই তা হাতছাড়া করতে চায় না। কিন্তু এ অঞ্চলে হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসা মুসলমানদের মৌলিক অধিকার পূরণ করতেও তারা রাজি নয় বরং চীনা কর্তৃপক্ষ প্রদেশটি থেকে মুসলমানদের উৎখাত করতে অতিমাত্রায় তৎপরতা চালাচ্ছে। কিন্তু স্বত্ত্বেও উইঘুর মুসলমানদের স্বাধীনতা আন্দোলন ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। যা চীনা কর্তৃপক্ষকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।
তেল-গ্যাসে সমৃদ্ধ জিংজিয়াংয়ের নিরঙ্কুশ মালিকানা প্রতিষ্ঠিত রাখতে হাজার বছর ধরে এ এলাকায় বসবাস করে আসা উইঘুর মুসলিমদের বিভিন্ন কৌশলে তাদের পৈতৃক ভিটা থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে চীনা ‘হান’দের প্রতিষ্ঠিত করছে। যেখানে ১৯৪৯ সালেও জিংজিয়াংয়ের মোট জনসংখ্যার মাত্র পাঁচ শতাংশ ছিল ‘হান’ আর ৯৫ শতাংশই ছিল উইঘুর মুসলিম। সেখানে চীন কর্তৃক উইঘুর দখলের পর অন্যান্য স্থান থেকে ‘হান’দের এখানে এনে থাকতে দেওয়ায় এবং উইঘুর মুসলিমদের বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে অন্যত্র যেতে বাধ্য করায় সেখানে বর্তমানে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে ‘হান’দের সংখ্যা। ফলে হানদের সাথে উইঘুর মুসলমানদের একটা সংঘাতও প্রায় অনিবার্য হয়ে উঠেছে। আর এটাকেই চীনা কর্তৃপক্ষ উইঘুর মুসলমানদের ওপর দলন-পীড়ন চালানোর অজুহাত বানিয়েছে।
আর সে অজুহাতেই রাজ্যটিতে গত এক বছর ধরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও জোরদার নজরদারি চালানোর পরও সেখানে পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন না হওয়ায় এই ব্যবস্থা দীর্ঘায়িত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। অতিমাত্রায় বলপ্রয়োগ করার পরও সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি ক্রম অবনতিশীল। ওই এলাকায় সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কার্যকলাপের কারণে সন্ত্রাসের ঝুঁকি বহাল রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে স্থানীয় জিনজিয়াং ডেইলি। চীন দাবি করছে, ইসলামী চরমপন্থী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গুরুতর হুমকির মুখে রয়েছে জিনজিয়াং। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জিনজিয়াংকে নিজেদের বাসভূমি দাবি করা উইঘুর ও সংখ্যাগরিষ্ঠ হান চাইনিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চায়।
এই অবস্থা মোকাবেলায় সরকার ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করেছে এবং নতুন নজরদারি ও সন্ত্রাসবিরোধী ব্যবস্থা নিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে শহরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে হাজার হাজার নতুন পুলিশ স্টেশন স্থাপন। কিন্তু এতেও সার্বিক পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি বরং আগের চেয়েও মারাত্মক অবণতি ঘটেছে। এতদবিষয়ে রাজ্যটির চীন পন্থী গভর্নর সোহরাত জাকির সর্বপ্রথম গত ২২ জানুয়ারি এক সরকারি বৈঠকে একটি রিপোর্ট পেশ করেন। পরে সেটি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ডেইলি জিনজিয়াং পত্রিকায় প্রকাশ পায়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের কার্যক্রমে পরিষ্কার হয়েছে, জিনজিয়াংয়ের সমাজকে স্থিতিশীল করার জন্য আরো কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।
রিপোর্টে বলা হয়, জিনজিয়াংয়ে পরিস্থিতির মৌলিক কোনো পরিবর্তন হয়নি। সেখানে যেহেতু নিয়মিত সহিংস সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চলছে, এ জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে জোরদার সংগ্রাম ও কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি রিপোর্টে আরও বলা হয়, জিনজিয়াং ও এখানকার সমাজের দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও স্থিতিশীলতা আগামী পাঁচ বছরের গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অবশ্যই আঞ্চলিক সরকারের সামগ্রিক লক্ষ্য হতে হবে। এই লক্ষ্য পূরণে সরকার বিশেষ কঠোর অভিযান জোরদার করে যাবে। এসব অভিযানের মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে নিরঙ্কুশ নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সমাজে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা। মূলত জিনজিয়াংয়ে সহিংসতার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দায়ী করে চীন। কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং প্রবাসী উইঘুর মুসলিমরা বলছেন, মুসলিমদের ধর্ম ও সংস্কৃতির ওপর চীনের নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলে উইঘুরদের হতাশার প্রকাশ এসব ঘটনা। অবশ্য কোনো প্রকার নিপীড়নের কথা অস্বীকার করে চীন।
উইঘুর হচ্ছে পৃথিবীর সর্বাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ চীনের সর্ববৃহৎ নৃতাত্ত্বিকগোষ্ঠী। চীনের পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ প্রদেশ ও ফসল উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র জিংজিয়াংয়ে এদের বাস। এলাকাটি বিপুল তেল ও খনিজসম্পদে পূর্ণ। ১৬ লাখ ৪৬ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার (বাংলাদেশের প্রায় ১২ গুণ) আয়তনের জিংজিয়াংয়ে বসবাসরত ২.২ কোটি মানুষের ১.২ কোটিই মুসলমান। বাহ্যিকভাবে এরা স্বাধীন হলেও সত্যিকার অর্থে তারা পরাধীন। অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা চীনা সরকারের নির্যাতনের জাঁতাকলে পিষ্ট। আরাকানের মতো সেখানেও মুসলমানরা নিজ দেশে, পূর্বপুরুষদের ভিটায় পরদেশিতে পরিণত হয়েছে।
বস্তুত উইঘুরদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যগুলো সমূলে ধ্বংস করার জন্য চীনা সরকার ক্রমাগত পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে চরম দুঃখের বিষয় হলো, বিশ্বমিডিয়ায় ঝড় তোলেনি ইউঘুরের পিতাহারা নিরীহ শিশুর কান্না। মুসলমান হওয়ায় তাদের বুকফাটা আর্তনাদ ফলাও করছে না বিশ্বমিডিয়া। আন্তর্জাতিক কোনো মিডিয়া যাচ্ছে না সেখানে। অন্যদিকে চীনা সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কাছে তাদের ওপর নির্যাতনের বিষয় আড়াল করতে কৌশলী অবস্থানে রয়েছে। শত শত মুসলমান নিহত হলে মাত্র ১০-১২ জন নিহত বলে রাষ্ট্রীয় মিডিয়া প্রচার করছে। আর এখান থেকে খবরগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও এভাবেই প্রচার করছে। ফলে উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা সরকারের ক্রমাগত নির্যাতনের ৯০ শতাংশই থেকে যাচ্ছে আড়ালে।
ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, হিজরি প্রথম শতকে সাহাবায়ে কেরামের সোনালি যুগেই চীনে রোপণ করা হয় ইসলামের বীজ। দশম শতাব্দীতে ব্যাপক হারে এ অঞ্চলের মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকে মুসলমানদের সংখ্যা। বর্তমান চীনে দুই কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মুসলিম বাস করে। সেখানে বসবাসরত মুসলমানরা দুই ধরনের। ‘হুই’ মুসলমান ও ‘উইঘুর’ মুসলমান। ‘হুই’দের পূর্বপুরুষরা মূলত পারস্য, সিরিয়া, ইরাক ও আনাতোলিয়া থেকে চীনে এসেছিল কাজ করতে। চীনে এসে চীনা ‘হান’ মেয়েদের বিয়ে করে এখানেই থেকে যায়। তাদের সন্তানরাই ‘হুই’ বলে প্রসিদ্ধ।
আর ‘উইঘুর’রা মূলতই জিংজিয়াং বা কাশগর এলাকায় হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসছে। তারাই এ এলাকার মূল অধিবাসী। জিংজিয়াং চীনের অধিকারে ছিল না, তা ছিল মুসলমানদের স্বাধীন ভূমি। মুসলমানদের শাসনে থাকাকালে এ এলাকার নাম ছিল উইঘুরিস্তান বা পূর্ব তুর্কিস্তান। ১৬৬৪ সালে বর্তমান চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাঞ্চু শাসকরা কিং সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করলে অন্যান্য এলাকার সঙ্গে মুসলমানদের স্বাধীন এ এলাকাও দখল করে নেয়। স্বাধীনচেতা মুসলমানরা অব্যাহত স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে ১৮৬৪ সালে ২০০ বছর পর কিং শাসকদের বিতাড়িত করে কাশগরকেন্দ্রিক আবার স্বাধীনতার পতাকা ওড়ায়।
স্বাধীনতাকামী এ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আবারও আক্রমণ করে চীন। সমাজতন্ত্রের বিষাক্ত ছোবলে আক্রান্ত হয়ে আবারও স্বাধীনতা হারায় উইঘুরিস্তান। ১৮৭৬ সালে চীন আবারও উইঘুর সাম্রাজ্য দখল করে এর নাম দেয় জিনজিয়াং। জিনজিয়াং অর্থ নতুন ভূখ-। সেই থেকেই পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ হয় উইঘুর মুসলিমরা। আরাকানের মুসলমানদের মতো তারাও হাজার বছরের ভিটায় পরবাসী হয়ে যায়। কেড়ে নেওয়া হয় তাদের মৌলিক নাগরিক অধিকার। আর্থ-সামাজিকভাবে চরম বৈষম্যের শিকার হয় তারা। সরকারি চাকরিতে তাদের নিয়োগ একেবারেই কম। আর যেসব মুসলিম চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন, তারাও বেতনের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে জানা যায়।
একই চাকরিতে একই পদে একজন ‘হান’ যা বেতন পাচ্ছেন, একজন মুসলিম তা পাচ্ছেন না। মুসলমান হওয়াই অপরাধ! দীর্ঘদিন তারা চীনা সরকারের কাছ থেকে অধিকারগুলো পাওয়ার আশা করেছে। ধর্মীয় ও সামাজিক অধিকার লাভের সম্ভাবনার সূর্য অস্তমিত হয়ে যাওয়ার পর স্বাধীনতার স্বপ্ন জাগরিত হয়েছে। তারা ভেবে দেখল, তাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা ছাড়া অধিকার ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। তারা জিনজিয়াং প্রদেশে এক স্বাধীন ভূখন্ড প্রতিষ্ঠা করবে, যেখানে তারা ধর্মীয় ও ব্যক্তিস্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে। স্বপ্নের সেই স্বাধীন ভূখন্ডের নাম উইঘুরিস্তান।
আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার দেয়ার পরিবর্তে উইঘুরদের ওপর কঠোর দমন-পীড়নের পথই বেছে নিয়েছে চীনা সরকার। এমনকি দেশটি তাদের মানবীয় অধিকারও স্বীকার করে না। যেহেতু উইঘুরদের ধর্মই তাদের স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদনের স্বপ্ন দেখায়, নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শেখায়, তাই সে ধর্মীয় স্বাধীনতায় নির্লজ্জ ও নগ্ন হস্তক্ষেপই তাদের প্রথম পদক্ষেপ। সেখানে ১৮ বছরের নিচের কোনো উইঘুর বালক মসজিদে যেতে পারবে না। ৫০ বছরের কম বয়সী কেউ প্রকাশ্যে নামাজ পড়তে পারে না। নামাজ পড়ার কারণে অনেক মুসলিমের চাকরি চলে যায়। রোজা রাখাও নিষিদ্ধ। কেউ রোজা রাখলে তাকে রোজা ভাঙতে বাধ্য করা হয়। সীমিত কিছু ক্ষেত্র ছাড়া সব ক্ষেত্রেই কোরআন শরিফ তেলাওয়াত নিষিদ্ধ। কোরআন শরিফ শেখা বা শেখানোর সুযোগও বন্ধ। নারীদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ। কোনো হিজাব পরা নারীকে ট্যাক্সিতে উঠালে চালককে করা হয় মোটা অঙ্কের জরিমানা। হিজাব পরা নারীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান ডাক্তারদের জন্য নিষিদ্ধ।
মুসলিম সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টুপি থেকে শুরু করে সব ধরনের ইসলামী ঐতিহ্যের পোশাক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। চীনের কোনো নাগরিক যদি ফ্যাশনের জন্য দাড়ি রাখেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। তিনি স্বাধীনভাবেই চলাফেরা করতে পারেন; কিন্তু কোনো উইঘুর মুসলিম যদি দাড়ি রাখেন, তাহলে তাঁকে ধর্মীয় উগ্রপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জিংজিয়াংয়ে দুই হাজার মসজিদ ছিল। এর সংখ্যা কমছে দিন দিন। মসজিদগুলো গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে স্থাপন করা হচ্ছে পর্যটনকেন্দ্র। সম্প্রতি কাশগার বা জিংজিয়াংয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের প্রবেশপথে বসানো হয় মেটাল ডিটেক্টর। মসজিদে ঢুকতে হলে মুখোমুখি হতে হয় পুলিশি তল্লাশির। নানাভাবে নিরাপত্তাবাহিনীর হয়রানীর শিকার হচ্ছেন মুসল্লীরা। যা ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন।
অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা মানবতা আর মানবাধিকারের স্লোগ্লান পৃথিবীর রাজপথ কাঁপিয়ে তুললেও উইঘুর মুসলিমদের ন্যায়সংগত অধিকারের পক্ষে কেউ তেমন কথা বলেনি বা এখনও বলছে না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও স্বাধীনতাকামী এ জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতার চেতনাকে নানা কারণেই ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে না। স্বাধীনতাকামীদের ওপর চলমান নির্যাতন দেখেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। যা সত্যিই দুঃখজনক।
তারা পূর্ব তিমুরের যোদ্ধাদের যারা উপস্থাপন করেছে স্বাধীনতাকামী হিসেবে, তারাই আরাকান, কাশ্মীর কিংবা উইঘুর স্বাধীনতাকামী নির্যাতিতদের নামের সঙ্গে প্রায়ই জুড়ে দিচ্ছে ‘জঙ্গি’ অথবা ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ শব্দ। মনে হয় যেন মানবতা, মানবাধিকার সবই আছে; কিন্তু তা মুসলমানদের জন্য নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পৃথিবীর বেশির ভাগ মুসলিম রাষ্ট্রও উইঘুরদের কান্নার আওয়াজ শুনেও না শোনার ভান করে আছে। উম্মাহর কোটি কোটি সদস্যকে নিপীড়িত রেখেও আমরা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছি। নেই কোনো মাথাব্যথা। যা আমাদের মুসলিম উম্মাহর জন্য দুর্ভাগ্যজনকই বলতে হবে।
মূলত উইঘুরিস্তান স্বাধীন না হলেও চীনা কর্তৃপক্ষও খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। উইঘুর সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে ব্যর্থতার জন্য চীনা সরকারকে এর মাসুল দিতে হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। চীন সরকারের সামনে দুটি পথ খোলা আছে। প্রথমত, উইঘুর মুসলিমদের শত্রু না ভেবে তাদের ধর্মীয় ও সংস্কৃতির স্বাধীনতা দেওয়া। দ্বিতীয়ত, উইঘুরদের মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হতে পারলে তাদের আলাদা রাষ্ট্রের স্বাধীনতা দেওয়া। এ দুইয়ের কোনো একটি না করে যদি তাদের ওপর দমন-পীড়ন নীতি অব্যাহত রাখা হয়, তাহলে উইঘুর স্বাধীনতা আন্দোলন ক্রমেই শক্তিশালী হবে এবং এক সময় উইঘুরিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্র মানচিত্রে স্থান করে নেবে। হয়তো সে দিন আর বেশি দূরে নয়।