আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন

Bangla Languageড. এমএ সবুর: ভাব-অনুভূতি প্রকাশের ভঙ্গি-সঙ্কেতেই ভাষার উদ্ভব হয়। তবে হঠাৎই কোন ভাষার উদ্ভব সম্ভব নয়। কোন সমাজ বা জনসমষ্টির বোধগম্য ভাষার জন্য দীর্ঘকাল-যুগের প্রয়োজন হয়। বাংলাভাষা উৎপত্তির সঠিক কোন ইতিহাস না থাকলেও ‘চর্যাপদ’কে বাংলাভাষার প্রাচীন নিদর্শন বলা হয়। এতে এতদঞ্চচলের তৎকালীন অধিবাসীদের ধর্মের বিধি-বিধান, সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ, জীবন-জীবিকা, সামাজিক অবস্থা ইত্যাদির বর্ণনা পাওয়া যায়। মতভেদসহ খ্রিস্টীয় সপ্তম শতক থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত বা পাল শাসনামলকে চর্যাপদের রচনাকাল ধরা হয়। এর পর সংস্কৃতভাষী সেন শাসনামলে বাংলাভাষা চরম উপেক্ষিত হয়। অবশ্য তুর্কি আগমনে বাংলাভাষার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। আর পাঠান, সুলতানী, মোগল শাসনামলে রাষ্ট্রীয় পোষকতায় বাংলাভাষায় অনেক সাহিত্য রচিত হয়। বৃটিশ শাসনামলের শুরুতে বাংলাভাষার উপর আঘাত এলেও পরে এতে আধুনিক সাহিত্যের নতুন মাত্রা যোগ হয়। তবে উল্লিখিত সব শাসনামলেই বাংলাভাষাকে রাজভাষা থেকে দূরে রাখা হয়। আর পাকিস্তান শাসনামলে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা আদায় করা হয়। বাঙালি জাতির ইতিহাসে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। বৃটিশ শাসনামল থেকেই বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করা হলেও ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর আনুষ্ঠানিক আন্দোলন শুরু হয়। আর ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির শাহাদাতের ঘটনা ভাষা আন্দোলনের চুড়ান্ত পর্যায়। একুশে শহীদদের প্রাণের বিনিময়ে বাংলাভাষা প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়। তাই ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস পালিত হয়। এছাড়া ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর মাধ্যমে জাতিসংঘ কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারিকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং বিশ্বের অধিকাংশ দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় এ দিবসটি উদযাপিত হয়। এতে বাংলাভাষা ও  বাংলাদেশের মর্যাদা অনেক গুণে বেড়ে যায়।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছলেও তা শুরু হয়েছে অনেক আগ থেকেই। ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের আগে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত স্বাধীন সর্বভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দি করার দাবির প্রেক্ষিতে মুসলমানদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং তারা উর্দুকে সর্বভারতের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করেন। এর আগে বাংলাকে সর্বভারতের রাষ্ট্রভাষা করার যুক্তি তুলে ধরে ১৯৩৭ সালের ২৩ এপ্রিল মওলানা আকরম খাঁ দৈনিক আজাদ-এর সম্পাদকীয়তে লিখেন, ‘….. সাহিত্যের দিক দিয়া বাঙলা ভারতের সমস্ত প্রাদেশিক সাহিত্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। বাঙলা ভাষার বিবিধ ভাব প্রকাশোপযোগী শব্দের সংখ্যাও বেশি। অতএব, বাঙলা সব দিক দিয়াই ভারতের রাষ্ট্রভাষা হইবার দাবি করিতে পারে।’ অবশ্য এর আগে ১৯১৮ সালে বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এক প্রবন্ধে ‘শুধু ভারতে কেন, সমগ্র এশিয়া মহাদেশে বাংলা ভাষার স্থান সবোর্চ্চ’ উল্লেখ করে বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। তারও আগে অর্থাৎ ১৯১১ সালে রংপুরে প্রাদেশিক শিক্ষা সম্মেলনে ঢাকার জমিদার সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ‘বাংলাভাষা মুসলমানদের মাতৃভাষা, এ ভাষা আমাদের জাতীয় ভাষা’ মন্তব্য করে বাংলাভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দাবি করেন।
মূলত ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের পর প্রস্তাবিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পাঞ্জাব- বেলুচিস্তানের বুদ্ধিজীবীরা উর্দুকে প্রস্তাবিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করেন। অন্যদিকে ড. মুহম্মদ  শহীদুল্লাহ, আবুল মনসুর, ফররুখ আহমদ, আব্দুল হক, ড. এনামুল হক প্রমুখ সাহিত্যিক বাংলাভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে প্রবন্ধ লিখেন। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. জিয়াউদ্দীন আহমদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে মত দিয়ে প্রবন্ধ লিখেন। এর প্রতিবাদে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ‘পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা’ শিরোনামের এক প্রবন্ধে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার যুক্তি উল্লেখ করেন। এ প্রবন্ধটি ১৯৪৭ সালের ৩ আগস্টে তৎকালীন কমরেড পত্রিকায় ইংরেজি ভাষায় ঞযব ষধহমঁধমব ঢ়ৎড়নষবসং ড়ভ চধশরংঃধহ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশ বিভক্তির মাত্র একমাস পর অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ‘তমুদ্দুন মজলিশ‘র পক্ষ থেকে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। এতে অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমদ ও প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমের প্রবন্ধ স্থান পায়। এর মাধ্যমে বাংলাভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন শুরু হয়। এ দিকে ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে বক্তৃতা দেন। একই দাবিতে ছাত্ররা ১৯৪৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্র ধর্মঘট এবং ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। এ কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের সাথে ছাত্রদের সংঘর্ষ ঘটে। এতে বেশ কিছু ছাত্র আহত এবং গ্রেফতার হন। তবে কায়েদ-ই-আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর আগমন নিষ্কণ্টক করতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর খাজা নাজিমুদ্দীন ১৫ মার্চে ছাত্রদের সাথে ৮ দফা চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের মুক্তি দিতে বাধ্য হন। এরপর ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল কায়েদ-ই-আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এক ভাষণ দেন। এতে তিনি উদুর্কে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষার ঘোষণা দিলে ছাত্ররা ঘড়, ঘড় বলে প্রতিবাদ করেন। একই অবস্থার অবতারণা ঘটে ২৪ মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজর্ন হলে সমাবর্তনের বক্তৃতাকালে। ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানের গভর্নর লিয়াকত আলী খান ঢাকায় আগমন করেন। তখন বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) অধ্যাপক গোলাম আযম (জামায়াতে ইসলামের সাবেক আমির) তাকে স্মারকলিপি প্রদান করেন। একই দাবিতে ছাত্রনেতা আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে ১৯৫০ সালের ১১ মার্চে বিশ্ববিদ্যালয় ভাষা দিবস উদযাপন কমিটি গঠিত হয়। একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সরকারের উদ্যোগে বাংলাভাষা সংস্কার কমিটি গঠিত হয়। আর খাজা নাজিমুদ্দীন নিখিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলে পূর্ব পাকিস্তানের জনমনে আশার সঞ্চার হয়। কিন্তু পূর্ব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে খাজা নাজিমুদ্দিন ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারিতে পল্টন ময়দানের জনসভায় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্র মতো উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষার ঘোষণা দেন। এতে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র-জনতা বিস্মিত ও বিক্ষুব্ধ হন। পরে ৩১ জানুয়ারি তারিখে বাংলাভাষাকে রাষ্ট্র্রভাষা করার দাবিতে মওলানা ভাষানীর নেতৃত্বে ৪০ সদস্যের ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। এ সংগঠনের ডাকে ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রধর্মঘট পালিত হয় এবং ২১ ফেব্রুয়ারি প্রদেশব্যাপী ধর্মঘটের কর্মসূচি দেয়। এ কর্মসূচিকে বানচাল করতে তৎকালীন নূরুল আমিন সরকারের পেটুয়া বাহিনী ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সরকার ঘোষিত ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল বের করে। সরকারের পুলিশ বাহিনী বেপরোয়াভাবে মিছিলে গুলি বর্ষণ করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সালাউদ্দীন, ছালাম, বরকত, জব্বার, রফিকসহ অনেকে শাহাদাৎ বরণ করেন।
ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে এবং বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবির আন্দোলন সমর্থনে গণপরিষদ সদস্য ও তৎকালীন দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন, মওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ প্রমুখ গণপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে দেশব্যাপী আন্দোলন আরও তীব্রতর হয়ে ওঠে। এ আন্দোলন দমাতে ব্যর্থ হয়ে সরকার বাংলাভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলাভাষা রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়।
মূলত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন একিভুত হয়। তাই ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির আত্মত্যাগ পূর্ব পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে নিয়ে যায়। এ আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতিসত্তার স্বতন্ত্র বিকাশের গতিপথ নির্ধারিত হয় এবং স্বাধীন জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার চেতনা জাগ্রত হয়। আর এ চেতনাই ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ্য করা যায়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যেমন আকস্মিকভাবে উদ্ভব হয় নাই তেমনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধও হঠাৎ করেই সংঘটিত হয় নাই।
মুক্তিযুদ্ধের যাত্রা শুরু হয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকেই। ভাষা আন্দোলনকে ভিত্তি করেই ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন এবং শের-ই-বাংলা ফজলুল হকের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছে। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ দেশের ছাত্র-জনতা ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবির মধ্যে সে চেতনারই পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করা গিয়েছে। যে চেতনা নিয়ে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বিভিন্ন দল ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছে সে চেতনাই ফুটে উঠেছে ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে। সর্বোপরি ২১ ফেব্রুয়ারির চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে পাকিস্তানী শোষণের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জন করেছে। অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে বাঙালি জাতিকে রক্ষা করতে বাঙালি জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি জাতি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করেছে এবং একই চেতনায় অনুপ্রাণীত হয়ে তারা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের চেতনা আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা একই সূত্রে গাঁথা। মহান একুশের চেতনা মূলত পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম-সাধনা করে বাংলাভাষা-সংস্কৃতিকে সংস্থিত এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করা। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর শাসন-শোষণ, নির্যাতন-বৈষম্যমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button