পাকিস্তানকে ঘায়েলের মার্কিন-ভারত প্রচেষ্টা ব্যর্থ
সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মার্কিন সমর্থিত একটি প্রচেষ্টা নস্যাৎ হয়ে গেছে। রাশিয়া, চীন, সৌদি আরব ও তুরস্ক। মূলত এই চার বন্ধু রাষ্ট্র পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ানোর ফলে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ফ্রান্স, ব্রিটেনের উদ্যোগ নেয়া ‘সন্ত্রাসে আর্থিক মদতদাতা’ তকমা থেকে বেঁচে গেল পাকিস্তান।
সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগ চলতি সপ্তাহে আমেরিকা পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নজরদারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিল। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স বা এফএটিএ’ বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আমেরিকা পেছনে থেকে কাজ করছিল। আমেরিকা বলে আসছে- পাকিস্তান সন্ত্রাসীদেররকে অর্থ যোগান দিচ্ছে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার যে প্রক্রিয়া চলছিল তার সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, এফএটিএ’র বৈঠকের পর বুধবার মার্কিন প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার চেষ্টা শুরু হয়।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সৌদি আরবের অস্বাভাবিক মতপার্থক্যের ঘটনা ঘটেছে যা সচরাচর দেখা যায় না। সৌদি আরব পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা পিজিসিসি’র পক্ষ থেকে পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন দেয় এবং ইসলামাবাদকে কালোতালিকাভুক্ত করার বিরোধিতা করে। পিজিসিসি সম্মিলিতভাবে এফএটিএ’র সদস্য এবং সৌদি আরবে সংস্থার পক্ষ থেকে পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন জানায়। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার নতুন করে ভোট হতে পারে বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিদার নোয়ের্ত জানিয়েছেন।
প্যারিসে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বলয়ের দেশগুলো জোরদার চেষ্টা চালিয়েছিল, যাতে সন্ত্রাসে আর্থিক মদতদাতা রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের নাম নজরদারি-তালিকায় তোলা যায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে এই সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ অনেকটাই সাজিয়ে দিয়েছিল ভারত। কিন্তু বৃহস্পতিবার চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বে তাদের বন্ধু দেশগুলো দেশ বেঁকে বসায় আপাতত তিন মাসের রক্ষাকবচ আদায় করে নিতে পেয়েছে পাকিস্তান। অবশ্য এই সময়টি খারিজ করতে বৃহস্পতিবার সম্মেলনের শেষ দিনেও চেষ্টা চালিয়েছে আমেরিকা।
এফএটিএফের সদস্যদের মধ্যে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, বিশ্ব ব্যাংক, জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় কমিশনের শীর্ষ কর্তারা রয়েছেন। ফলে তালিকায় নাম উঠলে এই সংস্থাগুলো মুখ ফিরিয়ে নেবে, এমন একটা আশঙ্কা পাকিস্তানের ছিলই। শেষ পর্যন্ত গোটা ঘটনাপ্রবাহকে নিজেদের ‘জয়’ হিসেবেই দেখাচ্ছে ইসলামাবাদ।
সম্প্রতি, ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স পাকিস্তানকে তিন মাসের অব্যহতি দিয়েছে। বুধবারই সেকথা ঘোষণা করেছে ইসলামাবাদ। তারা জানিয়েছে যে, তিন মাস তাদের ওই শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। আসলে আমেরিকার সঙ্গে মত পার্থক্য হয়েছে সৌদি আরবের।
‘গলফ কর্পোরেশন কাউন্সিল’-এর তরফ থেকেই ছিল সৌদি আরব। যদিও আমেরিকা এখনো চেষ্টা করে চলেছে যাতে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স তাদের ওই সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেয়। গত মাসে পাকিস্তানের ২০০ কোটি ডলার অনুদান বন্ধ করে দেয় আমেরিকা। তাদের দাবি, হাক্কানি নেটওয়ার্ক ও তালিবানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না ইসলামাবাদ। -পার্স টুডে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল