ব্রিফিংয়ে ২ নোবেল বিজয়ী নারী

সু চির আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হওয়া উচিত

krmanকক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনে কাঁদলেন ইয়েমেনের নোবেল বিজয়ী তাওয়াক্কল কারমান ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের নোবেল বিজয়ী মেরেইড ম্যাগুয়ার।
রবিবার বিকালে উখিয়ার মধুছড়া ক্যাম্প ঘুরে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন দুই নোবেল বিজয়ী। এসব আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তাঁরা।
ব্রিফিংয়ে তাওয়াক্কল কারমান ও মেরেইড ম্যাগুয়ার বলেন, গত ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত রাখাইনে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও অমানবিক বর্বরতা চলছে, মিয়ানমার সরকার তার দায় এড়াতে পারে না। অং সান সু চি একজন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হয়েও তাঁর সামরিক বাহিনী গত ছয় মাস সে দেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে সে আগুনে শিশুদের নিক্ষেপ করার মতো জঘন্যতম অপরাধ করেছে। তাদের সেনা, পুলিশ, উগ্রপন্থী রাখাইনদের লোমহর্ষক ঘটনা বিশ্ববাসী দেখেছে, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে দুই নোবেল বিজয়ী বলেন, রোহিঙ্গা নারীদের যেভাবে ধর্ষণ, উৎপীড়ন ও নির্যাতন করা হয়েছে, এ জন্য অং সান সু চি ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হওয়া উচিত। নোবেল বিজয়ীরা বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়সহ মানবিক সহায়তা প্রদান করার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ স্থানীয়দের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন তাঁরা।
এর আগে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে দুদেশের দুই নোবেল বিজয়ী কুতুপালং রেজিস্টার্ড শরণার্থী ক্যাম্পে পৌঁছালে ক্যাম্পে দায়িত্বরত সরকারি কর্মকর্তা, এনজিও সংস্থার সংশ্লিষ্টরা তাঁদের ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করেন।
পরে নোবেল বিজয়ীরা ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে ক্যাম্প কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে জানতে চান রোহিঙ্গারা কেমন আছে? জবাবে ডেপুটি সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহীন জানান, সব ধরনের মানবিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
এর পরে দুই নোবেল বিজয়ী সরাসরি চলে যান মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। যেখানে রয়েছে ধর্ষিতা, গুলিবিদ্ধসহ অসংখ্য নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। সেখানে নোবেল বিজয়ীরা মিয়ানমারে ধর্ষণের শিকার চার রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে একান্তে কথা বলেন।
দীর্ঘ সময় তাঁদের সঙ্গে কথা বলে নোবেল বিজয়ীরা বেরিয়ে যাওয়ার পরে ওই চার নারী সাংবাদিকদের জানান, নোবেল বিজয়ীরা জানতে চান তাঁদের ওপর নির্যাতনের কথা। সেইসঙ্গে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, বাড়িঘরে লুটপাট ও যুবক ভাইদের ধরে নিয়ে গণগ্রেপ্তার, গুলি করে নির্বিচারে হত্যার নির্মম কাহিনী শুনে দুই নোবেল বিজয়ী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বলে জানান রোহিঙ্গা নারীদের টিম লিডার জাহেদা বেগম (৩১)।
এরপর নোবেল বিজয়ীরা গুলিবিদ্ধ, হাত-পা কাটা, চোখ উপড়ে ফেলা এমন ক্ষতবিক্ষত কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় নোবেল বিজয়ীরা সেখানে জড়ো রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করেন, রোহিঙ্গাদের বর্বরোচিত হামলার জন্য অং সান সু চিকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার দিয়ে মিয়ানমারকে ফেরত নিতে হবে।
বাংলাদেশ সফররত শান্তিতে নোবেলজয়ী তিন নারীর মধ্যে ইরানের শিরিন এবাদির আজ সোমবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর করার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button