ইতালির সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে মুসলিম বিদ্বেষ বাড়ছে
ইতালিতে আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য সিাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে মুসলিম বিরোধী প্রচারণা বাড়ছে, বলা যায় সেদেশের রাজনৈতিক গুলোর প্রধান প্রচারণার বিষয় হয়ে উঠেছে অভিবাসন – কিছু দলের জন্য এর পেছনের অর্থ হয়তো ‘মুসলিম অভিবাসন’।
গত চার বছরে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির মাটিতে এসে নেমেছে প্রায় ৬ লক্ষ লোক। এই অভিবাসনের ব্যাপারে কে কত কড়া নীতি নেবে তাই নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো।
“ইউক্রেন বা বেলারুস থেকে অভিবাসী নেয়া বরং অনেক ভালো। ওরা খ্রীস্টান – মুসলিম নয়। তাই তারা সন্ত্রাসী হতে পারে না” – বলছিলেন পাওলো গ্রিমোল্ডি, লিগ নামে এক দলের নেতা – যার আগে নাম ছিল নর্দার্ন লিগ।
‘আমার মতে এ মুহুর্তে আমাদের অভিবাসীর দরকার নেই” – বলছেন গ্রিমোল্ডি।
বিবিসির রিতুলা শাহ লিখছেন, ইতালিতে এমন কিছু দল আছে যারা নিজেদেরকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে পরিচয় দিতে কোন লজ্জা বোধ করেন না।
এরকমই একটি দল হচ্ছে কাসা পাউন্ড। এর কালো পোশাক পড়া সদস্যরা চায় ইতালির ইইউ ত্যাগ, সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া, এবং সব অভিবাসীকে বের করে দেয়া।
এই দলেরই এক সমর্থক হলেন মাসিমো ত্রেফিলেতি – তিনি গর্বের সাথে নিজেকে এবং নিজের দলকে ফ্যাসিস্ট বলে ঘোষণা করলেন।
তিনি যেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন, তার সামনেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট শাসন থেকে মুক্তির স্মারক স্তম্ভ।
তিনি যে ফ্যাসিস্ট শাসনের পতনের স্মারকের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে গর্বের সাথে ফ্যাসিস্ট বলছেন, তা বুঝতে পেরে ত্রেফিলেতি বললেন – তিনি মনে করেন ১৯৪৫ সালের ২৫শে এপ্রিল তার চোখে ‘জাতীয় ক্ষতির দিন’, কোন ‘গৌরবের দিন’ নয়।
কাসা পাউন্ড অবশ্য একটি খুবই ছোট দল।
কিন্তু ইতালিতে ৪ঠা মার্চের নির্বাচনের আগে অন্য অনেক পার্টির মুখে একই ধরণের কথা শোনা যাচ্ছে।
নৌকায় করে সাগর পাড়ি দিয়ে এশিয়া, মধ্য এশিয়া, এবং আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসীদের ক্রমশই আরো বেশি ‘অবাঞ্ছিত’ মনে করা হচ্ছে।
আর বড় বড় দলগুলোর নেতারা পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্লা দিয়ে দেখাতে চাইছেন এদের বিরুদ্ধে তারা কত কঠোর নীতি নেবেন।
এখন জনমত জরিপের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে মধ্য-দক্ষিণপন্থী জোট সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুস্কোনির ‘ফোরজা ইতালিয়া’ আছে সবার আগে।
বার্লুসকোনি বলেছেন, ‘অবৈধ অভিবাসীরা হচ্ছে বিস্ফোরণের জন্য তৈরি একটি সামাজিক টাইম বোমা।’
তিনি অঙ্গীকার করেছেন, অভিবাসীদের গণহারে তাদের নিজদেশে ফেরত পাঠানো হবে।
বার্লুসকোনির কোয়ালিশনের একটি সদস্য দল হচ্ছে লিগ। এর প্রধান নেতা মাত্তিও সালভিনি।
তিনি ফ্রান্সের দক্ষিণপন্থী নেত্রী মারিন লা পেনের বন্ধু, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভক্ত।
তার শ্লোগান হচ্ছে ‘ইতালিয়ানস ফার্স্ট’ – যার অর্থ, ইতালিয়ানদের স্বার্থ সবার আগে।
লিগের এক ডেপুটি পাওলো গ্রিমোল্ডি বলছিলেন, ইতালিতে কে আসতে বা থাকতে পারবে, তা ইতালিরই ঠিক করতে হবে।
প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান থেকে মনে করা চলে যে বেশির ভাগ ইতালিয়ানই নির্বাচনের আগে এই অভিবাসীদের একটা হুমকি হিসেবে দেখছে।
নানা রকম পদক্ষেপ নেবার পর এখন অবশ্য ইতালিতে অভিবাসী আসা অনেক কমে গেছে। তবে নির্বা্চনের ফল কি হবে তা আন্দাজ করা এখনো কঠিন। -বিবিসি