আবারও ঠান্ডায় কাঁপছে ইউরোপ
আবারও তীব্র ঠান্ডায় কাঁপছে ইউরোপ। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে নতুন করে কনকনে আবহাওয়া ব্রিটেনসহ নানা দেশের জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সোমবার ভোর থেকেই মধ্য ইউরোপে তাপমাত্রা মাইনাস ১০ থেকে মাইনাস ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। তীব্র ঠান্ডায় বিভিন্ন দেশে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই বছরের শীতে প্রথমবারের মতো রেকর্ড পরিমাণ ঠান্ডা পড়েছে এবং এই সপ্তাহজুড়ে তাপমাত্রা আরও কমতে থাকবে।
তুষারপাত ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে ব্রিটেনের জীবনযাত্রাও। রাস্তায় বরফ জমে থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে যানচলাচল। বিভিন্ন রুটের ট্রেন চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। ব্রিটেনে প্রায় সর্বত্রই দুর্যোগের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ।
ব্রিটেনে আবহাওয়ার এ অবস্থাকে ‘দ্য ভেস্ট ফ্রম দ্যা ইস্ট’ নামে অভিহিত করেছেন আবহাওয়াবিদরা। ব্রিটেনে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে যাত্রীদের সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বাড়ি ফিরতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সাউথ ইস্টার্ন রেলের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আপাতত যাত্রীদের সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ভ্রমণ শেষ করার পরামর্শ দিচ্ছি।’ এ পরিস্থিতিতে লন্ডন ওভারগ্রাউন্ড সার্ভিসও সোমবার রাত সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে সেবা বন্ধের ঘোষণা দেয় এবং সাউদার্ন রেল তাদের সার্ভিস সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছে। লন্ডন সময় সোমবার সকাল থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত ব্রিটেনের বিভিন্ন রেলরুটে একশর বেশি ট্রেন দেরিতে ছেড়ে যায়। অনেক ট্রেনের যাত্রাও বাতিল করা হয়।
তীব্র শীত ও তুষারপাতের কারণে মধ্য ইউরোপের কিছু বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। রাস্তাঘাট পিচ্ছিল হওয়ার কারণে বহু জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঠান্ডার প্রকোপে পোল্যান্ডে আট ব্যক্তি মারা গেছেন, ইতালির রাজধানী রোমে সোমবার থেকে স্কুল ও কিন্ডারগার্টেনগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। সোমবার জার্মানির ব্রিমেন ও কোলন-বন বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, কেবল উওর জার্মানির লুবেক শহরেই পিচ্ছিল রাস্তায় কয়েক ঘণ্টার মধ্য শতাধিক এবং হামবুর্গে ৭৫ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সড়ক পিচ্ছিল হওয়ায় সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লোফভেনে গাড়িটি উপসালা শহরের সন্নিকটে দুর্ঘটনায় পড়ে। তবে প্রধানমন্ত্রীর কোনো ক্ষতি হয়নি। স্টকহোমে তুষারপাতের কারণে একই সঙ্গে অন্তত ২০টি গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়।
প্রচণ্ড ঠান্ডায় অস্ট্রিয়ার পুলিশ কপাল থেকে থুতনি ঢেকে চলাফেরার বিষয়ে নতুন নির্দেশ জারি করেছে। ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির আইন অনুযায়ী নেকাব ও বোরকা পড়ে বা মুখমণ্ডল ঢেকে চলাফেরায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এখন প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে মুখমণ্ডল ঢেকে চলাফেরার বৈধতা পেয়েছে।
বাল্টিক অঞ্চলের দেশ লিথাউনে প্রচণ্ড ঠান্ডায় তিন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। দেশটির তাপমাত্রা এখন সর্বনিম্ন মাইনাস ২৪ সেলসিয়াস। ফ্রান্সে ঠান্ডায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের মেয়র ভিনশেন্ট ড্য ভলফ শহরটির গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
গ্রিসের উত্তরাঞ্চলে প্রদেশ মেসিডোনিয়াতে ঠান্ডার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বুলগেরিয়াতে ঠান্ডার কারণে বহু মালবাহী গাড়ি সড়কে আটকা পড়েছে। ব্রিটিশ আবহাওয়া দপ্তরের প্রধান আবহাওয়াবিদ ফ্রাঙ্ক সাউন্ডেরস জানিয়েছেন এই সপ্তাহে ১৯৯১ সালের পর ইংল্যান্ড ওয়েলসে সর্বোচ্চ ঠান্ডা পড়বে। মূলত সাইবেরিয়ান বা আর্টিক বায়ুর প্রভাবে ইউরোপে তীব্র শীত পড়ছে।