তুষারে বিপর্যস্ত ব্রিটেনে মসজিদের দুয়ার গৃহহীনদের জন্য খোলা
ভয়াবহ হিমঝড়, তুষারপাতে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন মসজিদের দুয়ার গৃহহীনদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে।
সাইবেরিয়া থেকে ধেয়ে আসা বাতাসে রাতের গড় তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে চলে যাওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, ভয়াবহ এ ঠাণ্ডা দরিদ্র, গৃহহীন ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ওপর বড় ধরনের বিপদ বয়ে আনতে পারে।
ডব্লিউএইচও বলেছে, বৃদ্ধ, শিশু ও যাদের ঠাণ্ডাজনিত অসুখ আছে, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি কিংবা যাদের শারীরিক বা মানসিক সীমাবদ্ধতা আছে, তারা এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।
তুষারপাতের কারণে শুক্রবার দক্ষিণপূর্ব ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ ওয়েলসে আবহাওয়া দফতর সর্বোচ্চ সতর্কতা সঙ্কেত জারি করেছে।
এছাড়া যুক্তরাজ্যে ইয়েলো ও অ্যামবার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সাধারণত আবহাওয়া পরিস্থিতি সামনের কয়েকদিন মারাত্মক রূপ নেয়ার আশঙ্কা থাকলে ইয়েলো সতর্কতা জারি করা হয়। আর অ্যামবার সতর্কবার্তায় সম্ভাব্য খারাপ আবহাওয়ায় নাগরিকদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখানো হয়।
ম্যানচেস্টারের মাক্কি মসজিদের ট্রাস্টি রাবনাওয়াজ আকবর বলেন, আবহাওয়া পরিস্থিতি মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে। এজন্যই ভেবে দেখেছি, কেনো গৃহহীনদের সাহায্যে আমরা এগিয়ে আসবো না?
গত কয়েকদিন ধরে স্বেচ্ছাসেবকরা নামাজের জায়গায় তাবু খাটিয়ে গৃহহীনদের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। আশ্রয়হীনদের জন্য মসজিদে গোসলের ব্যবস্থাও করেছেন তারা।
তুষারপাতে আক্রান্ত গৃহহীনদের জন্য ভাত ও মুরগীর মাংসসহ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।
আকবর বলেন, ম্যানচেস্টারে গৃহহীনদের সংখ্যা বাড়ছে। গত আট বছর ধরে কৃচ্ছ্রতানীতি গ্রহণ করায় আশ্রয়হীনদের অনেক সেবা বন্ধ রয়েছে। এতে তাদের খোলা আকাশের নিচে ঘুমাতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এসব লোকদের কেবল থাকার জন্য একটি ছাদের ব্যবস্থা করলেই চলবে না। তাদের অনেকের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। অনেকে গৃহনির্যাতনের শিকার, কেউ মাদকাসক্ত। এছাড়াও কাগজপত্রহীন অভিবাসীরাও রয়েছেন। এদের জন্য সরকারের কোনো তহবিল নেই।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মসজিদে ঘুমিয়ে ছিলেন মাদকাসক্ত জেমি। তিনি বলেন, আমি একজন মাদকাসক্ত। সারাজীবনে কখনও আমি মসজিদে থাকিনি। তারা আমাকে খাবার ও পানীয় দিয়েছেন। স্থানীয় কাউন্সিল যেটা আমাকে দিতে পারতো না, তারা সেটাই আমাকে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমে মসজিদকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরা হয়। এতে মসজিদ সম্পর্কে একটা গৎবাঁধা ধারনা আমাদের ভেতরে জন্ম নেয়।
কেবল মাক্কি মসজিদই নয়, লিডস গ্র্যান্ড মসজিদ, ওল্ডহ্যাম মসজিদ, ফিন্সবুরি মসজিদ, ক্যান্টারবুরি মসজিদ ও ডাবলিন’স ক্লোন্সকিয়াগ মসজিদও এই বৈরী আবহাওয়ায় তাদের দরজা গৃহহীন ও অসহায়দের জন্য খুলে দিয়েছে।