টিপাইমুখে বাঁধ হলে মরুভূমি হবে বৃহত্তর সিলেট

tipaiমুহাম্মদ রুহুল আমীন নগরী: ১০ মার্চ টিপাইমুখে বাঁধ র্নিমাণের প্রতিবাদে লংমার্চ দিবস। ১৩ তম বার্ষিকী। ২০০৫ সালের ৯ ও ১০ মার্চ ‘ভারতীয় নদী আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি’র ব্যানারে মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের নেতৃত্বে রাজধানীর মুক্তাঙ্গণ থেকে সিলেটের জকিগঞ্জ অভিমুখে ঐতিহাসিক লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে টিপাইমুখে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিণত করতে চায়। দু’দেশের বিশাল জনগোষ্ঠির প্রবল আপত্তি, আন্দোলন, প্রতিবাদ ও প্রচন্ড ক্ষোভকে পাত্তা না দিয়েই ভারত এক তরফা ভাবে সুরমা কুশিয়ারার উৎস মুখ বরাক নদীতে টিপাইমুখ ড্যাম নির্মাণের চূড়ান্ত আয়োজন সম্পন্ন করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টিপাইমুখে বাঁধ নির্মিত হলে ২০৫০ সালের মধ্যে বৃহত্তর সিলেট মরুভূমি হয়ে যাবে। হুমকির মুখে পড়বে বৃহত্তর ভাটি এলাকার প্রায় আড়াইকোটি মানুষের জীবনযাত্রা। ফলে পাল্টে যাবে নদীমাতৃক বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য। বিশেষজ্ঞদের মতে এই বাঁধ সর্বনাশা আরেক ফারাক্কার ন্যায় অভিশপ্ত মরণফাদঁ! তাদের মতে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মিত হলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কৃষি উৎপাদন মারাত্মক হ্রাস পাবে’। সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে এই বাঁধ নির্মাণের ফলে ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সুরমাও ১১১ কিলোমিটার দীর্ঘ কুশিয়ারার নাব্যতা হারিয়ে যাবে। ভারত শুকনো মওসুমে পানি আটকিয়ে এবং বর্ষায় পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদেরকে মারতে চায়। ভারতের ফারাক্কা বাঁধ যখন বাংলাদেশের মানুষের জীবন-মরণ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, তখন মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৬ সালে লংমার্চ করেন ফারাক্কা অভিমুখে। তাঁর লংমার্চের উদ্দেশ্য ছিল প্রথমত, ফারাক্কা বাঁধের ফলে ভাঁটির দেশ বাংলাদেশের সৃষ্ট পরিস্থিতির প্রতিবাদ করা।
দ্বিতীয়ত, ফারাক্কার ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে দেশের জনগণকে সচেতন ও সংগঠিত করা।
তৃতীয়ত, “ভারতের পানি আগ্রাসন”-এর ব্যাপারে বিশ্ব জনমতকে আকৃষ্ট করা। ফারাক্কা আর টিপাই বাঁধের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। উভয় কারণেই বাংলাদেশের অস্তিত্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তাই ফারাক্কার বিরুদ্ধে মাওলানা ভাসানীর লংমার্চের পর ঐতিহাসিকভাবেই টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে আরেকটি লংমার্চ অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। ২০০৫ সালে রাজধানী থেকে সিলেটের জকিগঞ্জ অভিমুখে লংমার্চ করে এই ঐতিহাসিক দায়িত্বটি পালন করলেন মাসিক মদীনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। সেদিন মাওলানা খানের ডাকে প্রবাসীদের একটি কাফেলা সহ দলমত নির্বিশেষে দেশের প্রায় ৩০টি ছোট বড় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ টিপাইমুখ অভিমুখের লংমার্চে যোগদান করেছিল। টিপাইমুখ বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথা ব্যক্ত করে সেদিন বলা হয়েছিল; সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে এই বাঁধ নির্মাণের ফলে ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সুরমাও ১১১ কিলোমিটার দীর্ঘ কুশিয়ারার নাব্যতা হারিয়ে যাবে, মরুময় হবে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বিশাল এলাকা। টিপাইমুখে বাঁধ নির্মিত হলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কৃষি উৎপাদন মারাত্মক হ্রাস পাবে’।
অনুসন্ধানে জানা গেছে ১৯৯০ সালে ভারত প্রথম টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। মনিপুর রাজ্যের জনগণ ও বাংলাদেশের প্রতিবাদের কারণে ২০০৬ সালের ২৫ নভেম্বর এই বাঁধ নির্মাণ থেকে কিছুটা পিছু হটে ভারত। কিন্তু বাধঁর্নিমাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি ভারত।
ঊল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সঙ্গে ফারাক্কা নিয়ে ভারত নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করে। এর মধ্যে ১৯৭২ সালে গঠিত হয় ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন (জে আর সি)। ১৯৭৪ সালের মুজিব ইন্দিরা যুক্ত ইশতিহারে বলা হয়েছিল, ফারাক্কা বাঁধ সম্পূর্ণরূপে চালু করার আগে শুষ্ক মৌসুমে প্রাপ্ত পানির পরিমাণ নিয়ে ঊভয় পক্ষ যাতে সমঝোতায় আসতে পারে সে জন্য ভারত প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে ‘ফিডার ক্যানেল’ চালু করবে। তখন ওই শীর্ষ বৈঠকে আরো স্থির হয় যে, শুষ্ক মৌসুমের পানি ভাগাভাগির পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে কোন চুক্তিতে উপনীত হওয়ার আগে ফারাক্কা বাঁধ চালু করা হবেনা। সমানভাবে দুই দেশের স্বার্থ রক্ষা করা হবে।’ যুক্ত ইশতিহারের এই সিদ্ধান্ত অনুসারে ভারত ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৪১ দিনের জন্য ফারাক্কা বাঁধ চালু করেছিল।
ভারত বাংলাদেশের কাছে ওয়াদা করেছিল, ৪১ দিনের নির্ধারিত সময়ে ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার কিউসেক পানি ফিডার ক্যানেল দিয়ে হুগলী নদীতে নিয়ে যাবে। কিন্তু ৪১ দিনের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও ভারত পানি প্রত্যাহার অব্যাহত রাখে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে কোন সমঝোতা বা চুক্তি না করেই ১৯৭৬ সালের শুষ্ক মৌসুমে একতরফাভাবে গঙ্গার পানি নিজ দেশের অভ্যন্তরে প্রত্যাহার করে চুক্তি ভঙ্গ করে। ফলে ফারাক্কার পানি বন্টন নিয়ে শুরু থেকেই ভারতের সাথে বাংলাদেশের মনোমালিন্য চলতেই থাকে। মওলানা ভাসানী লংমার্চের আগে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির কাছে চিঠি লিখে ও এই বাঁধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ইন্দিরা গান্ধির কাছে লিখিত চিঠিতে সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা আর ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবের ফলে সৃষ্ট দুর্ভোগের কথা জানিয়ে বলা হয়, ‘বিশ্বের অন্যতম মহাপুরুষ মহাত্মা গান্ধিকে তোমার দেশের বিশ্বাসঘাতক নথুরাম গডসে হত্যা করিয়া যে মহাপাপ করিয়াছে তাহার চেয়ে ও জঘন্য পাপ তোমার দেশের দস্যুরা করিতেছে।’ তিনি চিঠিতে আরো উল্লেখ করেন, ‘আমার আন্তরিক আশা, তুমি স্বচক্ষে দেখিলেই ইহার আশু প্রতিকার হইবে এবং বাংলাদেশ ও হিন্দুস্থানের মধ্যে ঝগড়া-কলহের নিষ্পত্তি হইয়া পুনরায় বন্ধুত্ব কায়েম হইবে। ফারাক্কা বাঁধের দরুণ উত্তরবঙ্গের উর্বর ভূমি কিভাবে শ্মশানে পরিণত হইতেছে তাহা ও স্বচক্ষে দেখিতে পাইবে।’
এই চিঠির কোনো উত্তর না পেয়েই মওলানা ভাসানী জীবন সায়াহ্নে এসে লংমার্চের আহ্বান করেন। পরবর্তিতে যদিও ১৯৭৪ সালের ৪মে ইন্দিরা গান্ধি সে চিঠির উত্তর দিতে গিয়ে ‘ব্যথিত ও বিস্মিত’ হন। ১৬ মে‘কে লংমার্চের দিন হিসেবে বেছে নেয়ার পেছনে কারণ যে বিষয়টি কাজ করেছিল তা হলো, ১৯৭৪ সালের ওই দিনটিতেই স্বাক্ষরিত হয়েছিল মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতিসংঘের শরণাপন্ন হলে ১৯৭৬ সালের ২৬ নবেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একটি সর্বসম্মত বিবৃতি গৃহীত হয়, যাতে অন্যান্যের মধ্যে ভারতকে সমস্যার একটি ন্যায্য ও দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় বসার নির্দেশ দেয়া হয়। জাতিসংঘের এই নির্দেশনার পর পানি নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা এবং চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও শর্ত রাখছেনা ভারত।
নদী মাতৃক বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম-বদ্বীপ অঞ্চল। ৫৮টি আন্তর্জাতিক নদীসহ কমপে ২৩০টি নদ-নদী বিধৌত একটি প্লাবন ভূমি। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদী গুলোর ঊৎপত্তি ৩টি মিয়ানমার থেকে এবং ৫৫টির উৎপত্তি ভারত থেকে। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সম্পাদিত গঙ্গার পানি বন্টন নিয়ে বাংলাদেশের সাথে ৩০ সালা চুক্তি অনুযায়ী ভারত পানি না দেয়ার ফলে এককালের প্রমত্তা পদ্মা ও খরগ্রোতা যমুনা এখন পানি শূন্য। এদেশের অনেক নদ-নদী শুকিয়ে গেছে। মরেগেছে অনেক। বিলুপ্তির পথে আরো প্রায় ৫০ নদী। বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধির ফলে দেশের প্রায় এক-চর্তুথাংশ স্থলভাগ পানিতে ডুবে যায়, আবার শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ নদীতে প্রবাহ হ্রাস পাওয়ার ফলে পানির দুর্র্ভিক্ষ দেখা দেয়। উভয় পরিস্থিতিতেই আমাদের জনজীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। সম্প্রতি বাংলাদেশের হাওর অধ্যুষিত অঞ্চল বলে খ্যাত দেশের ৭টি জেলা যথাক্রমে সিলেটের-৪৩টি, সুনামগঞ্জের-১৩৩টি, হবিগজ্ঞের-৩৮টি, মৌলভী বাজারের ৪টি, নেত্রকোনার-৮০টি, কিশোগজ্ঞের-১২২টি ও বি.বাড়ীয়া জেলার-৩টি হাওরের সবকটিই ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে যায়।
ভারত জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নদী ব্যবহারের কনভেনশন (১৯৯৭)সহ কোন আইনই তোয়াক্কা করছে না। বাংলাদেশ থেকে ১৭ কিলোমিটার উজানে ভারত শুধু গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধ র্নিমাণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, আন্তর্জাতিক সকল নিয়ম-নীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে গত ২৮ এপ্রিল (২০১০) টিপাইমুখ মাল্টিপারপাস বাঁধ তৈরি শুরু করার জন্য বাঁধ তৈরির সাথে সংশ্লিষ্ট ভারতের হাইড্রো ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার কর্পোরেশন (এনএইচপিসি), টালুজ জলবিদ্যুৎ নির্গম লিমিটেড (এসজেভিএন) এবং মণিপুর সরকারের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এনএইচপি লিমিটেডের সিএমডি শ্রী এস.কে গ্রেস, এসডেভিএন লিমিটেডের সিএমডি শ্রী এইচ কে শর্মা, মণিপুর রাজ্য সরকারের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি শ্রী এল পি গনমি এ স্মারকে স্বাক্ষর করেন। ১৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এ প্রকল্পটি মণিপুর রাজ্যের চূড়াচাঁদপুর জেলায় স্থাপিত হবে। ভারত-বাংলাদেশে অভিন্ন ৫৪টি নদীর মধ্যে গঙ্গা ছাড়া বাকি ৫৩টির পানি বণ্টন চুক্তি আদৌ সম্ভব হবে কি না, হলেও কত বছর লেগে যাবে, চুক্তি মতো পানি পাওয়া যাবে কিনা এসব প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারছে না। জলবিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সামান্যতম লাভবান না হলেও এ বাঁধের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক লংমার্চ করে বিশ্ব বিবেকের নজর কেড়েছিল।
টিপাই বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের পরিবেশবাদীরা। আলেম উলামাসহ বাংলাদেশের সচেতন, দেশপ্রেমিক জনগণ টিপাইমুখ অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচিও পালন করেছেন। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশবাদি সংগঠন সোচ্চার হচ্ছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, চরমোনাইর পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন এ বিষয়ে সিলেটে পৃথক পৃথকভাবে বিশাল সমাবেশ করেছে। এছাড়া জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ১৯৯৫ সাল থেকে বরাকবাঁধ বিরোধী আন্দোলন করে আসছে। ২০০৫ সালে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ভারতের নদী আগ্রাসন প্রতিরোধে টিপাইমুখ অভিমুখী লংমার্চের ডাক দিয়েছিলেন। গত ১ এপ্রিল ২০১১ সিলেটে বিএনপির ডাকে সকাল সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়। এবং ৮ ডিসেম্বর জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেট থেকে জকিগঞ্জ অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করে। তবে স্মরণকালের সর্ববৃহত প্রভাব বিস্তারকারী আন্দোলন ছিল, মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের ৯ ও ১০ মার্চ ২০০৫ সালের লংমার্চ। তিনি রাজধানীর মুক্তাঙ্গন থেকে গাড়ির বহর নিয়ে আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেটে আসেন। পর দিন ১০ মার্চ সিলেট থেকে হাজারো গাড়ির বহর নিয়ে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর মতো জকিগঞ্জের পথে রওয়ানা হন। সেদিন মাওলানা খান বলেছিলেন, ভারতীয় নদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে শাহাদাত বরণ করবো। তবুও পানি দস্যুদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। তিনি সে দিন আমাদেরকে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর ফুরাত নদীর তীরের নির্মমতার ইতিহাস স্মরণ করিয়ে বলেছিলেন, টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে, আমাদের ন্যায্য হিস্যা আদায়ের সংগ্রামে আমি মৃত্যু বরণ করলে শাহজালালের মাঠিতেই যেনো আমার দাফন হয়।’
লাখো জনতার উপস্থিতিতে স্মরণকালের এ বৃহৎ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথী (র.)। এর আগে ১৯৯৫ সালের ৫ এপ্রিল সিলেট জেলা জমিয়তের উদ্যোগে সর্বপ্রথম বারঠাকুরিতে বরাক বাঁধের বিরুদ্ধে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বরাক নদীতে এই বিশাল বাঁধ নির্মাণের ঊদ্যোগ এবং পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনায় আমরা ঊদ্বিগ্ন। কারণ বরাক নদী বাংলাদেশে যেখানে বিভক্ত হয়েছে সুরমা ও কুশিয়ারা হিসেবে, সেখান থেকে একশ কি.মি. উজানে নির্মাণাধীন এই বাঁধটি অবস্থিত। টিপাইমুখ বাঁধটি যে এলাকায় নির্মিত হচ্ছে সেটি মারাত্মক ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। এ বাঁধের বিরুদ্ধে যে শুধু বাংলাদেশের জনগণই প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে তা নয়। বরং এ বাঁধের বিরুদ্ধে ভারতের জনগণও সোচ্চার। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ মণিপুরের জনগণ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বরাবরে স্মারকলিতে উল্লেখ করেন যে, আমরা এই স্মারকলিপিতে স্বাক্ষরকারীগণ আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ১৯৮০ সালের শেষ দিক থেকে বছরের পর বছর টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে এ ধরনের বহু স্মারকলিপি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে প্রদান করা হয়েছে। মনিপুরবাসী স্মারকলিপিতে আরো বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ বাতিল করুন, বরাক নদীকে মুক্তপ্রবাহিত হতে দিন।’ ভারতের নদী আগ্রাসনের মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের সীমাহীন শৈথিল্য ও অনিহার প্রেক্ষিতে দেশের সামগ্রিক স্বার্থ রায় দেশপ্রেমিক জনগণকেই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। আর সে আগ্রাসী অপতৎপরতা রোধে চাই সম্মিলিত প্রতিরোধ, গড়ে তোলতে হবে জাতীয় ঐক্য।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button