ভারতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় নিহত বেড়ে ৩১
ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর জেলায় শনিবার থেকে শুরু হওয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের দাঙ্গা নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন এবং কারফিউ জারি করা সত্ত্বেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৩১ জন এবং বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দাঙ্গার ঘটনায় ভারতীয় জনতা পার্টির চার বিধায়কসহ ছয় রাজনৈতিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দাঙ্গায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে। মুজাফফরনগরের ঘরে ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছেন সেনাসদস্যরা। রাজ্যের শীর্ষপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা কমল সাক্সেনা জানান, দাঙ্গাকারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে দাঙ্গায় উসকানি ও গুজব ছড়ানোর কাজ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে সেনাবাহিনীর পে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ কষ্টকর হয়ে পড়ছে।
মুজাফফরনগরের দাঙ্গা সম্পর্কে ইউপি মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের সাথে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তিনি সহিংসতার নিন্দা করেন এবং নিরপরাধ লোকজনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তা ছাড়া তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে বলে আশ্বাস দেন। উত্তর প্রদেশের রাজ্যপাল বি এল যোশি দিল্লিকে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন তাতে উত্তর প্রদেশের ব্যর্থতার কথা জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব আশ্বস্ত করেছেন, নতুন করে অশান্তি রুখতে রাজ্য প্রশাসন সব ব্যবস্থ নেবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও শান্তি বজায় রাখতে অনুরোধ করেছেন তিনি। গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৯০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। দাঙ্গা ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে প্রায় হাজার জনের বিরুদ্ধে। গোটা উত্তর প্রদেশজুড়ে হাই অ্যালার্ট জারি রয়েছে। জারি রয়েছে শুট অ্যাট সাইট অর্থাৎ দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ। গত রাতে মুজাফফরনগর শহরের পাশের জেলা শ্যামলি ও মিরুতে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। মুজাফফরনগর রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে ১২৫ কিলোমিটার উত্তরে। দাঙ্গার প্রধান শিকার ওযাজিদপুর গ্রাম থেকে লোকজন সরিয়ে নেযার সময় একদল সেনাসদস্যের ওপর হামলা চালায় দাঙ্গাকারীরা। এ সময় সেনাবাহিনী হামলাকারীদের ওপর গুলি চালায় তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। গত মাসে সংঘটিত তিন যুবকের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ঘটনা শুরু হয়। দাবি করা হচ্ছে, এক নারীকে হেনস্তা থেকে রার চেষ্টার সময় ওই যুবকদের খুন করা হয়। এই খুনের বিচারের দাবিতে শনিবার নাগলাবাধোদ এলাকায় কয়েক হাজার হিন্দু কৃষক এক সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে ফেরার পথে তারা মুসলমানদের ওপর হামলা চালালে শনিবার রাতে এ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তর প্রদেশ সরকারের সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী আজম খান অভিযোগ করেছেন, শনিবারের সমাবেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য রাখা হয়। রাজ্য বিধান সভার বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টির) দলীয় চার সদস্য কৃষকদের ওই মহাপঞ্চায়েত সভায় উত্তেজনামূলক বক্তব্য দেন, এমন অভিযোগও উঠেছে।
শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা অরুণ কুমার জানান, বহু মানুষ বন্দুক, তলোয়ার ও ছুরি নিয়ে ওই সমাবেশে অংশ নেয়। কাওয়ালে গত মাসে ওই যুবকেরা নিহত হওয়ার পর থেকে বড় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে রাজ্য সরকার। এই কারণে হিন্দু কৃষকদের ওই সমাবেশ আইনত অবৈধ ছিল। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের নেতারাই ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।