গুপ্তচর ইস্যু
সম্পর্কে বিপজ্জনক মোড় ব্রিটেন-রাশিয়ার
ইংল্যান্ডের স্যালসবেরি শহরে গত ৪ মার্চ সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল এবং তার মেয়েকে বিষাক্ত নার্ভ গ্যাস প্রয়োগে হত্যাচেষ্টার পর ব্রিটেন এবং রাশিয়ার সম্পর্ক বিপজ্জনক মোড় নিয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে সাবেক রুশ গুপ্তচর ও তার মেয়েকে হত্যাচেষ্টার পেছনে ‘সম্ভবত মস্কোই জড়িত’ বলে মন্তব্য করেছেন।
সোমবার পার্লামেন্ট সদস্যদের উদ্দেশে দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, স্ক্রিপাল ও তার মেয়ের ওপর যে নার্ভ এজেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা রাশিয়ায় বানানো সামরিক ঘরানার। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে রুশ রাষ্ট্রদূতকে তলবও করেছে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের সাবেক রুশ গোয়েন্দাকে বিষপ্রয়োগের সঙ্গে মস্কোকে জড়ানোর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। তিনি বলেছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে পার্লামেন্টে এ বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা ছিল সার্কাস।
স্ক্রিপাল গোপনে ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থা ‘এমআই সিক্স’কে তথ্য সরবরাহ করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন। এরপর রাশিয়ায় তার ১৩ বছরের কারাদন্ড হয়েছিল। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে বন্দি গুপ্তচর বিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় পেয়েছিলেন তিনি। গত ৪ মার্চ ইংল্যান্ডের স্যালসবেরির উইল্টশায়ারে একটি পার্কের বেঞ্চে সাবেক এই গুপ্তচর ও তার মেয়ে ইউলিয়াকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। স্ক্রিপালের মেয়ে ইউলিয়া মস্কোতে বসবাস করলেও বাবাকে দেখতে তার নিয়মিত যুক্তরাজ্যে যাতায়াত ছিল। তাদের ওপর নার্ভ গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছিল বলে পরে পুলিশ নিশ্চিত করে।
গত এক সপ্তাহ ধরে তদন্তের পর সোমবার রাতে পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই বিষের উৎস রাশিয়া। তিনি হুমকি দিয়েছেন মঙ্গলবারের মধ্যে পুতিন সরকারের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা না পেলে রাশিয়াকে পরিণতি ভোগ করতে হবে। মঙ্গলবারের মধ্যে ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রতিক্রিয়া’ না পেলে যুক্তরাজ্য পক্ষত্যাগী সাবেক রুশ গুপ্তচরের ওপর হামলার ঘটনাকে মস্কোর ‘বেআইনি বলপ্রয়োগ’ হিসেবে বিবেচনা করবে বলেও জানিয়েছেন মে।
বাবা ও মেয়ের ওপর বিষাক্ত রাসায়নিক হামলায় ব্যহৃত নার্ভ এজেন্টটি শনাক্ত করা হয়েছে, এটি নভিচক নামে পরিচিত বলে জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘হতে পারে এটি (হামলা) আমাদের দেশের বিরুদ্ধে রুশ সরকারের সরাসরি পদক্ষেপ, কিংবা হতে পারে তারা (রাশিয়া সরকার) ক্ষতিকর ও ভয়াবহ মাত্রায় ধ্বংসাত্মক এই নার্ভ এজেন্টের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, যার ফলে এটি অন্য কারও হাতে চলে গেছে।’
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন এ নিয়ে যুক্তরাজ্যে নিয়োজিত রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছেন। মস্কোকে এ-সংক্রান্ত জবাব আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রহিবিশন অব কেমিকেল উইপনস’র কাছে দিতে হবে বলে বরিস রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন।
সাবেক গুপ্তচরের ওপর রাসায়নিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য বিস্তৃত পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে মে জানিয়েছেন। রাশিয়ার কাছ থেকে ‘পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা’ না পেলে বুধবারেই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অব কমন্স’ থেকে নিষেধাজ্ঞাসহ ওই পাল্টা পদক্ষেপগুলো ঘোষিত হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হত্যাচেষ্টায় রাশিয়ার যোগসূত্র পাওয়া গেলে ব্রিটিশ সরকার মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং কূটনীতিক বহিষ্কার করাসহ একাধিক পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়ে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে সাবেক গুপ্তচর হত্যাচেষ্টাকে যুক্তরাজ্যের মাটিতে রাশিয়ার চালানো ‘রাষ্ট্র-পরিচালিত হামলা’ বলে ঘোষণা করবেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্য এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ের পর প্রথম রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক একেবারে তলানিতে এসে ঠেকবে বলে মন্তব্য পর্যবেক্ষকদের।