লন্ডন-মস্কো উত্তেজনা

uk-russiaযুক্তরাজ্য থেকে ২৩ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্য ও রাশিয়ার মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। পরস্পর অল্টিমেটাম এবং দোষারোপের কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিষয়টি নিয়ে এখন নানা মহলে আলোচনাও চলছে। প্রশ্ন উঠছে, যুক্তরাজ্য কেন এত কূটনীতিক একসঙ্গে বহিষ্কারের ঘোষণা দিল? থেরেসা মে বলেছেন, ওই ২৩ জন কূটনীতিক প্রকৃতপক্ষে গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাজ্য ছেড়ে যেতে হবে।
গত ৩০ বছরের মধ্যে এটিই লন্ডনের কূটনীতিক বহিষ্কারের সবচেয়ে বড় ঘটনা। এর মাধ্যমে আগামীতে যুক্তরাজ্যে রাশিয়ার গোয়েন্দাগিরি অনেকটাই কমে আসবে বলেও মনে করেন মে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়ার মালিকানাধীন কোনো সম্পদ ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যের নাগরিক বা এখানে বসবাসকারী কারও জীবন বা সম্পদ হুমকিতে ফেলার চেষ্টার প্রমাণ পেলে আমরা সেগুলোও জব্দ করব।’
জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া ব্রিটেনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “আমরা কাউকে আল্টিমেটাম দেই না; কেউ এমন ভাষায় কথা বলুক তাও আমরা সহ্য করব না।” নেবেনজিয়া গত বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, “তোলপাড় সৃষ্টি করা এই অভিযোগের আমরা বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ চাই। প্রমাণ ছাড়া আমরা এ ঘটনাকে বিবেচনায় নিতে পারি না।” কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনাকে ‘অদূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও হঠকারিতামূলক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে রাশিয়া।
এদিকে, পক্ষত্যাগী সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়ার ওপর নার্ভ গ্যাস হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার ২৩ কূটনীতিককে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার ‘সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র’ যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তের ‘সঙ্গে আছে’। যুক্তরাজ্যের মাটিতে সাবেক গুপ্তচরের ওপর হামলায় কীভাবে রাশিয়ার বানানো নার্ভ এজেন্ট ব্যবহৃত হল, মস্কো সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর মে কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘোষণা দেন বলে খবর বিবিসির। স্ক্রিপাল ও তার মেয়ের ওপর হামলার ঘটনায় কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া। ৭০ ও ৮০’র দশকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এ সিরিজের নার্ভ এজেন্টগুলো তৈরি করেছে। যেগুলো সবচেয়ে মারাত্মক নার্ভ এজেন্ট (উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক) হিসাবে বিবেচিত।
গত বুধবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে কূটনীতিকদের বহিষ্কারের ঘোষণার পর এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে লন্ডনের রুশ দূতাবাস। দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের যে ক্ষতি হলো তার দায় যুক্তরাজ্যকেই বহন করতে হবে।
আলেক্সান্ডার ইয়াকোভেঙ্কো এ ঘটনায় যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধেও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার ইয়াকোভেঙ্কো। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত পক্ষত্যাগী সাবেক রুশ গোয়েন্দা সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়েকে বিষ প্রয়োগে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় এর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দায়ী করেন থেরেসা মে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য এ ঘটনাকে হুমকি হিসেবেই বিবেচনা করছে। মঙ্গলবারের মধ্যে যদি তারা (রাশিয়া) কোনও যুক্তি দেখাতে না পারে তাহলে একে রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতা হিসেবে দেখা হবে। থেরেসা মে বলেন, এটি হয়তো আমাদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সরাসরি হামলা। অথবা দেশটির সরকার নিজের সামরিক বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে মঙ্গলবার মধ্যরাতের মধ্যে মস্কোকে এই ঘটনার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন থেরেসা মে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, যুক্তরাজ্যের কূটনীতিক বহিষ্কারের পদক্ষেপে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্কে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে? যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন’র রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাবেক অধ্যাপক জিল্লুর রহমান খান মনে করেন, যুক্তরাজ্য বুঝতে পেরেছে, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হবে। রাশিয়ার সঙ্গে কোনো কাজ হবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাজ্যের প্রতি নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি আছে বলে তিনি মনে করেন।
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘কানাডার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ভালো সম্পর্ক আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যদি ভালো সম্পর্ক বজায় থাকে, তাহলে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা অন্যদের প্রয়োজন নেই।’ আর এ কারণেই যুক্তরাজ্য এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button