কেউ থামায় না মৃত্যু, ধ্বংস ও বিভীষিকাময় যন্ত্রণার এই যুদ্ধ!
আট বছরে পা রেখেছে সিরীয় যুদ্ধ
আট বছরে পা রেখেছে সিরীয় যুদ্ধ। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই যুদ্ধ-সংঘাতে সাড়ে তিনলাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। গৃহহীন হয়েছে আরও কয়েক লাখ মানুষ। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মধ্য দিয়েই এক সময় সংঘাত শুরু হয়। টানা সাত বছর ধরে এই সংঘাত চলছে। শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়েছে সিরিয়া সংঘাত। সেখানে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না।
দীর্ঘদিনের এই সংঘাতের কারণে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সিরিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল। জঙ্গিরা বিভিন্ন স্থান দখল করে বেসামরিক নাগরিকদের জীবন-যাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের নাজেহাল করেছে। যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ি হারিয়েছে ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বেশি শরণার্থী সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
অর্থনৈতিক সমস্যা ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় আসাদ সরকারের প্রতি বেসামরিকদের ক্ষোভ শুরু হয়। ২০১১ সালে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে আসাদ বাহিনী বিক্ষোভকারীদের প্রতিহত করে। সরকার বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সে সময় কয়েকশ মানুষ নিহত হয়। বহু মানুষকে আটকও করা হয়।
জনগণের ক্ষোভ যখন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। সে সুযোগটাকেই কাজে লাগায় জঙ্গিরা। বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা নেয় আল কায়েদা, আইএসের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো।
পুরো সিরিয়াতেই সে সময় আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও পরিস্থিতি জটিল করতে আসাদ বাহিনী ছাড়াও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো একে অন্যের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
জাতিসংঘের এক হিসাব অনুযায়ী, সিরিয়ায় কয়েক বছরের যুদ্ধ-সংঘাতে ৪ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। সিরিয়ায় প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীই নিজেদের বাড়ি-ঘর হারিয়ে বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে সিরিয়ার প্রায় ৫৫ লাখ মানুষ দেশ থেকে পালিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে ৯৫ ভাগই তুর্কি, লেবানন, জর্ডান, ইরাক এবং মিসরে আশ্রয় নিয়েছেন।
বিদ্রোহী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে আটকা পড়েছেন প্রায় ৪ লাখ বেসামরিক নাগরিক। বিদ্রোহীদের হাত থেকে ওই এলাকার দখল নিতে প্রায় এক মাস ধরে অভিযান চালাচ্ছে সিরীয় সেনাবাহিনী। দেশটির প্রায় ১ কোটি শিশুর জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। প্রায় ৬০ লাখ শিশু যুদ্ধ-সংঘাতে বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে বা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। প্রায় ২৫ লাখ শিশু স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে।
২০১৭ সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিরিয়ার প্রায় এক তৃতীয়াংশ আবাসস্থল এবং অর্ধেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসা কেন্দ্র ধ্বংষ হয়ে গেছে।
অন্যদিকে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ও অন্যান্য যৌথ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দেশটির বিরোধীপক্ষের নারী-পুরুষ ও শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘ তদন্তকারীদল। গত বৃহস্পতিবার এই রোমহর্ষক প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, সিরিয়াযুদ্ধে সরকারবিরোধী সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ-শিশুর ওপর যে পরিমাণে নিপীড়ন চলছে তাকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের এক নগ্নচিত্র বলা যেতে পারে।
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের ৮বছর উপলক্ষে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনটি ৪৫৪ জন ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শী, আত্মীয়-স্বজন ও চিকিৎসকের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, শীঘ্রই প্রতিবেদনটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
জাতিসংঘ তদন্ত কমিশন প্রধান পাওলো পিনহিরো বলেন, আমাদের তদন্তেপ্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়াযুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রায় সকল পক্ষই ৭বছর ধরে বিভিন্নভাবে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক নৃশংস নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। আর সেখানে সবচেয়ে কম বয়সি ভুক্তভোগী মেয়েটির বয়স ছিলো মাত্র ৯ বছর।