বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি: আন্তর্জাতিক অনেক সুবিধা হারাতে হবে
ধাক্কা সামলাতে পারবে তো বাংলাদেশ
এইচ এম আকতার: উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক স্বীকৃতি পেলো বাংলাদেশ। খবরটি সম্ভাবনায় মনে হলেও সমস্যাও কম নয়। এটি আমাদের গৌরবের বিষয় বলে মনে হচ্ছে। একই সঙ্গে কিছু শঙ্কারও জন্ম দেয়। প্রশ্ন হচ্ছে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরুলে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেসব সুবিধা হারাবে, তার ধাক্কা সামলাতে পারবে তো বাংলাদেশ? কিন্তু আমরা এই অর্জন ধরে রাখতে পারবো তো? কারণ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভের পর আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমাদের বেশ কিছু সুবিধা আপনাআপনি বাতিল হয়ে যাবে। সূচকের উন্নয়ন ধরে রাখতে না পারলে আগের অবস্থায় ফিরে আসতে হবে বাংলাদেশকে।
জানা গেছে, এলডিসি থেকে বেরুলে অনেক বাণিজ্যিক সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। কিন্তু এসব সুবিধা প্রত্যাহৃত হলে বাংলাদেশের পণ্য ও সেবা আন্তর্জাতিক বাজারে অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবে। বাংলাদেশ সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মোটেও প্রস্তুত নয়। একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে গ্রাজুয়েশন করার পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সম্ভাব্য ২০৭ কোটি ডলারের বাণিজ্য ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে। তাই বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আবির্ভূত হওয়াটা এখন আর কোনো অলীক স্বপ্ন নয়, দিবালোকের মতো বাস্তব। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, এটা নিঃসন্দেহে আমাদের উৎসাহিত করে।
জানা গেলো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে সরকার নানাভাবে প্রচার করলেও এর নেতিবাচক দিক সম্পর্কে দেশের ব্যবসায়ীরা তেমন জানেন না। উন্নত দেশ হতে হলে আমাদের কি ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে তারও কোনো হিসাব নেই।
আমরা স্বীকৃতি পেয়েছি এটিই বড় মনে হচ্ছে। এর সাথে আমাদের ব্যবসায়ীদের নানা হিসাব নিকাশ রয়েছে। সরকারকে অনেক ছাড়ও দিতে হবে। অনেক দান অনুদান কমে যাবে। বিশ্ব উন্নয়ন অংশীদারিত্বে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। দেশের এনজিওগুলোর বৈদেশিক আয় অনেক কমে যাবে।
স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বেশ কিছু সুবিধা ভোগ করছিল। এগুলো আর পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে বাংলাদেশ পণ্য ও সেবা রফতানির ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) পেয়ে আসছিল ১৯৭৬ সাল থেকে। একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোটা সুবিধা এবং পরে জিএসপি পাচ্ছিল। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু হওয়ার পর থেকে দেশটি সব ধরনের কোটা সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর সীমিত পরিসরে জিএসপি প্রদান করা হচ্ছিল, কিন্তু কয়েক বছর আগে সেটিও স্থগিত করা হয়।
ইইউ এখনও শুল্কমুক্ত জিএসপি প্রদান করছে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার পর বাংলাদেশ ইইউ থেকে প্রাপ্ত জিএসপি হারাবে। এর পরিবর্তে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ইইউ জিএসপিপ্লাস সুবিধা চালু করবে। কিন্তু সেই সুবিধা পেতে হলে যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশের পক্ষে তা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। ফলে ইইউর দেয়া এই সুবিধা বাংলাদেশ কতটা ভোগ করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশে গ্র্যাজুয়েশনের পর বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে ঋণ গ্রহণকালে উচ্চ সুদ দিতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ অন্য ৪৭টি স্বল্পোন্নত দেশের মতোই তুলনামূলক স্বল্প সুদে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পাচ্ছিল। এই সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশকে বিপাকে পড়তে হবে, কারণ বাংলাদেশ এত দিন ইইউনিয়নভুক্ত ২৬টি দেশসহ কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, চীন এমনকি ভারত থেকেও বাণিজ্যিক সুবিধা পাচ্ছিল। এই বাণিজ্যিক সুবিধার কারণেই মূলত বাংলাদেশ এত দিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভালো করে আসছিল।
উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে তিনটি আন্তর্জাতিক মান বা সূচকের মধ্যে অন্তত দুটিতে সাফল্য অর্জন করতে হয়। এগুলো হচ্ছে, নির্দিষ্ট পরিমাণ মাথাপিছু গড় জাতীয় আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকি বা ভঙ্গুরতা সূচক। বাংলাদেশ মাথাপিছু গড় জাতীয় আয়ের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের নির্ধারিত হার অনুযায়ী মাথাপিছু জাতীয় আয়ের ভিত্তিতে নি¤œমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছে। এমনকি অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার সূচকেও বাংলাদেশের অগ্রগতি সন্তোষজনক। তাই এ মুহূর্তে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেসব সুবিধা হারাবে, তার ধাক্কা সামাল দিতে পারবে তো? আমাদের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে বিএনপি শাসনামলে এম. সাইফুর রহমান অর্থমন্ত্রী থাকাকালে একবার বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের করে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে সব দিক বিবেচনা করে সেই উদ্যোগ বাতিল করা হয়। কাজেই এখন আমরা যে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরুতে চাচ্ছি, সেটা কতটা টেকসই হবে, তা বিবেচ্য বিষয় বটে।
গত ১০ মার্চ রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে বাংলাদেশকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বাংলাদেশ এখনও সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত নয় বলেই মনে হচ্ছে। ইউএনডিপি’র আবাসিক সমন্বয়কারী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে আসছে, এটা অবশ্যই একটি ভালো সংবাদ। কিন্তু এজন্য যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, তা নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাবে। সেই অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে পণ্য ও সেবা রফতানি করতে হলে প্রতিটি পণ্যের ওপর গড়ে ছয় দশমিক সাত শতাংশ শুল্ক বাড়বে। এটা বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। এতে বছরে বাংলাদেশকে ২৭০ কোটি ডলার শুল্ক দিতে হবে। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশ থেকে রফতানি করা পণ্য ও সেবাকে বাড়তি প্রতিযোগিতায় ফেলবে।
বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে মোট এক হাজার ৩০০টি পণ্য রফতানি হয়। কিন্তু একমাত্র তৈরি পোশাক শিল্পজাত পণ্য রফতানি থেকে আসে মোট রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশ। রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণ অনেক পুরোনো দাবি হলেও এর প্রতি কেউই তেমন একটা কর্ণপাত করছে না। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ভিয়েতনাম, ভারত ও চীনের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক রফতানি ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ যদি শুল্ক সুবিধা হারায়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে বাধ্য।
এখানে আরও একটি প্রসঙ্গ আমাদের মনে রাখতে হবে, তা হলো বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আহরিত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন উদ্যোক্তা যদি নিজ দেশে পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে তা ইইউর কোনো দেশে রফতানি করে, তাহলে তাকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে। কিন্তু সেই উদ্যোক্তা যদি বাংলাদেশে পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে, তা ইইউভুক্ত কোনো দেশে রফতানি করে, তাহলে তাকে কোনো শুল্ক দিতে হবে না। এই সুবিধা কাজে লাগানোর জন্যই মূলত বিদেশি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য কিছুটা আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীও তাদের এখানে শিল্পকারখানা স্থাপনে উৎসাহিত করে। কিন্তু মূল বিষয়টি উন্নত দেশ থেকে জিএসপি পাওয়া। বাংলাদেশি পণ্য যদি আন্তর্জাতিক বাজারে জিএসপি-সুবিধা বঞ্চিত হয়, তাহলে বিদেশি উদ্যোক্তারা এখানে শিল্পকারখানা স্থাপনে আগ্রহী নাও হতে পারে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে জিএসপি সুবিধা পেতে অনেক স্বল্পোন্নত দেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছে। অনেকে বিনিয়োগও করেছে। তাদের ধারণা বাংলাদেশ উন্নত দেশ হলে জিএসপি সুবিধা পাবে না। এতে করে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছি পড়ে যাবে বাংলাদেশ। এতে করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। তাই তারা সে ঝুঁকি নিতে চান না। তাছাড়া যেসব দেশে জিএসপি সুবিধার জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে তারাও তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে পারে। এতে করে অনেক শ্রমিক বেকার হতে পারে।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেও স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে যেসব সুবিধা পেত, তা ২০২৪ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান যাচাই করা হবে। এই সময় টেকসই উন্নয়ন ধরে রাখতে পারলেই কেবল চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কাজেই আগামী ছয় বছর আমাদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেন, এই ছয় বছর বাংলাদেশকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতি বিশেষ মনোযোগী হতে হবে। একই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারসাধনের ওপর জোর দিতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আইনি সুরক্ষা দিতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নে এনজিওদের সম্পৃক্ত করতে হবে। সভায় জানানো হয়, এর আগে যেসব দেশ এলডিসির কাতার থেকে বেরিয়ে এসেছে, তাদের প্রায় সবাই ছোট দেশ এবং তাদের উৎপাদনশীলতা কম। এলডিসি দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার পর তাদের প্রবৃদ্ধি যেমন কমেছে, তেমনি রফতানি, বিদেশি সহায়তা ও রেমিট্যান্স প্রবাহও হ্রাস পেয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ধরে রাখতে হলে প্রতিটি ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিটি খাতই এখন মারাত্মকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। দিন দিনই অবস্থার অবনতি ঘটছে। কোনোভাবেই এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো যাচ্ছে না। বর্তমান এসডিজি (সাসটেইন্যাবল ডেভেলপমেন্ট গোল) বাস্তবায়িত হচ্ছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হবে। এসডিজির একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে উন্নয়নের সুফল থেকে কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না। কিন্তু আমাদের দেশে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে, তার সুফল কি সবাই সমতা বা ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভোগ করতে পারছে? দেশে মধ্যবিত্ত পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে বলে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছিল। এতে বলা হয়, দেশে দুই দশক আগে মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারের সংখ্যা ছিল ১২ শতাংশ, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশ। কিন্তু এই মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এটা কি বৈধ পথে হচ্ছে, নাকি দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে হচ্ছে? স্বাধীনতার আগে এ দেশের মানুষের মধ্যে বিত্তবান ও বিত্তহীনের মাঝে বিরাট ব্যবধান বিদ্যমান ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা কায়েম করা। কিন্তু বর্তমানে দেশে বিত্তবান ও বিত্তহীনের মাঝে বৈষম্য অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। এটা কি আমাদের কাম্য ছিল? বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কিন্তু সেই প্রবৃদ্ধির সুবিধা কি সাধারণ মানুষ তাদের ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভোগ করতে পারছে? সেটি না পারলে সে ধরনের প্রবৃদ্ধি আমাদের জন্য কতটা কাম্য হতে পারে?
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করতে যাচ্ছে। এটা অবশ্যই আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করবে। কিন্তু সেইসঙ্গে অনেক কিছু নিয়েই আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সেইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য আমরা মোটেও প্রস্তুত নই। এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষ রাখা প্রয়োজন, তা হলো উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করাটাই বড় কথা নয়, সেই মর্যাদা টিকিয়ে রাখাটাই বেশি জরুরি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কম দেশই স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করতে পেরেছে। যেসব দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে, তাদের মধ্যে কয়েকটি দেশ আবার তাদের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা হারিয়ে আগের অবস্থানে চলে এসেছে। কাজেই আমাদের বিষয়টি খেয়াল রাখা দরকার।