যে সাতটি দেশে মার্কিন সেনারা সবচেয়ে বেশি তৎপর

USAবিশ্বের ১৮০টি দেশে মার্কিন সামরিক তৎপরতা রয়েছে। প্রায় দুই লক্ষ কর্মকর্তা নিয়োজিত রয়েছেন নানা ধরনের কাজে। কিন্তু সাতটি দেশের সংঘাতের সাথে তাদের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা সম্প্রতি খবর দিয়েছে।
১. আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন সৈন্য সংখ্যা ১৩,৩২৯ জন। ২০১১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটন ডিসির ওপর হামলার পর তালেবানের সাথে লড়াই করার জন্য এদের পাঠানো হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটি হচ্ছে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অফিস থেকে কংগ্রেসের জন্য তৈরি করা এক রিপোর্টে বলা হয়েছে: “মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানে মোতায়েন থাকার প্রয়োজন এই কারণে যে সেই দেশকে নিরাপদ আশ্রয় বানিয়ে সন্ত্রাসীরা যেন আবার যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা চালাতে না পারে।”
আমেরিকান সৈন্যরা আফগানিস্তানে আল-কায়েদা, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী, তালেবান এবং তার বিভিন্ন উপগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে।
২. ইরাক
ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করার সামরিক সাফল্যের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে তার মূল লক্ষ্যে পরিবর্তন আনছে। লড়াই থেকে সরে এসে তারা তাদের সাফল্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কংগ্রেসে মার্কিন সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র আইএস-এর উপগোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলা অব্যাহত রাখবে।
এর কারণ হচ্ছে প্রাণঘাতী হামলার চালানোর ক্ষমতা এই দলগুলোর রয়েছে। এরা ইরাকের বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে বড় হুমকি।
ইরাকে লড়াইয়ের পাশাপাশি মার্কিন সামরিক বাহিনী ইরাকি বাহিনী, কুর্দি পেশমার্গা বাহিনীকেও অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
৩. সিরিয়া
যুক্তরাষ্ট্র তার অনুগত সামরিক জোটকে নিয়ে ২০১৭ সালে ইরাকে অভিযান চালিয়ে আইএস-এর কবল থেকে ৪৫ লক্ষ লোককে মুক্ত করে। এর পর থেকে আইএস ইরাক এবং সিরিয়ায় তার দখলে থাকা ৯৮% ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হারায়।
সিরিয়ায় মার্কিন বিমান হামলা
সিরিয়ায় এখন ১৫০০ মার্কিন সৈন্য তৎপর রয়েছে। এরা সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স, এসডিএফ-কে নানা ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলছে, এসব সাহায্যের মধ্যে রয়েছে বোমা বর্ষণ করা, স্থানীয় বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা এবং অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা।
৪. ইয়েমেন
মার্কিন বাহিনী ইয়েমেনে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে কিছু বোমা বর্ষণ করছে। আল কায়েদা ইন দ্যা অ্যারাব পেনিনসুলা বা অ্যাকাপের বিরুদ্ধে তারা কিছু লড়াই চালিয়েছে।
মার্কিন সরকার স্বীকার করেছে যে ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহর বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে তারা সীমিত পর্যায়ে সামরিক সমর্থন দিয়েছে।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনে লড়াই চালাচ্ছে। ‘সীমিত সমর্থন’ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই সাহায্যের মধ্যে রয়েছে গোয়েন্দা তথ্য প্রদান করা এবং জোটের বাহিনীগুলিকে সামরিক সরঞ্জাম প্রদান করা। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে না।
৫. সোমালিয়া
সোমালিয়ায় মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন। ঐ দেশে তাদের লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামিক স্টেট এবং আল-কায়েদার মতো গোষ্ঠীগুলির ‘সন্ত্রাসবাদী হুমকি’ মোকাবেলা করা। এই দেশেই ১৯৯৩ সালে মার্কিন সৈন্যরা এক চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল।
সোমালিয়ায় ১৯৯৩ সালে নিয়োজিত মার্কিন বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছে।
মার্কিন স্পেশাল ফোর্সেস সে সময় যুদ্ধবাজ নেতা মোহামেদ ফারাহ্ আইদিদের একজন ডান হাতকে পাকড়াও করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়। অভিযানে ১৮ জন মার্কিন সৈন্য নিহত, ৭০ জন আহত এবং দুটি ব্ল্যাকহক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। বর্তমানে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা সোমালিয়ায় সন্ত্রাস-বিরোধী তৎপরতায় পরামর্শ দিচ্ছে।
৬. লিবিয়া
এধরনের বিমানবাহী জাহাজ থেকেই লিবিয়ার ওপর বোমা বর্ষণ করা হয়।
সরকারিভাবে লিবিয়ায় মার্কিন সৈন্যের সংখ্যা সীমিত। কিন্তু সৈন্য সংখ্যা কম থাকার মানে যে লিবিয়ার ভেতরে তাদের তৎপরতা কম, তা কিন্তু নয়। কংগ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্কিন বাহিনী লিবিয়ার মরুভূমিতে লুকিয়ে থাকা ইসলামিক স্টেট-এর অনুসারী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে বিমান হামলা চালায়। তারা সেখানে ড্রোন ব্যবহারও করে থাকে।
৭. নাইজার
নাইজারে ৫০০ মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা মোতায়েন রয়েছে। কিন্তু তাদের কথা ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববাসীর অজানা ছিল। ঐ সময়ে ইসলামিক স্টেটের অনুগত এক বাহিনী মার্কিন সৈন্যদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালায়। এতে চার জন মার্কিন সৈন্য নিহত হয়।
সে সময় এই ঘটনা নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছিল। নিজেরে নিহত এক সৈন্যের স্ত্রী দাবি করেন, ঐ ঘটনার পর তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে এক বিতর্কিত শোকবার্তা পেয়েছিলেন। যাতে লেখা ছিল: “সে (সৈন্য) জানতো, সে কিসের মধ্যে ঢুকছে।”
ঐ ঘটনার দু’মাস পরে নাইজেরিয়ান সৈন্যদের সাথে টহল দেয়ার সময় মার্কিন সৈন্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, এইসব ঘটনার বাইরেও ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশে মার্কিন বাহিনী আরও ১০টি সামরিক সংঘাতে জড়িত হয়েছে। -বিবিসি বাংলা

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button