সংসদে আনুষ্ঠানিক ভাষণে আঙ্গেলা ম্যার্কেল
সবাই মিলেই জার্মানি
শরণার্থী সংকটসহ একাধিক ঘটনার কারণে জার্মানের সমাজে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নতুন সরকারের কার্যকালেই সমাজের সব অংশের মধ্যে মেলবন্ধন আনতে বদ্ধপরিকর তিনি৷
জার্মানিতে সরকারের কার্যকালের শুরুতেই চ্যান্সেলর সংসদে এক আনুষ্ঠানিক ভাষণে পরের ৪ বছরের কর্মসূচির একটা রূপরেখা তুলে ধরেন৷
আঙ্গেলা ম্যার্কেল জানান, সরকারের প্রধান লক্ষ্য হলো সমাজে বর্তমান বিভাজন দূর করে ঐক্য অর্জন করা৷ ২০১৫ সালে শরণার্থী সংকটের জের ধরে বিদেশিদের আগমন নিয়ে সমাজে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তা কাটিয়ে তোলার অঙ্গীকার করেন তিনি৷
তিনি স্বীকার করেন, এই ঘটনা দেশে বিভাজন সৃষ্টি করেছে। যার ফলে বিতৃষ্ণা দেখা দিয়েছে৷ জার্মানির অর্থনৈতিক অবস্থা এত ভালো হওয়া সত্ত্বেও ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের মনে দুশ্চিন্তা রয়েছে৷ ইউরো এলাকায় অস্থিরতা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামও এর জন্য দায়ী বলে ম্যার্কেল মনে করেন৷ নির্বাচনেও সরকারি জোটের দলগুলি এই অনিশ্চয়তার স্বাদ পেয়েছে।
ম্যার্কেল বলেন, সরকারের দায়িত্ব এমনভাবে আলোচনা চালানো, যাতে শেষে জার্মানিতে বসবাসরত সব মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন সম্ভব করতে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়। তাঁর ভাষায় ‘আমরা সবাই মিলেই জার্মানি।’ এ প্রসঙ্গে তিনি এমনকি সরকারি জোটে বিভাজন নিয়েও কোনো রাখঢাক করেননি৷ সম্প্রতি সহযোগী দল সিএসইউ আরও একবার সাফ জানিয়ে দিয়েছে, যে তারা ইসলাম ধর্মকে জার্মানির অংশ বলে মনে করে না। যদিও জার্মানিতে বসবাসরত মুসলিমদের নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই।
চ্যান্সেলর ম্যার্কেল স্পষ্ট ভাষায় সেই বিভাজনের বিরোধিতা করেছেন। তাঁর মতে, ঐতিহাসিকভাবে জার্মানির কাঠামো অবশ্যই খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্ম ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে৷ সেই মূল্যবোধ আজও বজায় রয়েছে৷ কিন্তু সেইসঙ্গে এটাও সত্য যে, জার্মানিতে বসবাসরত প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী৷ তাই ‘ইসলাম ধর্মও ইতিমধ্যে জার্মানির অংশ হয়ে উঠেছে।’ শরণার্থী সংকটের জের ধরে জার্মানিতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে উগ্র দক্ষিণপন্থী এএফডি দল। ইউনিয়ন শিবিরের অনেক ভোটার এই দলকে সমর্থন করছেন। বাভেরিয়ার সিএসইউ দল রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাদের মন জয় করতে কড়া সুরে ইসলাম ধর্মের সমালোচনা করছে।
এএফডি সংসদীয় দলের নেতা আলেক্সান্ডার গাউলান্ড ম্যার্কেলের ভাষণের সমালোচনা করে বলেন, তিনি নিজের শরণার্থী নীতির মাধ্যমে ইউরোপে বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির মতো দেশ শরণার্থীদের বোঝা ভাগ করে নিতে অস্বীকার করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
মানবিক কারণে সিরিয়ার শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে কোনো ভুল করেননি বলে মনে করেন ম্যার্কেল। তবে ভবিষ্যতে এমন সংকট প্রতিরোধ করতে তিনি বদ্ধপরিকর।