আজ মহান স্বাধীনতার ৪৭তম বার্ষিকী ও জাতীয় দিবস
মহান স্বাধীনতার ৪৭তম বার্ষিকী ও জাতীয় দিবস আজ ২৬ মার্চ সোমবার। মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে জাতি আজ উদযাপন করবে। পাকিস্তান সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাব ও বহুমাত্রিক শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সুদীর্ঘকালের সংগ্রাম, আপোসহীন আন্দোলন এবং একাত্তরের নয়মাস সশস্ত্র জনযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা লাভ করে।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আ.ন.ম শামসুল ইসলাম বাণী দিয়েছেন। এসব বাণীর মর্মকথা হলো যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাধীনতা দিবস পালনের পাশাপাশি দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ডাক। জাতীয় দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি।
সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং রাতে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধন ও ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে এবং সরকারি ও বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হবে। জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মুনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ করবে। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রমসহ এ ধরনের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। এদিন রাজধানীর সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকাসহ নানা রঙের পতাকা দিয়ে সাজানো হবে।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, স্বাধীনতার আন্দোলনের মুখরতায় টালমাটাল ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ২৬ তারিখ ছিলো পবিত্র জুমাবার। সেদিন সুউচ্চ মিনার থেকে ভেসে আসা মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি, মুক্ত বিহঙ্গের উড়াউড়ি-ডাকাডাকি, নদীর নিঃশব্দে কিংবা কলকল রবে বয়ে চলা, এমনকি শাশ্বত সূর্যোদয়ের মধ্যেও নিহিত ছিলো অন্যরকম দ্যোতনা। কারণ সেদিন এ দেশের নির্বিশেষে মানুষ স্বাধীনতা লাভের অদম্য বাসনা নিয়ে দখলদার পশ্চিম পাকিস্তানীদের সীমাহীন ও অব্যাহত শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন। তাইতো দিনটি আবেগমথিত, মহিমান্বিত ও স্বাতন্ত্রে ভাস্বর। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক দিন আজ।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্দ করে দেয়ার লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলার মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে যে বিভীষিকাময় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল, দীর্ঘ ৯ মাসে মরণপণ লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলার দামাল সন্তানেরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে সে যুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে। সাড়ে সাত কোটি মানুষ পেয়েছিলো নিজস্ব মানচিত্র, নিজের মতো করে একটি লাল-সবুজ পতাকা। অযুত জনতার আপোষহীন মনোভাব ও বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা স্বতন্ত্র স্বাধীন জাতিসত্তায় বিশ্ববুকে অধিষ্ঠিত। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল শুধু পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়া নয়; গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। বিগত সাড়ে চার দশকেও এসবের কোনোটিই পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আজ প্রত্যেকের উপলব্ধির সময় এসেছে ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন’।
গোটা জাতি আজ সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করবে স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য বীর সেনানী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার। জাতি সেসব অজ্ঞাতনামা বীর শহীদদেরও স্মরণ করবে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে এতটুকু কুণ্ঠাবোধ করেননি। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি দেশবাসী জাতীয় স্মৃতিসৌধে জমায়েত হয়ে ফুলেল ভালোবাসা ও গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।
কর্মসূচি: যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ প্রত্যুষে রাজধানীতে একত্রিশ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এর পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী কূটনীতিকগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এবারই প্রথম স্বাধীনতা দিবসের দিন সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জাতীয় শিশু কিশোর সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সারাদেশে ও বিদেশে একযোগে একই সময়ে শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হবে।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দুই দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আগামীকাল ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টায় সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ও সকাল ১১টায় টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। এছাড়াও আগামীকাল ২৭ মার্চ বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন।
স্বাধীনতা দিবসে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোসহ তিন দিনের কর্মসূচি নিয়েছে বিএনপি। আজ ভোরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ জেলা-উপজেলা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করবে বিএনপি, বিকালে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এছাড়া ২৭ মার্চ ঢাকায় স্বাধীনতা শোভাযাত্রা এবং ৩১ মার্চ রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা হবে। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশ, ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে রচনা প্রতিযোগিতা এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সব জেলা অফিসে আলোকসজ্জাও করা হবে।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)সহ বিভিন্ন যুব ও ছাত্র সংগঠন মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।