স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে লন্ডনে বিএনপির বিশাল সমাবেশে তারেক রহমান

অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে বেগম জিয়ার মুক্তির বিকল্প নেই

tareqপারস্পরিক ঐক্য মজবুত করে সরকার পতনের ডাক দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আজ সোমবার পূর্ব লন্ডনের দ্য রয়েল রিজেন্সি অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ আহবান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারান্তরীণের কারণে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটাই প্রথম কোনো সমাবেশে অংশ নিলেন তারেক রহমান।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিকের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী কয়সর এম আহমদ, তাজুল ইসলাম ও ইশতিহাক হোসেন দুদু’র যৌথ পরিচালনায় স্বাধীনতা দিবসের এ আলোচনা সভায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত নেতা-কর্মী যোগ দেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক আখ্যা দিয়ে তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কখনো আপোষ করেননি। তাকে রাজনীতির মাঠে মোকাবেলা না করতে পেরে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবন্দি করে রেখেছে অবৈধ সরকার। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বৈরাচারি সরকার কিভাবে আদালতকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে তা বিশ্বে নজিরবিহীন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে ক্ষমতায় ছিলেন আইয়ুব খান। তখন তিনিও তথাকথিত উন্নয়নের নামে ঝিকির করেছিলেন। সেইরকমভাবে বর্তমানে অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারও তথাকথিত উন্নয়নের ঝিকির করছেন। আইয়ুব খানের ভুতও এই সরকারের ঘাড়ে চেপে বসেছে। যার ঘরে রাজাকার বেয়াই রয়েছে তার ঘাড়ে স্বৈরাচারের ভূত চাপাটাই স্বাভাবিক।
বক্তব্যের শুরুতেই দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারি শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। একিসঙ্গে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যারা গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন ও বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছেন তাদের কথাও স্মরণ করেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, আজ থেকে ৪৭ বছর আগে ১৯৭১ সালে শহীদ জিয়ার ডাকে যারা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল- তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো রাজনীতি করতেন না, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের লোকও ছিলো না। তাদের সকলের লক্ষ্যই ছিল দেশকে স্বাধীন করা। তারা স্বাধীন করেছিলেন এ জন্য যে দেশে গণতন্ত্র থাকবে, দেশে আইনের শাসন থাকবে, ভয়-ভীতির উর্দ্ধে থেকে বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকবে। তারা এমন একটি দেশ জনগণকে উপহার দেয়ার জন্যই যুদ্ধ করেছিলেন।
তিনি বলেন, যারা আপনারা এই দেশ স্বাধীন করেছেন তাদের অনেকেই হয়তো দেশ-বিদেশে বসে এই বক্তব্য শুনছেন। যেই অঙ্গীকার নিয়ে আপনারা এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন তার একটিও কি বর্তমানে বিরাজ করছে? তার একটিও কিন্তু এই স্বৈরাচার সরকারের আমলে বিরাজ করছে না।
সরকারের স্বৈরতন্ত্রের তকমা পাবার প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ দেশ স্বাধীনের জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ। ঠিক ৪৭ বছর পর ২০১৮ সালের এই মার্চ মাসেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেল স্বৈরাচার সরকার হিসেবে। যা আমরা বিগত ১০ বছর যাবত বলে আসছি তা এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন যতবারই এই দলটি ক্ষমতায় এসেছে, তারা সবসময়ই চেষ্টা করেছে ক্ষমতা জোর করে ধরে রাখতে। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি দ্বারা এবং সংবাদমাধ্যমের বাকরুদ্ধ করে এটা চেয়েছে। আজ থেকে ১০ বছর আগে আপনারা দেখেছেন সংবাদমাধ্যমগুলো কিভাবে স্বাধীনভাবে খবর প্রকাশ করেছে। সরকার এবং বিরোধী দলের কথা একইভাবে তারা তুলে ধরেছেন। তাদের মধ্যে কোনো ভয়ভীতি ছিল না।
তারেক রহমান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন স্বৈরাচার যুগে যুগে সৃষ্টি হয়েছিল। সেখানে কেউ না কেউ সেই স্বৈরাচার দমন করার জন্য নেতৃত্ব হাতে তুলে নিয়েছিলেন। তেমনি বাংলাদেশেও এমন একজন নেতা রয়েছেন যিনি হলেন গণতন্ত্রের জন্য আপোসহীন, দেশনেত্রী বেগম খলেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যারা সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন এবং বর্তমানে দেশ-বিদেশের অনেকেই দেখছেন সেই ৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যিনি কোনো সময়ই আপস করেননি, যিনি সব সময় গণতন্ত্র, মানুষের বাক স্বাধীনতা ও অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন, সেই আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত প্রভাবিত করে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় কারান্তরীণ করে রেখেছে। এবং বার বার জটিলতা সৃষ্টি করে তাঁর জামিন পেতে বিলম্বিত করছে।
বিএনপি যতবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে ততবারই বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় আসে ততবারই চেষ্টা করে কিভাবে বিরোধী দলকে দমন করবে। তারা চেষ্টা করেছে কিভাবে সংবাদপত্রের কণ্ঠ রোধ করবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কড়া সমালোচনা করে তারেক রহমান বলেন, অচিরেই তার নামে নারী নির্যাতনের মামলা হবে। তাকে নিয়ে তার দলেরই এক নারী নেত্রী ফেসবুকে লিখেছে। এটা পত্রপত্রিকায় এসেছে, আপনারা দেখেছেন।
বর্তমান সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এই স্বৈরাচারি সরকারের আমলে নারীরা নিরাপদ নয়। গত কয়দিন আগে ব্যাপক ঢাক ঢোল বাজিয়ে ৭ মার্চের সমাবেশ করেছে। ঐদিন সমাবেশে যাবার পথে মা-বোনকে লাঞ্চিত করেছে এ দলেরই নেতাকর্মীরা। যাদের হাতে মা-বোনরা নিরাপদ নয় তারা দেশের নিরাপত্তা দিতে পারে না।
তারেক রহমান বলেন, এসরকার শুধু অবৈধই নয়, শুধু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বৈরাচারই নয়, এরা দুর্নীতিবাজ সরকার। এরা দেশবাসীর কাছে পরিচিত হয়েছে প্রতারক সরকার হিসেবে।
শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতে বর্তমান সরকারের ব্যাপক অরাজকতা আর আর্থিক খাতের বিরাট দূর্নীতির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
এসরকারকে মানুষ দেখতে চায়না উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এরা জানে এদের পিছনে মানুষের সমর্থন নেই। এরা শুধু লুট-পাঠ আর নির্যাতনই করছেনা তার সঙ্গে যোগ হয়েছে গুম। শুধু আমাদের নেতা-কর্মীরাই নয় সাধারণ মানুষও এ সরকার দ্বারা আক্রান্ত। এদেরকে হায়েনা, ব্যাংক ডাকাত, চোর-যাই আপনারা বলুন না কেন, এই স্বৈরশাসকদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।
নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, অতীতে যেভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিএনপি আন্দোলনে সফল হয়েছে ভবিষ্যতেও সেভাবে সফল হতে হবে। মানুষ তাকিয়ে আছে আপনাদের দিকে।
খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা মানে গণতন্ত্রকে বন্দি রাখা, মানুষকে ন্যায় বিচার বঞ্চিত করা। খালেদা জিয়া আর গণতন্ত্র এখন সমার্থক।
তিনি বলেন, কৌশলি আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া আর অন্যান্য সব বন্দিদের কারাগার থেকে মুক্ত করে আনতে হবে। মানুষকে নিরাপত্তাহীনতা থেকে নিরাপত্তায় নিয়ে আসতে হবে। আর এ নিরাপত্তা দিতে পারবে কেবল বিএনপি।
সবাইকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, জনগণের বিশ্বাস আর আস্থা ধরে রাখতে হলে কৌশলে সামনে এগুতে হবে। সরকার অতীতে বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে প্রবেশ করে তা প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে, তারা যাতে আর কোনো সুযোগ না পায় সে খেয়াল রাখতে হবে।
খালেদা জিয়ার একটি বাণীর কথা মনে করিয়ে দিয়ে তারেক রহমান বলেন, আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জনে সবচাইতে বড় শক্তি বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন। এজন্য প্রয়োজন পারস্পরিক ঐক্য। এটাকে আরো মজবুত করতে হবে। এর মাধ্যমে সম্ভব দেশকে মুক্তি এনে দেয়া।
সকলের কাছে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আসুন সকলে মিলে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করি। তার উদ্দেশ্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। মানুষের মুক্ত কন্ঠকে ফিরিয়ে আনা। ডিজিটাল আইনের নামে অবৈধ,স্বৈরাচারি সরকার যে কন্ঠরোধ করেছে তা ফিরিয়ে আনতে হবে। গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। এই মুক্তিযুদ্ধে শরিক হতে তিনি সবার প্রতি আহবান জানান।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button