সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন

savarস্বাধীনতা সংরক্ষণ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সন্ত্রাসমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আজ সোমবার মহান স্বাধীনতার ৪৭তম বার্ষিকী ও জাতীয় দিবস পালিত হয়েছে। এদিন রাজধানীর অদূরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ একাত্তরের শহীদদের অমর স্মৃতি স্মরণে অর্পিত ফুলে ফুলে  ছেয়ে যায়। ভোরে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পক্ষ থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে মূলত দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এদিকে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজ ছিল সরকারি ছুটি। প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ আলাদা বাণী দিয়েছেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের মূল কেন্দ্রে ছিল সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। ভোরে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রথমে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন এবং এরপরই প্রধানমন্ত্রী শহীদদের ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। তাঁরা শহীদ বেদীতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের পর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যগণ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যগণ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং কূটনীতিকবৃন্দ, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে দলের পক্ষ থেকে আরেকটি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।
প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর এই শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বের পর উন্মুক্ত করে দেয়া হয় স্মৃতিসৌধের ফটক। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেকে ব্যক্তিগতভাবে কিংবা পরিবার-পরিজন নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। শ্রদ্ধা জানাতে আসা সংগঠনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি (এরশাদ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি স্বাধীনতার বার্ষিকীতে একাত্তরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসে জঙ্গিবাদমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রত্যাশার কথা বলেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে গতকাল সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয় এবং সরকারি ও বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্প কলা একাডেমি, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ, হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রমসহ এ ধরনের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহ রাতে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।
দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে। এদিন রাজধানীর সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকাসহ নানা রঙের পতাকা দিয়ে সাজানো হয়।
প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে দেশে বিদেশে জাতীয় সংগীত গাইলো জাতি। আজ সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জাতীয় শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত গেয়ে পুরস্কৃত শতাধিক শিশু-কিশোর জাতীয় সংগীত পরিবেশন শুরু করে।  তাদের সঙ্গে জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে উপস্থিত মন্ত্রিসভার সদস্যরা, মাঠে থাকা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সংগঠনের সদস্যরা এবং গ্যালারিতে থাকা হাজার হাজার দর্শক ও অভিভাবক। এবারই প্রথম স্বাধীনতা দিবসের সকালে সারাদেশে ও বিদেশে একযোগে একই সময়ে শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ সকাল ৯টায় বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে কুরআন খানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের জ্যেষ্ঠ পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান।
আগের বছরগুলোর মতো, বিশ্বের অন্যতম সার্চ ইঞ্জিন গুগল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে তাদের হোম পেজে বিশেষ ডুডল প্রদর্শনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করেছে। বাংলাদেশের জনগণকে উৎসর্গ করা গুগলের এই ডুডলে, বাংলাদেশের মাটিতে লাল-সবুজের গর্বের পতাকা পত পত করে ওড়ার দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।
গুগল তাদের বিশেষ ডুডল পেজে বলেছে, ৪৭ বছর আগে আজকের এইদিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়। আজ বাংলাদেশের মানুষ নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে।
ডুডলের অভ্যর্থনা বার্তায় ‘শুভ স্বাধীনতা দিবস, বাংলাদেশ’ লেখা রয়েছে। গুগল প্রথমবার ২০১৩ সালে বাংলাদেশের ৪৩তম স্বাধীনতা দিবসে একটি বিশেষ ডুডল পোস্ট করেছিল। এছাড়াও গুগল বেগম রোকেয়া দিবস এবং বিশিষ্ট লেখক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনসহ বাংলাদেশের আরো কিছু দিবস উপলক্ষে বিশেষ ডুডল পোস্ট করে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button