এক লীগে আশরাফুলে ৫ সেঞ্চুরি
ক্রিকেটকে জাতীয়ভাবে উদযাপনের যে আয়োজন ১৯৯৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ান ট্রফি জয় করে আকরাম-বুলবুলরা করে গেছেন, সেটার ভীত মজবুত হয়েছে আশরফুলের হাত ধরে। এই কারণেই তাকে বলা হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার। কিন্তু এক ক্যালেঙ্কারিতে জরীয়ে তিনি ছিটকে পড়েছেন ক্রিকেট থেকে। অপরাধ স্বীকার করে তিনি যেদিন টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে কেঁদে ছিলেন, সেদিন টেলিভিশনের সামনে বসে চোখের পানি ফেলেছেন লক্ষ লক্ষ ভক্তরা।
কিন্তু আবার সেই আশরাফুলকে দেখার অপেক্ষায় দর্শক। ক্রিকেটের মাঠে ব্যাট হাতে রাজত্ব করবেন এই লিটল মাস্টার সেটাই প্রত্যাশা ক্রিকেট প্রেমীদের। প্রিমিয়ার লীগে আশরাফুল সেরকম ইঙ্গিতই দিয়েছেন। কিন্তু কবে থেকে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন, আশরাফুলের রাস্তা আর কত দূর সেটাই এখন মোটা দাগের প্রশ্ন সবার কাছে।
প্রিমিয়ার লীগে ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ আশরাফুলের কৃতিত্ব এখন সবার ওপরে। বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এক লিগে সর্বাধিক পাঁচ সেঞ্চুরির মালিক আশরাফুল। আর বিসিএল ধরলে এ মৌসুমে তার শতরান ছয়টি।
আসল কথা হলো, নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে প্রথম বার লীগে তেমন কিছু করতে না পারলেও এবার দ্বিতীয়বার প্রিমিয়ার লীগ খেলতে নেমে ব্যাটসম্যান আশরাফুল ছাড়িয়ে গেলেন সবাইকে। শুধু এবারের লীগেই নয়। এতগুলো সেঞ্চুরি এক লীগে আগে ছিল না কারোই। অর্থাৎ ঢাকার সিনিয়র ডিভিশন অার প্রিমিয়ার লীগের ৪৪ বছরের ইতিহাসে এক নতুন রেকর্ডস্রষ্টা আশরাফুল।
এ তথ্য ও রেকর্ডের কথা বার্তা এখন সারা বাংলাদেশ জানে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও চাওর হয়ে গেছে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবার মাঠে ফেরা আশরাফুল দ্বিতীয় বার লীগ খেলতে নেমেই শতরানের নহর বইয়ে দিয়েছেন। এসব খবর এখন সব ক্রিকেট-অনুরাগির জানা হয়ে গেছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর সারা দেশে ক্রিকেট অনুরাগিদের মধ্যে আশরাফুলের এমন নজরকাড়া পারফরম্যান্স নিয়ে প্রতিক্রিয়া দু’ধরনের। এক পক্ষ উচ্ছ্বসিত, উদ্বেলিত, পুলকিত। তারা ভাবছেন, আশরাফুল ফুরিয়ে যাননি। আবার ফিরে এসেছেন। ভালো খেলার, রান করার এবং প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর কর্তৃত্ব এবং প্রভাব বিস্তার করে দীর্ঘ ইনিংস খেলার পর্যাপ্ত সামর্থ্য এখনো আছে তার। এবং জাতীয় দলে খেলার জন্য এখনই প্রস্তুত।
আবার বিপরীত মতোও আছে। একটা পক্ষ মনে করছেন, এত শিগগিরই আশরাফুলের পাপ মোচন যেন না হয়। তিনি যে ম্যাচ গড়াপেটার সাথে জড়িত ছিলেন, জাতীয় দল এবং বিপিএলে ম্যাচ পাতিয়েছেন, সেজন্য শুধু নিষেধাজ্ঞাই যথেষ্ট নয়। ফর্ম ফিরে পাবার পরও যেন তাকে বোঝানো হয়, তিনি অপরাধ করেছিলেন।
শুধু নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবার ক্রিকেটে ফেরাই অপরাধমুক্তির সার্টিফিকেট নয়। জাতীয় দলে ফিরতে হলে তাকে আরও সময় অপেক্ষায় রাখা উচিত। কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এগিয়েছে। তার ধরণ, মেজাজ, মর্জি, গতি প্রকৃতি, ট্রেনিং সিডিউল ও স্কিলও বদলেছে। আশরাফুল যার সাথে পুরোপুরি ধাতস্ত নন। কাজেই এখনই বা নিকট ভবিষ্যতে তাকে জাতীয় দলে বিবেচনা করা হবে অদূরদর্শি সিদ্ধান্ত।
এদিকে আশরাফুল ভক্তরা মাঠ-ঘাট, অফিস-আদালত, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আর রেস্টুরেন্ট গরম করে ফেলছেন। চায়ের আড্ডায় তাকে নিয়ে অনেক কথা।
একটা বড় অংশর ধারণা, এক লীগে পাঁচ আর এক মৌসুমে ছয় শতরান যখন করে ফেলেছেন, তখন আশরাফুল আবার নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। তার মানে আবার আশরাফুল জাতীয় দলে খেলার জন্য এখন তৈরি। আবার কেউ কেউ আরও একটু রয়ে সয়ে বলছেন, এভাবে যখন ম্যাচের পর ম্যাচ সেঞ্চুরি হাঁকাচ্ছেন, তখন বুঝতে হবে আশরাফুল ফুরিয়ে যাননি। তার সামর্থ্য আছে জাতীয় দলে খেলার। তিনি ইচ্ছে করলেই আবার বাংলাদেশ দলে ফিরতে পারেন।
আচ্ছা, আশরাফুল নিজে কি ভাবছেন? এক লীগে পাঁচ শতক ও এক মৌসুমে ছয় সেঞ্চুরি করার পর আশরাফুলের নিজের অনুভূতি কি? আশরাফুল সোজা সাপটা জানিয়ে দিলেন, ‘কে কি ভাবছেন বা কার চিন্তা কি, আমি তা বলতে পারবো না। আমি আমার মতো করে ভাবছি। আমার ভাবনা ও চিন্তায় জাতীয় দল নেই। আমি এখন কেন, নিকট ভবিষ্যতেও জাতীয় দলে ফেরার কথা ভাবছি না। ভাবতে চাইওনা।’
কেন ভাবতে চাননা? আশরাফুলের পরিষ্কার জবাব, ‘প্রথম কথা হলো আমি প্রিমিয়ার লীগ আর জাতীয় লীগ খেলার অনুমতি পেলেও এ বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত জাতীয় দল এবং বিপিএল খেলতে পারবো না। সেটা আমার শাস্তির অংশ। অর্থাৎ আগস্টের আগে বিপিএল আর জাতীয় দলে খেলার বিষয়ে সরাসরি আইসিসির নিষেধাজ্ঞা আছে। আর নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়ে এবং তা বলবৎ থাকা অবস্থায় জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ যেহেতু নেই, তাই আমার চিন্তায় জাতীয় দলও নেই।’