নিরস্ত্র ফিলিস্তিনীদের হত্যা প্রমাণ করে ইসরাইলের অনৈতিক ও দখলদারের অবস্থান
গাজায় ফিলিস্তিনীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভে গুলি করে ১৭ জনকে হত্যার পর এ ঘটনার তদন্তের বিষয়ে রাজি নয় ইসরায়েল। যা প্রমাণ করছে এঘটনায় ইসরায়েলের অনৈতিক ও দখলদারের অবস্থানটি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিন্দার ঝড় বয়ে গেলেও বিশ্বমিডিয়ায় এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবি ও ফুটেজে দেখা গেছে একের পর এক ফিলিস্তিনী তরুণকে বিনা উসকানিতে গুলী করে মারছে ইসরায়েলী স্নাইপাররা। আর পূর্বপরিকল্পিতভাবেই এধরনের ১০০ স্নাইপার মোতায়েন করে রেখেছিল ইসরায়েল। এধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘে বিষয়টির ওপর আলোচনায় ভেটো দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের মিত্র আরব দেশগুলো নিশ্চুপ!
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতারেস গাজার এই হত্যাকান্ড নিয়ে নিরপেক্ষ স্বাধীন তদন্তের আহবান জানালে গত রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তা প্রত্যাখ্যান করেন। ইসরায়েল বলছে তারা সন্ত্রাসী কিন্তু ফুটেজ বলছে কিভাবে ইসরায়েলী স্নাইপারদের গুলী নিরস্ত্র ফিলিস্তিনীদের বুক ভেদ করে যাওয়ায় তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সন্ত্রাসের নিজস্ব সংজ্ঞা দিয়ে ইসরায়েল ও আমেরিকার মিত্ররা একের পর এক আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাক, আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোতে হয় নিজেদের পছন্দ স্বৈরশাসকদের টিকিয়ে রেখেছে কিংবা তাদের পতনের মধ্যে দিয়ে দেশগুলোর সম্পদ লুট করে নিয়ে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েছে। আর ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করে জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থা চালু না রেখে সামরিক স্বৈরশাসক ও বাদশাহী তখতে তাউস ইসরায়েলের সঙ্গে গোপনে মিত্রতা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রকাশ্যে মিত্রতা দেখাচ্ছে। মিসর, সৌদি আরবের মত দেশগুলো এসবেরই উদাহরণ মাত্র।
ইসরায়েলের স্নাইপারদের গুলীতে আহত হয়েছে ১৪’শর বেশি মানুষ। অথচ এধরনের সন্ত্রাসী ঘটনাকে কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না ইসরায়েল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তদন্তের আহবানকে থোরাই কেয়ার করছে ইসরায়েলে। কারণ তারা জানে গোপনে তাদের সঙ্গে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স, কিংবা মিসরের সামরিক স্বৈরাচার সিসির মত অসংখ্য ভক্ত আছে। মুসলমানদের রক্ষায় তারা কখনো এগিয়ে আসবে না, ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে যতটুকু বিশ্ব মুসলিম উম্মা উচ্চারণ প্রয়োজন কিংবা পবিত্র দুই মসজিদের খাদেম সাজবে মাত্র। এদের ভরসায় মার্কিন ইসরায়েলীরা ফিলিস্তিনীদের ওপর চড়াও হয়ে গুলি করে পাখির মত মানুষ মারছে। এমনকি ইসরায়েলী বিরোধী দল মেরেৎজ পার্টি গাজায় ফিলিস্তিনীদের গুলী করে হত্যার নিন্দা জানালেও সৌদি বাদশাহ বা আমিরাতি আমিররা মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে মাত্র। আর তাদের ব্যাপারে যারা প্রতিবাদ করে না এমন আলেম ওলামারাও ফিলিস্তিনিদের এধরনের হামলার পক্ষে সায় দিয়ে যান কেবল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগদর লিবারম্যান বলেছেন, ইসরায়েলি সেনারা তাই করেছে যা প্রয়োজন ছিল। আমি মনে করি আমাদের সেনারা পদক পাওয়ার য্যেগ্যতা রাখেন। কোনো তদন্তের প্রশ্নই আসে না। ইসরায়েলের আর্মি রেডিওতে ইসরায়েলী প্রতিরক্ষামন্ত্রী এমনটাই বলেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেত্রী মোঘেরিনি বলেছেন, ইসরায়েলের সীমান্ত রক্ষার অধিকার আছে কিন্তু তা সবসময় সমানুপাতিকহারে হতে হবে। ইসরায়েলীরা যা করেছে তার উপযুক্ত জবাব ফিলিস্তিনীরা আজ হয়ত খালি হাতে দিতে পারছে না। তবে তা কখানো দিতে পারলে পশ্চিমা সমাজ তাকে সন্ত্রাসী বলে সংজ্ঞায়িত করতে ভুলবে না তাও জানা আছে ফিলিস্তিনীদের।
ইসরায়েলী প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সেনারা ভাল করেছে। সীমান্ত রক্ষায় ইসরায়েলের ভূমিকা সন্তোষজনক। কিন্তু মুসলিম শাসকরা দেশে দেশে ইসরায়েলী এ বর্বরতার কোনো সন্তোষজনক জবাব কেন দিতে পারছেন না তাও বিস্ময়কর ও হতাশাজনক।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ডা: আশরাফ আল-কিদরা বলেছেন, নিহতদের অধিকাংশের বয়স ১৭ থেকে ৩৫ বছর। ইসরায়েলী সেনারা তাজা গুলী ব্যবহার করায় আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কুড়ি লাখ গাজাবাসীকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল ও মিসর। তাদের সুরঙ্গ পথে চলতে হয়। তাদের একমাত্র বিমানবন্দরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উপকূল নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েল। মাছ ধরার জেলেদেরকেও গুলি করে হত্যা করছে ইসরায়েলী সেনারাা। ৩ বছরের একটি ফিলিস্তিনী শিশুর সঙ্গেও অনৈতিক ধরনের আচরণ করছে ইসরায়েলী সেনারা।