ব্রিটেনে গৃহহীন মানুষের মৃত্যুহার বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি

Home Less in UKপাঁচ বছরের ব্যবধানে ব্রিটেনের রাস্তায় বা অস্থায়ী আবাসে থাকা গৃহহীন মানুষের মৃত্যুহার বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বছরের পর বছর ধরে সুপারমার্কেটের কার পার্ক, গির্জার সমাধি এবং লোকারণ্য হোস্টেলগুলোতে গৃহহীন মানুষের মৃত্যুহার বাড়ছে। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩১। আর ২০১৭ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০-এ। এই পাঁচ বছরে এমন মৃত্যুর সংখ্যা অন্তত ২৩০টি। এদের ৯০ শতাংশই পুরুষ। এমনটাই উঠে এসেছে ব্রিটেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের এক অনুসন্ধানে।
গতকাল বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে প্রতি সপ্তাহে গড়ে একজনের বেশি গৃহহীন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাজ্য সরকারের কোনও বিভাগ জাতীয় পর্যায়ে গৃহহীন মানুষের মৃত্যুর কোনও নথি লিপিবদ্ধ করে না। স্থানীয় কর্তৃপক্ষকেও এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা গণনা করতে হয় না।
দ্য গার্ডিয়ানের অনুসন্ধান বলছে, গৃহহীন মানুষের মৃত্যুর গড় বয়স ৪৩ বছর। এটা ব্রিটিশ নাগরিকদের প্রত্যাশিত আয়ুর প্রায় অর্ধেক। গৃহহীন মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ার নেপথ্যে বাড়তি ভাড়া, কল্যাণ তহবিলে কাটছাঁট এবং সামাজিক আবাসনের অভাবের মতো বিষয়গুলোকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।  তারা সরকারকে দারিদ্র্যের মূল কারণগুলোকে মোকাবিলায় জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
২০১৭ সালের ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের গোড়ার দিকেও প্রায় শুন্য তাপমাত্রা ও ব্যাপক তুষারের দেখা মিলেছে। সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী এ বছর রাস্তায় বা অস্থায়ী আবাসে গৃহহীন মানুষের মৃতুর সংখ্যা অন্তত ২৩। গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কোস অ্যামারেল গৌর্জেল নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর আলোচনায় আসে বিষয়টি। গুরুত্ব পায় সংবাদমাধ্যমের কাভারেজে। তীব্র ঠান্ডা আবহাওয়ায় পার্লামেন্ট সংলগ্ন ওয়েস্টমিনস্টার আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনে তার মৃত্যু হয়।
গৃহহীন অনেক মানুষকেই শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা উপেক্ষা করে রাত কাটাতে হয় পার্ক কিংবা ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে। হোমলেস চ্যারিটি ক্রাইসিস নামক দাতব্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আছেন ম্যাথিউ ডোনি। দ্য গার্ডিয়ান’কে তিনি বলেন, গৃহহীন মানুষের এমন মৃত্যু তাদের বিপন্নতাকে মনে করিয়ে দেয়। এটা একটা ভয়াবহ ব্যাপার। প্রতি বছর এটা বহু জীবন কেড়ে নেয়।
ম্যাথিউ ডোনি বলেন, প্রায় শূন্য তাপমাত্রা থেকে শুরু করে সহিংসতা, নির্যাতন, গুরুতর অসুস্থতার মতো ঘটনার ক্ষেত্রে রাস্তায় ঘুমানো মানুষেরা অরক্ষিত। তাদের সহিংসতার শিকার হওয়ার আশঙ্কা ১৭ গুণ বেশি। দ্বিতীয়ত সংক্রমণ থেকে তাদের মৃত্যুর শঙ্কা বেশি থাকে। অন্যদের তুলনায় তাদের আত্মহননের হার নয় শতাংশের মতো বেশি। কী বাজে অবস্থা! আমরা জানি এই পরিসংখ্যানের অবমূল্যায়ন করা হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের আবাসান, কমিউনিটিজ ও স্থানীয় সরকার বিভাগে নিজেদের এই অনুসন্ধানের ফলাফল পাঠিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান। সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, আমরা জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছি। এ সংকট উত্তরণে আমরা ১ দশমিক ২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করছি। এ সপ্তাহের শুরুতেই বহুল প্রতীক্ষিত হোমলেস রিডাকশন আক্ট কার্যকর হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইউরোপের সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশগুলোতেও গৃহহীন মানুষের সংখ্যা একেবারে নগণ্য নয়। ২০১৬ সালে ইতালির সর্বোচ্চ আদালত ঘোষণা দেয়, যদি কেউ সত্যিই ক্ষুধার্ত হয়, তখন জীবনধারণের জন্য সামান্য পরিমাণ খাবার চুরি করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়। দেশটির একটি সুপার মার্কেট থেকে একজন গৃহহীন ব্যক্তি সাড়ে চার ডলার মূল্যের খাবার চুরির অভিযোগে দায়ের করা মামলার শুনানি শেষে এমন অভিমত দেন আদালত।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button