ভারতে মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গা ‘পরিকল্পিত’
রামনবমী পালনকে কেন্দ্র করে ভারতে গত মার্চে যে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়েছিল, সেগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল একইরকম – যাতে মনে হতে পারে যেন একটাই পরিকল্পনার ভিত্তিতে দাঙ্গাগুলো হয়েছে। মার্চের শেষ সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গ আর বিহার রাজ্যে মোট দশটি সাম্প্রদায়িক অশান্তি ঘটেছিল।
ঘটনাগুলির যেসব প্রতিবেদন বিবিসি-র সংবাদদাতারা পাঠিয়েছিলেন, তার তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করেছে বিবিসির হিন্দি বিভাগ। এতে দেখা যাচ্ছে, একই ভাবে ওইসব অশান্তি শুরু হয়েছে, হাজির ছিলেন একই ধরণের যুবকরা, তাদের গলায় ছিল একই ধরণের স্লোগান। হামলার শিকারও হয়েছিলেন একই ধরণের মানুষ।
তাই এ অশান্তি, হিংসা বা অগ্নিসংযোগ কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই, অনিয়ন্ত্রিতভাবে, হঠাৎ ঘটে গেছে – ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করে এরকমটা মনে করা কঠিন।
বিবিসি-র সংবাদদাতারা বিহার আর পশ্চিমবঙ্গের দাঙ্গা বা হিংসা কবলিত এলাকাগুলি থেকে যেসব প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন, তার মধ্যে ৯টি বিষয় রয়েছে, যা প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই মোটামুটিভাবে এক। কোথাও তা দাঙ্গার রূপ নিয়েছিল, কোথাও ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের মধ্যেই শেষ হয়েছে।
এই ৯টি বিষয় থেকেই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে দশটি আলাদা শহরে বিচ্ছিন্নভাবে, কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই ওই হিংসাত্মক ঘটনাগুলি ঘটে নি।
১. উগ্র মিছিল, যুববাহিনী, গেরুয়া পতাকা, বাইক…
বিহারের ভাগলপুরে ১৭ই মার্চ সাম্প্রদায়িক অশান্তির শুরু। সেদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী চৌবের পুত্র অর্জিত চৌবে ‘হিন্দু নববর্ষে’র দিন এক শোভাযাত্রা বের করেছিলেন।
সেখান থেকে মুসলমানদের ওপরে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটে ওই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়।
সেদিন থেকে রামনবমী পর্যন্ত ঔরঙ্গাবাদ, সমস্তিপুরের রোসড়া আর নওয়াদার মতো শহরগুলিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতিটা জায়গাতেই রামনবমীর দিন উগ্র মিছিল বার করা হয়েছিল। বাইকে চেপে যুবকরা ওইসব মিছিলে সামিল হয়েছিল। তাদের মাথায় গেরুয়া ফেট্টি ছিল। সঙ্গে ছিল গেরুয়া ঝান্ডা।
ঘটনাচক্রে সমস্তিপুরের মিছিলে মোটরবাইক ছিল না। কিন্তু বাকি বিষয়গুলির মিল পাওয়া যাচ্ছে।
হিন্দু নববর্ষ দিনটিও নতুন আবিষ্কার হয়েছে। রামনবমীর শোভাযাত্রাও বেশীরভাগ শহরেই আগে বড় করে হতে দেখে নি কেউ। গতবছর উত্তরপ্রদেশের সাহারাণপুরে রাণা প্রতাপ জয়ন্তীতে শোভাযাত্রা বেরনোর পরেই দলিতশ্রেণীর মানুষের ওপরে আক্রমণ হয়েছিল।
মেওয়াড়ের রাণা প্রতাপের জন্মজয়ন্তী সাহারাণপুরে একেবারেই নতুন আমদানি হয়েছিল গত বছর থেকে।
২. শোভাযাত্রাগুলির আয়োজন করেছিল একই ধরনের নানা নামের সংগঠন
যে সব এলাকায় রামনবমীর শোভাযাত্রা থেকে অশান্তি ছড়িয়েছে, সেগুলির প্রত্যেকটিরই আয়োজন করেছিল একই ভাবধারার সংগঠন, যদিও একেক জায়গায় তাদের নাম ছিল একেক রকম। সংগঠনগুলি প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারতীয় জনতা পার্টি, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ আর বজরং দলের সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে যুক্ত।
ঔরঙ্গাবাদ আর রোসড়ায় তো বিজেপি এবং বজরং দলের নেতারা সরাসরিই মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন।
বেশ কয়েকটি জায়গায় দেখা গেছে অপরিচিত কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠনও জমকালো শোভাযাত্রা বার করেছে।
ভাগলপুরে ‘ভাগওয়া (গেরুয়া রঙের হিন্দি) ক্রান্তি’ আর ঔরঙ্গাবাদে ‘সাবর্ণ ক্রান্তি’ নামের জন্ম হয়েছিল।
দাঙ্গার পরে ওই সদ্যোজাত সংগঠনগুলির কোনও নেতাই দেখা করতে বা আমাদের সংবাদদাতাদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন নি।
পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল-রাণীগঞ্জ বা পুরুলিয়া অথবা উত্তর ২৪ পরগণা জেলাগুলির যেসব অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়িয়েছিল, সেখানেও বিজেপি নেতাদের সমর্থন ছিল রামনবমীর শোভাযাত্রাগুলিতে।
তবে আসানসোলে হিন্দুদের দোকান আর ঘরগুলিতেও আগুন দেওয়া হয়েছিল। হিন্দু পরিবারগুলিকেও বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় শিবিরে চলে যেতে হয়েছিল।
৩. বিশেষ একটি রাস্তা ধরেই মিছিল নিয়ে যাওয়ার জেদ
অশান্তি ছড়িয়েছিল যেসব শহরে, তার প্রত্যেকটির ক্ষেত্রেই মুসলমান প্রধান এলাকা দিয়ে রামনবমীর শোভাযাত্রা নিয়ে যাওয়ার জন্য জিদ ধরা হয়েছিল।
নওয়াদায় রামনবমীর আগেই জেলা প্রশাসন ধর্মীয় নেতাদের ডেকে একটা শান্তি বৈঠক করেছিল।
মুসলমান প্রধান এলাকা দিয়ে শোভাযাত্রা নিয়ে যাওয়ার সময়ে ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’ স্লোগান যাতে না দেওয়া হয়, তার জন্য অনুরোধ করেছিল প্রশাসন। কিন্তু বিজেপি ওই প্রস্তাবে ঘোর আপত্তি তোলে। নওয়াদার সংসদ সদস্য ও বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিং বলেছিলেন, পাকিস্তান মুর্দাবাদ স্লোগান ভারতে দেওয়া হবে না তো আর কোথায় দেওয়া হবে? বিহারের ঔরঙ্গাবাদ, রোসড়া, ভাগলপুর বা পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল – সব শহরেই একই ঘটনা হয়েছে। স্থানীয় মানুষরা বিবিসি-র সংবাদদাতাদের জানিয়েছেন যে মিছিলের রুট পরিকল্পিতভাবেই মুসলমান প্রধান এলাকাগুলো দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
৪. উস্কানিমূলক স্লোগান আর ডিস্ক জকি
যেসব জায়গায় শোভাযাত্রা বার করা হয়েছিল, তার প্রতিটি জায়গাতেই মুসলমানদের ‘পাকিস্তানী’ বলা হয়েছে। বাজানো হয়েছে ডি জে-ও। ‘যখনই হিন্দুরা জেগে উঠেছে, তখনই মুসলমানরা ভেগেছে’ – এরকম স্লোগানও উঠেছে মিছিল থেকে।
ঔরঙ্গাবাদ, রোসড়া, আসানসোল আর রাণীগঞ্জ এলাকায় প্রত্যক্ষদর্শী সাধারণ মানুষ, স্থানীয় সাংবাদিক এমন কি পুলিশ কর্মীরাও বিবিসি সংবাদদাতাদের জানিয়েছেন যে স্লোগান দিয়ে কীভাবে মুসলমানদের উস্কানোর চেষ্টা হয়েছিল মিছিলগুলো থেকে। ঔরঙ্গাবাদে কবরস্থানে গেরুয়া ঝান্ডা লাগিয়ে দেওয়ার ছবি এসেছে বিবিসি-র কাছে।
রোসড়ার ‘তিন মসজিদ’-এ ভাঙ্গচুড় করে গেরুয়া ঝান্ডা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রত্যেকটা মিছিলেই একই ধরণের রেকর্ড করা গান বাজানো হয়েছিল।
রাণীগঞ্জের এক বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা রাজেশ গুপ্তা বিবিসিকে বলেছিলেন, হ্যাঁ,গান বাজানো হয়েছে। কিন্তু ওগুলো তো পাকিস্তান বিরোধী গান ছিল। কাউকে উস্কানি দেওয়ার জন্য বাজানো তো হয় নি।
যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, রামনবমীর মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পাকিস্তান বিরোধী গান কেন?
তিনি জবাব দিয়েছিলেন, যেখানেই সুযোগ পাব আমরা দেশভক্তি আর জাতীয়তাবাদী চিন্তা চেতনা প্রকাশ করব। কোনও সুযোগই আমরা হারাতে চাই না। ভারতে যদি পাকিস্তান বিরোধী গান না বাজে, তাহলে কোথায় বাজবে?
বিহারের নওয়াদা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আর পশ্চিমবঙ্গের রাণীগঞ্জের এই বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতার বক্তব্যে আশ্চর্য মিল।
৫. ‘ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া’র থিয়োরী
আর এস এস এবং বিজেপি নেতারা মুসলমানদের ওপরে হামলার ঘটনাগুলিকে ক্রিয়ার পাল্টা প্রতিক্রিয়া বলে ব্যাখ্যা করেছেন সব ক্ষেত্রেই। ঔরঙ্গাবাদের এক আর এস এস নেতা সুরেন্দ্র কিশোর সিং জানিয়েছিলেন, রামনবমীর মিছিলের ওপরে মুসলমানরা পাথর আর চপ্পল ছুঁড়েছে – এরকম গুজব ছড়িয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলেও রামনবমীর মিছিলের ওপরে মুসলমানরা পাথর ছুঁড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে কোনও ঘটনার তদন্তেই এখনও পর্যন্ত এরকম কিছু পাওয়া যায় নি, যাতে মনে করা যেতে পারে যে পাথর বা চপ্পল কোনও একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের তরফ থেকে ছোঁড়া হয়েছিল।
৬. মাপা হিংসা, বাছাই করে অগ্নিসংযোগ
বেশীরভাগ শহরেই হিংসা ব্যাপকভাবে ছড়ানো হয় নি – অন্তত পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যাতে না চলে যায়, যেখানে কারও মৃত্যু হয়। কিন্তু মানুষের জীবন-জীবিকার ক্ষতি যাতে হয়, সেরকম ভাবেই হামলা হয়েছিল।
ব্যতিক্রম অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ। সেখানে মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে। ঔরঙ্গাবাদে ৩০টি দোকান জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিলÑ যার মধ্যে ২৯টি-ই মুসলমানদের দোকান। জেনে বুঝেই যে ঠিক ওই কয়েকটি দোকানেই আগুন দেওয়া হয়েছিল, সেটা বোঝাই যায়। সেখানকার হিন্দু যুব বাহিনীর নেতা অনিল সিংয়ের বাড়িতেই এমন একটি দোকান রয়েছে, যেটির মালিক মুসলমান। সেই দোকানটি সুরক্ষিত থেকেছে।
পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য হিন্দু সম্প্রদায়ের দোকানেও ভাঙ্গচুর চালানো হয়েছে, আগুন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানকার মুসলমান সম্প্রদায় পাল্টা অভিযোগ করেছেন যে তারাই যদি দোকানে আগুন দিয়ে থাকবেন বা ঘরবাড়ি ভাঙ্গচুর করে থাকবেন, তাহলে বেছে বেছে কেন করবেন সেটা। পাশাপাশি থাকা হিন্দুদের দোকানগুলির মধ্যে কয়েকটিতেই আগুন ধরানো হয়েছিল বা ভাঙ্গচুর চালানো হয়েছিল, সেটা বিবিসি-র সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদনগুলি থেকেই স্পষ্ট।
আবার যারা ভাঙচুর বা অগ্নি সংযোগ করেছে, সেই ভীড়ের মধ্যে কারা ছিল, তা নিয়ে ভিন্ন মতামত পাওয়া গেছে।
ঔরঙ্গাবাদের মুসলমানরা বলেছেন ভাঙচুর চালিয়েছে যারা, তারা বহিরাগত। আবার ভাগলপুর এবং নওয়াদার ঘটনায় স্থানীয়রাই জড়িত ছিলেন, এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল আর রাণীগঞ্জেও দুই সম্প্রদায়ের মানুষই অভিযোগ করেছেন যে ভাঙচুর বা আগুন লাগানোর ঘটনায় যারা জড়িত ছিল, তারা কেউ এলাকার মানুষ নয়। ঔরঙ্গাবাদের জেলা শাসক রাহুল রঞ্জন মাহিওয়াল জানিয়েছেন যে ভাঙ্গচুরের যারা জড়িত ছিল, তারা পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকে এসেছিল। পশ্চিমবঙ্গ থেকেও একই ধরণের বক্তব্য পাওয়া গেছে।
৭. প্রশাসনের ভূমিকা
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে প্রশাসন একরকম নির্বাক দর্শকের ভূমিকায় থেকেছে।
ঔরঙ্গাবাদের ২৬ মার্চ যে মিছিল হয়েছিল, সেখান থেকে মসজিদের দিকে চপ্পল ছোঁড়া, কবরস্থানে গেরুয়া ঝান্ডা পুঁতে দেওয়া বা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপমানজনক স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। তবুও পরের দিন মুসলমান-প্রধান এলাকা দিয়েই মিছিল করার অনুমতি দিয়েছিল প্রশাসন। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের যখন বিবিসি সংবাদদাতারা বিষয়টি নিয়ে জানতে চান, তখন জবাব পাওয়া গিয়েছিল যে লিখিতভাবে কথা দেওয়া হয়েছিল যে আর গন্ডগোল হবে না। সেই জন্যই মিছিলের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ভাগলপুর, রোসড়া বা আসানসোলেও মিছিলকারীদের তুলনায় পুলিশের সংখ্যা এতটাই কম ছিল যে তারা বিশেষ কিছুই করে উঠতে পারে নি।
তবে নওয়াদা, ভাগলপুর আর রোসড়ায় স্থানীয় মুসলমানরা এটাও বলেছেন যে প্রশাসন যদি সতর্ক না হত, বা মাঠে না নামত, তাহলে পরিণাম আরও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারত। ঔরঙ্গাবাদে দাঙ্গা কবলিত এলাকার মানুষ অবশ্য বলেছেন যে প্রশাসনের চোখের সামনেই শহর জ্বলছিল।
৮. সামাজিক মাধ্যমে গুজব
পশ্চিমবঙ্গ আর বিহারের যে সব অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়েছিল, প্রথমেই সেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা বেশ কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। তার মধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরণের গুজব ছড়ানো হয়েছে। ঔরঙ্গাবাদে গুজব রটেছিল যে মুসলমানরা চারজন দলিত শ্রেণীর হিন্দুকে হত্যা করেছে। রামনবমীর মিছিলের ওপরে মুসলমানরা হামলা করেছে, এরকম গুজবও ছড়ানো হয়েছিল। আসানসোল আর রাণীগঞ্জেও বড়সড় দাঙ্গা হচ্ছে বলে খবর রটানো হয়েছিল – যার ফলে মানুষ নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল।
৯. মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক, অন্যদিকে বিজয়ের আনন্দোল্লাস
যেসব এলাকায় দাঙ্গা বা সাম্প্রদায়িক অশান্তি হয়েছে, তার পরে মুসলমানদের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরী হয়েছে।
ঔরঙ্গাবাদের এক বাসিন্দা ইমরোজ মধ্য প্রাচ্যে রোজগারের অর্থ জমিয়ে দেশে ফিরে এসে জুতোর ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
তার দোকান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন ইমরোজ ঠিক করেছেন এই দেশে আর ব্যবসা করবেন না। পরিবার নিয়ে তিনি হংকং চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। অন্যান্য এলাকার মুসলমানরাও ভাবতে শুরু করেছেন যে ব্যবসা বোধহয় তুলেই দিতে হবে। উল্টোদিকে ওই সব এলাকায় বসবাসকারী হিন্দু যুবকদের মধ্যে একটা জয়ের আনন্দ দেখতে পাওয়া গেছে। ভাগলপুরের এক যুবক শেখর যাদব বুক চিতিয়ে বলছিলেন, ইঁট ছুঁড়লে তো এইভাবেই জবাব দেওয়া হবে।
এদিকে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা ড. মনমোহন সিং বলেছেন, ভারতে সংখ্যালঘু ও দলিতদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বাড়ছে। গত বুধবার পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়ার সময় তিনি ওই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমার গভীর উদ্বেগ সম্পর্কে বেশি কিছু বলার প্রয়োজন নেই যে ভারতীয়দের ধর্ম, জাতি ও ভাষা-সংস্কৃতির ভিত্তিতে বিভক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।
ড. মনমোহন সিং বিভেদের রাজনীতি ও নীতি পরিত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ওই ঘটনা প্রতিহত করতে না পারলে দেশের গণতন্ত্রই সঙ্কটের মুখে পড়বে।
তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা মানে কেবলমাত্র সরকারের স্বাধীনতা নয়, তা মানুষের স্বাধীনতা। শুধু প্রভাবশালী ও বিশেষ অধিকারপ্রাপ্তদের স্বাধীনতা নয়, সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা মানে প্রশ্ন তোলার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা। এক জনের স্বাধীনতার অর্থ এটা নয় যে অন্যের স্বাধীনতা হরণ করা হবে।’
ড. মনমোহন সিং বলেন, ‘গরীব ও ধনীর মধ্যে ব্যবধান বাড়তে থাকলে উন্নয়নের রথ ছুটিয়ে কোনো লাভ নেই। সমাজ-অর্থনীতি-রাজনীতিসহ প্রত্যেক ক্ষেত্রে নতুনভাবে সাম্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করতে হবে।’
ড. মনমোহন সিং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই অনুষ্ঠানে পেশীশক্তি ও অর্থের বহুল ব্যবহারের ফলে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং ওই অব্যবস্থা দূর করার জন্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সংস্কার করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন।