ইলিয়াস আলী নিখোঁজের অর্ধযুগ
বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজের অর্ধযুগ পূর্ণ হলো আজ মঙ্গলবার। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে আড্ডা শেষে বনানীর বাসায় ফেরার সময় মহাখালী সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনে থেকে গাড়িচালকসহ নিখোঁজ হন তিনি।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তার ব্যবহৃত গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করলেও গাড়িচালকসহ নিখোঁজ থাকেন ইলিয়াস আলী। বিএনপি নেতাকে উদ্ধার ও ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছিল তার নির্বাচনী এলাকা সিলেটের বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জের মানুষ। আন্দোলন করতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হয় বেশ কয়েকজনকে।
দলের তৎকালীন এই কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদককে উদ্ধারের দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও জানা যায়নি ইলিয়াস আলী কোথায় আছেন। তার ভাগ্যে কী ঘটেছে। ইলিয়াসের সন্ধানের জন্য তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা সন্তানদের নিয়ে সাক্ষাৎ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। নানা তথ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ছুটে গেছেন গাজীপুরসহ কয়েক জায়গায়।
সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রথমদিকে ইলিয়াসকে উদ্ধারের জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে দাবি করা হলেও দীর্ঘ ছয় বছরেও তার কোনো সন্ধান দিতে পারেনি তারা। তবুও ইলিয়াস আলী ফিরবেন- এই আশায় এখন বুক বেঁধে আছেন স্ত্রী-সন্তানরা।
ইলিয়াস আলীকে সবাই ভুলতে বসলেও এখনো ভোলেননি জীবনসঙ্গী তাহসিনা রুশদি লুনা। স্বামী ফিরে আসবে এখনো এমন অপেক্ষায় আছেন তিনি। সরকার আন্তরিক হলে ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
লুনা বলেন, অপেক্ষার অনিশ্চয়তা নিয়েই তারা দিন কাটাচ্ছেন। ইলিয়াস আলীর ব্যাপারে নতুন কোনো তথ্য নেই। আশাও দিন দিন ক্ষীণতর হয়ে আসছে। মানুষ আশা নিয়েই বাঁচে, তারাও আশা নিয়েই বেঁচে আছেন। কিসের বিশ্বাস, কেন বিশ্বাস এই বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। আমার বাচ্চার একটা প্রশ্ন মনের মধ্যে নিয়ে বড় হচ্ছে যে, ওদের বাবাকে কী কারণে গুম হতে হলো, কারা গুম করল এর কোনো উত্তর মেলেনি। তাকে ফিরে পাবো এই আশাটা যেমন থাকবে, তেমনি দাবিটাও থাকবে আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দেয়া হোক।
ইলিয়াসপত্নী বলেন, নিখোঁজের পর পুলিশ তো মামলা নেয়নি। পরে বনানী থানায় জিডি করলেও তেমন কোনো অনুসন্ধান চালানো হয়নি। এখনো জানি না পুলিশের অগ্রগতি কী? হাইকোর্টে রিট করার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে উদ্ধার তৎপরতা সম্পর্কে জানাতে একটি নির্দেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত। কয়েক মাস পর সে নির্দেশ আর রক্ষা করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
লুনা বলেন, এক সময় নানা গুঞ্জন-গুজব শোনা যেত। এখন সেসবও বন্ধ হয়ে গেছে। তবুও আমি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বিশ্বাস রাখতে চাই ইলিয়াস একদিন ফিরে আসবে। তার এলাকার মানুষও এটাই বিশ্বাস করে।
ছেলে ফিরবে এমন আশায় এখনো পথ চেয়ে বসে থাকেন ইলিয়াস আলীর মা সূর্যবান বিবিও। তিনি বলেন, আমার ছেলে ফিরে এসে সংসারের হাল ধরেছে এমন স্বপ্ন প্রায় রাতেই দেখি। আমি এখনো অপেক্ষায় আছি। আল্লাহ আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেবেন এখনো আমি এমন আশা করি।