হাতে লিখেই ৯১ বছর পার করল উর্দু দৈনিক ‘দ্য মুসলমান’
টরে টক্কার শব্দ এখন অতীত, পোস্টকার্ড বিলুপ্ত প্রায়, কিন্তু এখনও রমরমিয়ে চলছে হাতে লেখা খবরের কাগজ। নয় নয় করেও ৯১ বছর পার করে ফেলল বিশ্বের একমাত্র হাতে লেখা উর্দু দৈনিক ‘দ্য মুসলমান’।
কম্পিউটার বা কোনও রকম মুদ্রণযন্ত্র নয়। কেবলমাত্র হাতে লিখেই ১৯২৭ সালে যাত্রা শুরু হয় এই দৈনিকের। সৈয়দ আজমত উল্লাহের হাত ধরে চেন্নাই শহর থেকে প্রথম প্রকাশিত হয় ‘দ্য মুসলমান’। সাবলীল উর্দু ভাষায় খবরের পিঠে খবর সাজিয়ে ৯১ বছর ধরে সমান জনপ্রিয় এই সংবাদপত্র।
খবরের কাগজটির বর্তমান সম্পাদক সৈয়দ আরিফুল্লাহ জানিয়েছেন, তিন প্রজন্ম ধরে চলছে এই উর্দু দৈনিক। সূচনাটা করেছিলেন তাঁর দাদু সৈয়দ আজমতউল্লাহ। তাঁর মৃত্যুর পর ২০০৮ সালে ওই কাগজটির হাল ধরেন তাঁর বাবা সৈয়দ ফাজাউল্লাহ। বাবার পরে তার কাঁধেই রয়েছে গোটা দায়িত্ব। তবে, সময় বদলালেও দৈনিকের ঐতিহ্য ও ধরনে কোনও পরিবর্তন হয়নি বলেই জানিয়েছেন তিনি।
‘দ্য মুসলমান’ এর মূল আকর্ষণ এর অসাধারণ ক্যালিগ্রাফি। খবর সাজানোর পাশাপাশি রঙ, তুলির বৈচিত্র্যে নানা ক্যালিগ্রাফি ফুটিয়ে তোলার কাজ করেন তিন ‘কাতিব’। রং আর বিভিন্ন কলম ও তুলি দিয়ে লেখা হয় শিরোনাম ও ছবির ক্যাপশন।
চেন্নাইয়ের ট্রিপলিকেন হাই রোডে দু’কামরার ছোট্ট দু’টি ঘরে প্রথম কাজ শুরু হয় এই দৈনিকের। চার পাতার কাগজটির সব খবর সাজিয়ে দেন আরিফুল্লাহ। এর পর রঙ, তুলি দিয়ে ক্যালিগ্রাফির কাজ শুরু করেন মুখ্য ‘কাতিব’ রহমান হোসেইনি। তাঁর মাসিক বেতন ২,৫০০ টাকা। খবর লেখার দায়িত্বে রয়েছেন শাবানা ও খুরশিদ বেগম। প্রতিটি পাতা সাজানোর জন্য দিনে ৬০ টাকা করে বেতন পান তাঁরা।
দৈনিকের কাজ শুরু হয় সকাল ১০টা থেকে। দু’জন অনুবাদক খবরগুলি উর্দু ভাষায় লিখে দেন। ঘণ্টা দু’য়েক ধরে অনুবাদের কাজ চলে। তারপর ক্যালিগ্রাফি ও লেখার কাজ শুরু করেন তিন ‘কাতিব’। মূল কপি তৈরি হয়ে গেলে দুপুর ১টা নাগাদ প্রিন্টের মাধ্যমে বাকি কপিগুলি তৈরি হয়। সন্ধের মধ্যে খবরের কাগজ পৌঁছে যায় প্রায় ২১ হাজার পাঠকের হাতে। প্রতিটি কাগজের দাম মাত্র ৭৫ পয়সা।
আরিফুল্লাহ জানান, ‘দ্য মুসলমান কখনোই থেমে থাকবে না। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই কাগজের ঐতিহ্য একই রকম থাকবে। দেশের সবস্তরের পাঠকের কাছে খবর পৌঁছে দেওয়াই এই দৈনিকের একমাত্র উদ্দেশ্য।’