লন্ডনে শব্দ সৈনিক বেলাল মোহাম্মদকে স্মরণসভা

Belalস্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং বলিষ্ঠ শব্দ সৈনিক বেলাল মোহাম্মদের স্মৃতি ধরে রাখতে উদ্যোগ গ্রহনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী। তিনি বলেন, বেলাল মোহাম্মদ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধে যে জোরালো ভুমিকা রেখেছেন তা এক কথায় অদ্বিতীয়। তিনি আওয়ামীল বা কমিউনিস্ট পার্টি না করেও একজন খাঁটি দেশ প্রেমিকের প্রমাণ দিয়ে গেছেন। এ কারণে এমন একজন অসাধারণ মানুষের স্মৃতি ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরী। শব্দ সৈনিক বেলাল মোহাম্মদ স্মরণে গত ৯ সেপ্টেম্বর সোমবার পূর্ব লন্ডনের মন্টিফিউরি সেন্টারে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গাফফার চৌধুরী এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, এ স্মৃতি ধরে রাখার কাজটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকেই করতে হবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক কাউন্সিলার শাহাব উদ্দিন আহমদ বেলাল বলেন, বেলাল মোহাম্মদ ছিলেন নীতির বেলায় আপোষহীন। তিনি যদি রাজনৈতিকভাবে সমঝোতা করতেন তাহলে জীবনে আরো অনেক উপরে উঠতে পারতেন, অনেক নামিদামি পুরষ্কার পেতেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা নিয়ে যে বিতর্ক তার জীবন্দ দলিল ছিলেন বেলাল মোহাম্মদ। জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে যে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা হয়েছে তার চরম জবাব দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এ শব্দসেনা। তিনি প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বলেছেন এবং  লিখে গেছেন যে, জিয়াউর রহমান কে যদি স্বাধীনতার ঘোষক বলতেই হয় তাহলে জিয়া হবেন স্বাধীনতার অষ্টম ঘোষক। তিনি আরো বলেন, সত্য বলার জন্য বেলাল মোহাম্মদকে অনেক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদ করায় তার পেনশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায়  এলে তা আবার চালু হয়। তিনি জানান, বেলাল মোহাম্মদ মৃত্যুকালে তার সমস্ত সম্পদ গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য দান করে গেছেন। এ সময় শাহাব উদ্দিন আহমদ বেলাল প্রয়াত এ শব্দ সৈনিকের সাথে একান্ত সাক্ষাতের সময়গুলোরও স্মৃতিচারণ করেন। এ মহান মানুষটির জীবনকে সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করা গেলে তা আমাদের জীবনের জন্য পাথেয় হবে বলে মনে করেন তিনি।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ, ইসহাক কাজলের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বেলাল মোহাম্মদের ওপর লিখিত একটি প্রবন্ধ পাঠ করে স্মৃতিচারণ করেন প্রবীণ সাংবাদিক হামিদ মোহাম্মদ। তার এ প্রবন্ধে বেলাল মোহাম্মদের কর্মজীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক ও ব্যাক্তিগত জীবনের নানাদিক উঠে আসে। হামিদ মোহাম্মদ বলেন, শুভ্র কেশী এবং শুভ্র বসনের এ মানুষটি নিজ স্ত্রী এবং একমাত্র পুত্র আনন্দকে অকালে হারিয়েছেন। তারপর গণমানুষের মধ্যেই তার বেঁচে থাকা। কবিতা চর্চা আর আড্ডাই ছিল তার আনন্দ। আড্ডাবাজ কবি কখনো নিরব থাকতে পারতেন না। হামিদ মোহাম্মদ আরো বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে একটি অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ বলে মনে করতে বেলাল মোহাম্মদ। তিনি বলতেন আরো একটি যুদ্ধ বাকী আছে এবং তিনি সেটা বিশ্বাসও করতেন। এ কারনে তিনি তরুণদের আহ্বান জানাতেন সে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য।
গল্পকার ও সাংবাদিক সায়েম চৌধুরী অনুষ্ঠান সঞ্চললনার পাশাপাশি বেলাল মোহাম্মদের সাথে কাটানো একান্ত সময় গুলোর স্মৃতিচারণ করেন। বেলাল মোহাম্মদের রচিত একটি কবিতা পাঠ করেন ইকবাল হোসেন বুলবুল।
এছাড়া বেলাল মোহাম্মদ স্মরণে স্মৃতিচারণ মুলক বক্তব্য রাখেন গোলাম কবির, ফারুক আহমদ,,আব্দুল আজিজ, কবি দিলু নাসের, গোলাম আকবর মুক্তার, আব্দুল হাছিব, কবি মজিবুল হক মনি, রুবি হক, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম খান, গয়াছুর রহমান গয়াছ, কয়েছ চৌধুরী প্রমূখ।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button