পারমাণবিক অস্ত্রের তৃতীয় সর্বোচ্চ মজুতকারী হচ্ছে পাকিস্তান?

pakistanপাকিস্তান খুব শিগগিরই তৃতীয় সর্বোচ্চ পারমাণবিক অস্ত্রের মজুতকারী দেশে পরিণত হচ্ছে বলে মনে করছেন সামরিক ঐতিহাসিক ও বৈশ্বিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ জোসেফ ভি মিকালেফ।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সামরিক ওয়েবসাইট মিলিটারিকমে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি দাবি করেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র মজুতের পাশাপাশি স্বল্পপাল্লার (৫ থেকে ১০ কিলোমিটার) যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। ইসলামাবাদের এসব নীতির কারণে ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই বিশেষজ্ঞ। এতে পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের সশস্ত্র ইসলামি জিহাদি সংগঠনগুলোর হাতে পারমাণবিক অস্ত্র পৌঁছে যেতে পারে বলে প্রকাশিত নিবন্ধে শঙ্কা জানিয়েছেন তিনি।
সামরিক ইতিহাস লিখে বিশ্বব্যাপী পরিচিত জোসেফ ভি মিকালেফ। বৈশ্বিক সম্পর্ক বিষয়েও তিনি একজন বিশেষজ্ঞ। ম্যাসাচুসেটই ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) সাবেক এই গ্রাজুয়েট এই বিষয়ে অনেক বই লিখেছেন। নির্মাণ করেছে বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারি। মিলিটারিকমে এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, আফগান তালেবান, তেহরিক-ই-জিহাদ ইসলামি, জয়েশ-ই মোহাম্মদ, লস্কর-ই তাইয়্যেবা অথবা হিজবুল মুজাহিদিনের মতো সশস্ত্র জিহাদি গ্রুপগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের অতীত সম্পর্ক ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে নতুন উপাদান যোগ করেছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে এসব সশস্ত্র গোষ্ঠী। পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি অব্যাহত রেখেছে জানিয়ে মিকালেফ বলেন, এটাই তাকে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন রেখেছে। গোপনে আর অবৈধভাবে গত ৪৮ বছর ধরে দেশটি এই কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ইসলামাবাদ নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রের উন্নতি ঘটিয়েছে। প্লুটোনিয়াম ও সমৃদ্ধ  ইউরেনিয়ামভিত্তিক অস্ত্র এর মধ্যে রয়েছে বলেও জানান তিনি। মিকালেফের ধারণা, পাকিস্তানের চারটি প্লুটোনিয়াম উৎপাদন রি-এক্টর ও তিনটি প্লুটোনিয়াম পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের প্লান্ট রয়েছে। এছাড়া দেশটি গ্যাসভিত্তিক ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম উৎপাদন করে বলেও জানান তিনি। সংবাদমাধ্যমের অসমর্থিত খবরের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ইসলামিক স্টেটের সদস্যরা পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের নিরাপত্তায় সহায়তা দেওয়ার কাজ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে মিকালেফ লিখেছেন, বর্তমানে পাকিস্তানের কাছে ১৪০ থেকে ১৫০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। কিন্তু ধারণা করা হয় দেশটির কাছে ৩ থেকে ৪ হাজার কিলোগ্রাম ইউরেনিয়াম ও দুইশ’ থেকে তিনশ’ গ্রাম প্লুটোনিয়াম রয়েছে। এসব উপাদান ব্যবহার করে আরও দুই থেকে আড়াইশ’টি অস্ত্র তৈরি সম্ভব বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে প্রচারণা চালানো অলাভজনক সংস্থা প্লাউশেয়ারস-এর সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে রাশিয়ার (৬,৬০০টি)। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৬ হাজার ৪৫০টি, ফ্রান্সের কাছে  তিনশ’টি, চীনের ২৭০টি, যুক্তরাজ্যের ২১৫টি, পাকিস্তানের ১৩০টি, ভারতের ১২০টি ও উত্তর কোরিয়ার রয়েছে ১৫টি পারমাণবিক অস্ত্র।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button