সিনেমাকে হার মানিয়ে ছিলেন ‘ধর্ষক গুরু’
এক সামান্য টাঙ্গাওয়ালা থেকে ১০ হাজার কোটি রুপির সাম্রাজ্যের মালিক। ভারতের স্বঘোষিত ধর্মগুরু আসারাম বাপুর জীবনের উত্তরণের গল্প অনেকটাই সিনেমার মতো। ২০১৩ সালে গ্রেফতারের পর আশ্রম থেকে উদ্ধার হওয়া তথ্য অনুযায়ী, আসারামের প্রকৃত নাম অসুমল সিরুমালানি। ১৯৪১ সালে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশে জন্ম। দেশভাগের পর প্রথমে গুজরাত, পরে রাজস্থানে বসবাস শুরু করে আসারাম বাপুর পরিবার। আজমিরে আত্মীয়দের সাহায্যে যুবক আসারাম কর্মজীবনে পা রাখেন টাঙ্গাওয়ালা আসারাম আজমির স্টেশন থেকে তীর্থযাত্রীদের দরগা শরিফে নিয়ে যেতেন। দু’বছর টাঙ্গা চালিয়ে পরিবারের দেখভাল করেছিলেন আসারাম। আজমির স্টেশনের পাশে খারি কুউ টাঙ্গা স্ট্যান্ড আজও আছে। সেই সময় যারা আসারামের সহকর্মী ছিলেন, তাদের অনেকেই আপাত লাজুক সেই যুবককে এখনও মনে রেখেছেন। আজমির টাঙ্গা উইনিয়নের সদস্য পান্না উস্তাদ জানান, অত্যন্ত সাধারণ ছিল আসারাম। মনে রাখার মতো কোনো বিশেষত্ব তার মধ্যে ছিল না। কিন্তু যে দিন তাকে আমরা ধর্মগুরু হিসেবে দেখলাম, তখন চিনতে অসুবিধা হয়নি।
১৯৬৪ সালের কথা। যুবক আসারামের সঙ্গে দেখা হয় ধর্মগুরু লীলাশাহের। তাকেই নিজের গুরু মেনে সংসার ত্যাগ করে আসারাম। তার আগে মাত্র ১৫ বছরে বয়সে বিয়ে করে তিন সন্তানের বাবা হয়েছিলেন আসারাম। ১৯৭২ সালে সবরমতি নদীর তীরে মোতেরা এলাকা প্রথম আশ্রম স্থাপন করলেন আসারাম। জমি দখল করা ছিল আসারামে একটি প্রিয় সখ। নিজের সখ পূরণ করতে কংগ্রেস বা বিজেপি, সব দলের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করে আসারাম। ভারতের বিভিন্ন আদালতে আসারামের নামে জমি দখলের একাধিক মামলা আজও চলছে। কিন্তু রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকায় সেই সব মামলা কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত অক্ষরজ্ঞান নিয়েই আসারাম বিভিন্ন ব্যবসায় নিজের বিস্তার বাড়াতে শুরু করে। চার দশকের মধ্যে আসারামের সাম্রাজ্য ১০ হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়ে যায়। সবরমতির তীরে ছোট আশ্রম দিয়ে শুরু করে বর্তমানে সারা বিশ্বে আশ্রমের সংখ্যা ৪০০। আর ভক্তের সংখ্যা আসারামের নিজস্ব ওয়েবসাইটের হিসেব প্রায় চার কোটি। আশ্রমের পাশাপাশি তার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্কুল ‘গুরুকূল’ ছড়িয়ে আছে যোধপুর, ছিন্দওয়ারা, ইন্দোর, রোহতক এবং আহমেদাবাদে। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও শাখা সংগঠন খুলে ফেলেছিল আসারামের সংস্থা।
জমি দখল এবং আশ্রমে বসে কালাজাদুর মতো একাধিক কুর্কীতির সঙ্গে বারবার নাম জড়িয়েছে। কিন্তু ২০০৮ সালে প্রথমবার আইনের নজরে পড়ে আসারামের আশ্রম। মোতেরার আশ্রমে দীপেশ ও অভিষেক নামের দুই কিশোরের পচাগলা লাশ উদ্ধার হয়।ওই দুই কিশোরের পরিবার দাবি করে, কালাজাদু চর্চার সময় খুন করা হয়েছে দীপেশ ও অভিষেককে। ২০০৯ সালে আশ্রমের সাত কর্মচারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর ২০১২ সালে দিল্লি গণধর্ষণের পর আসারামের মন্তব্য নিয়ে প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়। ধর্ষিতার উচিত ছিল ধর্ষণকারীদের কাছে জীবন ভিক্ষা করা। আসারামের এই বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর একবছরের মধ্যে আসারাম নিজেই ধর্ষণে অভিযুক্ত হন। একইসঙ্গে গ্রেফতার হয় আসারামের বড় ছেলে নারায়ণ সাইকে। বুধবার আসারামসহ চারজনকে ধর্ষণ, যৌন হেনস্তা এবং অবৈধভাবে আটক রাখাসহ একাধিক অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাবাস দিয়েছে আদালত। ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পরও আসারামের আশ্রমে ভক্তের সংখ্যায় কমতি হয়নি।বুধবারও আসারামের বিভিন্ন আশ্রমে ভক্তরা এসেছেন। তাদের বিশ্বাস, মিথ্যা অভিযোগে আটক করা হয়েছে গুরুদেবকে।