লিভারপুল ক্লাবের ভক্তরা মসজিদ আর মুসলিম নিয়ে গান গাইছে
‘মোহাম্মদ সালাহ! এগিয়ে যাও মো! এগিয়ে যাও!’
‘মোহাম্মদ সালাহ! এগিয়ে যাও মো! এগিয়ে যাও!’ বিবিসির সাংবাদিক রাবিয়া লিমবাদা লিখছেন, মঙ্গলবার রাতে লিভারপুল আর রোমার মধ্যে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের খেলার সময় তার বাড়িতে তারই ছেলেমেয়েরা এভাবেই চিৎকার করছিল – লিভারপুলের তারকা মোহাম্মদ সালাহর সমর্থনে।
এ বছর সালাহ লিভারপুলের হয়ে ৪১টি গোল করেছেন, জিতেছেন পেশাদার ফুটবলার সমিতির দেয়া বছরের সেরা ফুটবলারের পুরস্কারও।
ভক্তেরা মোহাম্মদ সালাহর এখন নতুন নাম দিয়েছেন ‘ইজিপশিয়ান কিং’।
মোহাম্মদ সালাহর নিজ দেশ মিশরে তিনি ইতিমধ্যেই ভক্তদের মনে রাজার আসনেই অধিষ্ঠিত। এর কারণ শুধু লিভারপুলে সালাহর সাফল্য নয়। মিশরের জাতীয় দলকেও এবার রাশিয়ার বিশ্বকাপে নিয়ে গিয়েছেন সালাহ, বাছাইপর্বে এক বিখ্যাত পেনাল্টিতে গোল করে।
আর লিভারপুলের ভক্তেরা তাকে চিত্রিত করছেন ‘ফারাও’ বা মিশরের প্রাচীন রাজা হিসেবে, এমন ব্যানার এখন ঝুলছে লিভারপুলের হোম গ্রাউন্ডের আশপাশে।
লিভারপুলের ভক্তেরা এখন মোহাম্মদ সালাহকে এতটাই আপন করে নিয়েছেন যে খেলার দিন গ্যালারিতে তাদের এখন ‘মুসলিম’ এবং ‘মসজিদ’ নিয়ে গান গাইতে শোনা যাচ্ছে।
মুসলিম নারীরা লিভারপুলের মত লাল বা মিশরের পতাকার লাল-সাদা-কালো রঙের হিজাব পরছে, পুরুষদের মতোই লিভারপুলে সাফল্য উদযাপন করছে তারা।
রাবিয়ার কথায়, এসব জিনিস সালাহর সাফল্যের তাৎপর্যকে ফুটবল খেলার উর্দ্ধে এক বৃহত্তর স্তরে নিয়ে যাচ্ছে।
সালাহ এখন লিভারপুল বা মিশর – যার হয়েই মাঠে নামুন না কেন, মিশরের লোকেরা তখন ৯০ মিনিটের জন্য তাদের রাজনৈতিক বিভেদ-সংঘাত ভুলে গিয়ে বাড়িতে বা ক্যাফেতে টিভির সামনে ভিড় করছে।
রাবিয়া লিমবাদা লিখছেন, তার ছেলেমেয়েদের কাছে সালাহ এখন একজন রোল মডেল বা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন। তার খেলা, মাঠে ওপর দিকে দু’হাত তুলে তার প্রার্থনা করা, তার দাড়ি – সবকিছুই তাদের একজন মুসলিম হিসেবে গর্বিত করছে।
তিনি লিখছেন, সালাহ ব্রিটেনে মুসলিমদের সম্পর্কে ধারণা পাল্টে দিচ্ছেন – যে ব্রিটেনে এখনকার পরিবেশে মুসলিমদের তাদের ইসলামিক ঐতিহ্য প্রদর্শন করতে দু’বার ভাবতে হয়।
“কিন্তু অনেক দিন পর মোহাম্মদ সালাহ-র মধ্যে আমরা এমন একজন মুসলিমকে পাচ্ছি – যিনি একজন ‘বগিম্যান’ নন – অর্থাৎ যাকে দেখে ভয় পাবার কিছু নেই।”
মোহাম্মদ সালাহ এর মধ্যে দিয়ে ব্রিটেনের বিভিন্ন সম্প্রদায়কে পরস্পরের সাথে যুক্ত করছেন, বলছেন রাবিয়া লিমবাদা।
তিনি লিখছেন, তার বন্ধূদের মধ্যে যারা লিভারপুলে সমর্থক এবং মুসলিম নন – তারাও এ ব্যাপারটা উপলব্ধি করছেন। তাদের কথা, মোহাম্মদ সালাহ-র উত্থানের গুরুত্ব এখানেই যে তা সংকীর্ণ মানসিকতার লোকদের চিন্তাভাবনার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।
মোহাম্মদ সালাহ তার মুসলিম পরিচয় নিয়ে কোন রাখঢাক করেন না।
লিভারপুলের তিন মুসলিম তারকা সালাহ, সাদিও মানে এবং এমরে চ্যানকে নিয়ে দলের জার্মান ম্যানেজার ইয়ুর্গেন ক্লপ এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, কিভাবে এই তিন খেলোয়াড় ম্যাচের আগে ইসলামী প্রথা অনুযায়ী ওজু করে খেলার জন্য প্রস্তত হন।
ক্লপ বলেছেন, অন্য খেলোয়াড়রা তাদের এই সময়টুকু দেন, তাদের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
রাবিয়া বলছেন, এসব কথা জানতে পারাটা আমাদের সন্তানদের জন্য যে কত গুরুত্বপূর্ণ – তা আমার বুঝিয়ে বলা সত্যি কঠিন।
তিনি বলছেন, তার সন্তানদের জন্য এবং তাদের মতো অন্যদের জন্যও এটা এক বড় বার্তা, এক বড় অনুপ্রেরণা। -বিবিসি বাংলা