ভারত নয় চীনকে বেছে নিলো দেশের পুঁজিবাজার

DSEচীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ শেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত অংশীদার করার সংশোধিত প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ারহোল্ডাররা। এর ফলে বাদ পড়লো ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক-এর কনসোর্টিয়াম। এই চুক্তি সম্পাদিত হলে চীনের এই কনসোর্টিয়াম ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ২৫ শতাংশ বা ৪৫ কোটি সাড়ে ৯ লাখ শেয়ারের মালিক হবে।
গতকাল রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীতে ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে কোম্পানির সাধারণ সভায় শেয়ারহোল্ডাররা এই প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এখন পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন পেতে সংস্থাটিতে প্রস্তাব পাঠাবে ডিএসই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রায় চার মাস আগে কৌশলগত অংশীদার পেতে ডিএসইর আহ্বানে দুটি কনসোর্টিয়াম দরপত্র জমা দেয়। এদের মধ্যে চীনের দুই এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম ছাড়া অন্য দরদাতা ছিল ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক-এর কনসোর্টিয়াম। দুটি প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে ১০ই ফেব্রুয়ারি চীনের কনসোর্টিয়ামকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই।
গতকাল বিশেষ সাধারণ সভায় বিএসইসি’র দেয়া শর্তানুযায়ী, শেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ সমন্বয়ে গঠিত এই কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে ডিএসই’র চুক্তির জন্য সংশোধিত প্রস্তাবে শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি চান ডিএসই’র চেয়ারম্যান আবুল হাশেম। পরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ারহোল্ডারদের উপস্থিতিতে ডিএসইর ২৫ শতাংশ বা ৪৫০,৯৪৪,১২৫টি সাধারণ শেয়ার চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছে বিক্রয়ের চুক্তি এবং সেই সঙ্গে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে অনুমোদিত ও গৃহীত হয় সভায়।
ডিএসই’র চেয়ারম্যান বলেন, পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনার নিরলস পরিশ্রম ও দীর্ঘ কর্মযজ্ঞের কারণে বিশ্বের খ্যাতনামা শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এর কনসোর্টিয়াম থেকে ডিএসই’র কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার প্রস্তাব পাওয়া গেছে। দিনটি ডিএসই’র ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
ডিএসই’র পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে ডিএসই’র কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসাবে চীনের কনসোর্টিয়ামের চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি এগিয়ে যাচ্ছে। ইজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের মাধ্যমে অনেকটা বাধা কেটে গেলো। এখন চীনের কনসোর্টিয়াম চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে বলে শেয়ারহোল্ডাররা আশাবাদী।
জানা গেছে, গত ২২শে ফেব্রুয়ারি চীনের কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অনুমোদনের জন্য ডিএসইর সেক্রেটারি মো. আসাদুর রহমান বিএসইসিতে প্রস্তাব জমা দিয়েছিল। তবে ১৯শে মার্চ ডিএসইর দেয়া চীনা কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার প্রস্তাব অনুমোদন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে ডিএসই কর্তৃপক্ষকে নতুন করে সংশোধিত প্রস্তাব করার সুযোগ দেয়। এরই আলোকে ৩০শে এপ্রিল ইজিএম আয়োজন করে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।
বিএসইসির ওই শর্তগুলোর মধ্যে ছিল- কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সঙ্গে এমন কোনো চুক্তি করা যাবে না, যা দেশের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং ডিএসইর সাধারণ শেয়ারহোল্ডার এবং শেয়ারবাজারের উন্নয়নের পরিপন্থি। আর ডিএসইর আর্টিকেলের পরিপন্থি কোনো সংশোধনী গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ছাড়া বিএসইসিতে প্রস্তাবের আগে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিতে হবে, ডিএসইর সাধারণ সভায় বিএসইসির পর্যালোচনা কমিটির পর্যবেক্ষণ ও প্রত্যাহর করা শর্তগুলো জানাতে হবে এবং সাধারণ সভায় গৃহীত প্রস্তাব, সংশোধিত চুক্তি ও অন্যান্য ডকুমেন্টস কমিশনে দাখিল করার শর্ত দেয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের বোর্ড সভায় চীনা কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বেছে নেয়া হয়। আর ২২শে ফেব্রুয়ারি সকালে চীনের কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অনুমোদনের জন্য ডিএসইর সেক্রেটারি মো. আসাদুর রহমান বিএসইসিতে প্রস্তাব জমা দেয়। এর আলোকে একইদিনে ডিএসইর প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ৪ সদস্যের কমিটি করে বিএসইসি।
ডিএসইর প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ে বিএসইসির পর্যালোচনা কমিটি চীনা কনসোর্টিয়ামের কিছু শর্তের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি ডিএসইকে লিখিতভাবে জানায় বিএসইসি। এরই আলোকে ডিএসই কর্তৃপক্ষ ৪ঠা মার্চ ব্যাখ্যা দিয়েছে। তবে সেই ব্যাখ্যায় বিএসইসি সন্তুষ্ট হতে পারেনি।
বিএসইসির ওই চিঠিতে বলা হয়, সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং শেনচেন স্টক এক্সচেঞ্জকে নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম ডিএসইর শেয়ার ২২ টাকা দরে কিনতে চেয়েছে। একই সঙ্গে কিছু টেকনিক্যাল সাপোর্টের কথা বলেছে। কিন্তু এর নিরপেক্ষ মূল্যায়ন নেই। এ ছাড়া চীনের বিনিয়োগের প্রস্তাবে কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে।
চীনা প্রস্তাবের শর্তগুলো হলো- কৌশলগত অংশীদারিত্বের এই চুক্তি হতে হবে যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী। দ্বিতীয়ত, কোনো বিভেদ দেখা দিলে তার সমাধান হতে হবে যুক্তরাজ্যের আরবিট্রেশন আইন অনুযায়ী। তৃতীয়ত, ডিএসইর আর্টিকেল পরিবর্তন করে কিছু বিষয় যুক্ত করতে হবে। সেসব বিষয় পরে কখনও পরিবর্তন করতে চাইলে ডিএসইর বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) পাস করার আগে কনসোর্টিয়ামের অনুমোদন নিতে হবে।
জানা গেছে, চীনের কনসোর্টিয়াম ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারের দাম দিতে চেয়েছে ২২ টাকা। তবে শর্তানুযায়ী, ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররা এরই মধ্যে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা লভ্যাংশ নেয়ায়, সমপরিমাণ দর কমে এসেছে। এক্ষেত্রে ডিএসইর ১৮০ কোটি শেয়ারের ২৫ শতাংশ বা ৪৫ কোটি শেয়ার প্রতিটি ২১ টাকা দামে ৯৪৫ কোটি টাকায় কিনবে। পাশাপাশি ডিএসইর কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা (৩৭ মিলিয়ন ডলার) ব্যয় করবে। যাতে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে ১ হাজার ২৪৫ কোটিরও বেশি টাকা পাবে ডিএসই।
অপরদিকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ নেতৃত্বাধীন ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক কনসোর্টিয়াম প্রতিটি শেয়ার ১৫ টাকা করে ৪৫ কোটি শেয়ার ৬৭৫ কোটি টাকায় কিনতে চায়। আর প্রযুক্তি সহায়তার বিষয়ে কোনো প্রযুক্তি সিস্টেম না দিয়ে শুধু পরামর্শ এবং অভিজ্ঞতা শেয়ারের প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি প্রস্তাবিত অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য ডিএসইর সঙ্গে নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে একটি ব্যবসায়িক চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু সবশেষে দুই কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে চীনা দুই স্টক এক্সচেঞ্জকেই বেছে নিয়েছে ডিএসই।
ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু সাধারণ সংশোধনী এনে চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবটি বিশেষ সাধারণ সভায় অনুমোদন করা হয়েছে এবং সংশোধনী প্রস্তাব আজই (গতকাল) বিএসইসিতে পাঠানো হবে। তবে চীনা কনসার্টিয়ামের আগের প্রস্তাবের মূল বিষয়গুলো অপরিবর্তিত রয়েছে। -মানবজমিন

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button