বসল চতুর্থ স্প্যান
পদ্মা সেতুর ৬০০ মিটার এখন দৃশ্যমান
বাংলাদেশের বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের উপর চতুর্থ স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) বসানো হয়েছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের (খুঁটি) ওপর স্প্যানটি বসানো হয়। এই স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ৬০০ মিটার দৃশ্যমান হলো।
এর আগে ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ নম্বর পিলারে তিনটি ধূসর রংয়ের স্প্যান বসানোর মাধ্যমে ৪৫০ মিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয় সেতুতে।
পদ্মা সেতু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, শনিবার বিকেলে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যান বহনকারী তিন হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ভাসমান ‘তিয়ান ই’ ক্রেনটি ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলার এলাকায় পৌঁছায়। স্প্যান বহনকারী ক্রেনটিকে ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের সামনে পজিশন অনুযায়ী আনা হয়। এরপর লিফটিং ক্রেনের সাহায্যে অস্থায়ী বেয়ারিংয়ের ওপর রাখা হয় স্প্যানটিকে। তবে স্থায়ীভাবে বসতে কয়েকদিন সময় লাগবে বলেও জানান তারা।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান। গত ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান।
মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে দ্বিতলবিশিষ্ট পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। পুরো সেতুতে মোট খুঁটির সংখ্যা হবে ৪২। একটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হবে। ৪২টি খুঁটির ওপর এ রকম ৪১টি স্প্যান বসানো হবে।
স্প্যানের পাশাপাশি পদ্মা নদীর ওপর খুঁটির নির্মাণকাজও পুরোদমে চলছে। আগের পাঁচটি খুঁটিসহ আগামী দুই মাসের মধ্যে মোট ১৮টি খুঁটি দৃশ্যমান করা সম্ভব হবে বলে জানান পদ্মা সেতুর প্রকল্পের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, ২০১৯ সালেই পুরো পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করা যাবে।
২০০৭ সালের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্প পাস করেছিল সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর ব্যয় আরও আট হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়। ফলে পদ্মা সেতুর ব্যয় দাঁড়িয়েছে সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।