ইরান-ইসরাইল দ্বন্দ্বে উদ্বিগ্ন বিশ্ব
সিরিয়ায় হামলা-পাল্টা হামলায় মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ও ইসরাইল। উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ সংঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্ব নেতারা। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশ দুটিকে নতুন করে আর কোনো সংঘাতে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি ও বৃটেন।
খবরে বলা হয়, সিরিয়ায় আবারো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ইরান ও ইসরাইল। গোলান উপত্যকায় ইসরাইলের স্থাপনায় রকেট নিক্ষেপ করে ইরান।
ইরানের এই হামলায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছে ইসরাইল। পরে পাল্টা জবাবে সিরিয়ায় ইরানের স্থাপনাতে ইসরাইল বোমা হামলা চালায়। এই হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ইরান। উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতিতে সিরিয়ায় সব ধরনের আক্রমণাত্মক অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতারেন। এক বিবৃতিতে তিনি মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিরসনে জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান। সিরিয়ায় যুদ্ধরত দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, ইসরাইলের হামলা খুবই উদ্বেগজনক। ইরান ও ইসরাইলের উচিত উস্কানিমূলক কার্যক্রম বন্ধ করা। যেকোনো সমস্যা সংঘাতের পরিবর্তে সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন লাভরভ।
প্রসঙ্গত, রাশিয়া ও ইরান উভয় দেশই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সহায়তা করে। কিন্তু সিরিয়ায় ইরানের সরাসরি সামরিক উপস্থিতির বিষয়ে আপত্তি তুলেছে ইসরাইল। দেশটি বলেছে, তারা সিরিয়ার ভূ-খ-ে ইরানের সামরিক উপস্থিতি মেনে নেবে না। ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্ব শক্তির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর সিরিয়া ইসরাইল-ইরান দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পায়। কেননা দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক চুক্তি থেকে বের করে নেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ইসরাইল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইলের স্থাপনায় হামলা চালায় ইরান। ইসরাইলও পাল্টা জবাব দেয়। বৃহস্পতিবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইরান সীমা অতিক্রম করেছে। বোমা হামলা তারই ফল।
এদিকে, ইসরাইলের স্থাপনায় ইরানের ‘উস্কানিমূলক’ হামলার সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স বলেন, সিরিয়ায় আক্রমণাত্মকভাবে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে ইরান। এগুলো ইসরাইলের দিকে তাক করে রাখা হয়েছে। ইরানের এমন কার্যক্রম অগ্রহণযোগ্য। এটা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বিপজ্জনক। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই কথা বলেছে বৃটেন ও জার্মানি। দেশ দুটি ইসরাইলের সামরিক স্থাপনায় ইরানের হামলার সমালোচনা করেছে। ইসরাইলের নিরাপত্তায় সবসময় পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্স। বৃহস্পতিবার জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের সঙ্গে বৈঠক শেষে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোন সিরিয়ায় উভয়পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানান।
আর বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ইরানকে অবশ্যই এমন কর্মকা- পরিত্যাগ করা উচিত, যা অঞ্চলটিকে আরো অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেবে। একই সঙ্গে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য সিরিয়া সরকারের ওপর চাপ দেয়ার জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানান বরিস।
অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্য সংকটে নজিরবিহীনভাবে ইসরাইলকে সমর্থন দিয়েছে বাহরাইন। দেশটি বলেছে, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। এক টুইটার বার্তায় বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালিদত বিন আহমেদ আল খলিফা বলেন, বিপজ্জনক শক্তিকে ধ্বংস করে আত্মরক্ষার অধিকার ইসরাইলের রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। বৃহস্পতিবার জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন রুহানি। এসময় তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কোনো উত্তেজনা চায় না ইরান। তার দেশ সবময় মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা প্রশমিত করতে চায়। নিরাপত্তা জোরদার করে সেখানে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চায়।