মাদরাসায় ছাত্র বেড়ে গেছে, এটা কমানোর আন্দোলন শুরু করেছি : জয়
পঁচাত্তরের পর দেশে স্কুল তৈরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, ওই সময় স্কুল বন্ধ করে দেয়ায় প্রতি তিনজন স্কুলছাত্রের বিপরীতে এখন একজন মাদরাসা ছাত্র তৈরি হয়েছে। এটা কমিয়ে দিতে আমরা এরই মধ্যে আন্দোলন শুরু করে দিয়েছি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘সুচিন্তা ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংগঠন আয়োজিত ‘রূপকল্প-২০২১ : গত ৫ বছরের অর্জন এবং আগামী ৫ বছরের অঙ্গীকার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে জয় আরো বলেন, এ জয়লাভ নির্ভর করে শুধু প্রচারের ওপর। দেশের জন্য অনেক কাজ করার পরও কখনো কখনো ভোট পাওয়া যায় না। আবার কাজ না করেও ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে নির্বাচনে জয়লাভ করা যায়।
আওয়ামী লীগকে আবারও নির্বাচিত করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে জয় বলেন, অসমাপ্ত বিপ্লব শেষ করার জন্য আওয়ামী লীগকে আবার সুযোগ দিতে হবে। নতুন ও আধুনিক একটি বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, গত সাড়ে চার বছরে বাংলাদেশে যত উন্নয়ন হয়েছে, স্বাধীনতার পর কোনো সরকারের আমলে এত উন্নয়ন হয়নি। কেবল আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল বলেই বিদ্যুত্ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের কাজ অর্ধেক শেষ হয়েছে, আমরা বাংলাদেশে একটা বিপ্লব করতে চাই। কিন্তু মাঝপথে থেমে গেলে আপনারা জানেন কী হয়? বাংলাদেশকে যারা পাকিস্তান বানাতে চায় তারা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের কোনো উন্নয়ন হবে না।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে, এমন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, অপপ্রচার করে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা মোকাবিলা করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত যদি আবারও ক্ষমতায় আসে তাহলে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে, তা শেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশে আবারও সন্ত্রাস-বোমা হামলা শুরু হবে। এজন্য বাংলাদেশের মানুষকে সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের যে সুযোগ আছে তা ধরে রাখতে হবে। সেই সুযোগ হারালে আমাদের সামনে ভয় আছে। সামনে নির্বাচন, এ নির্বাচনের ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের ভবিষ্যত্ কী হবে।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, রাজাকারদের নিয়ে তারা রাজনীতি করেছে। রাজাকারদের তারা মন্ত্রী বানিয়েছে। তারা কীভাবে বলবে, যে তারা জঙ্গিবাদ দমন করবে? কারণ দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীরা তাদের সঙ্গেই আছে। তাদের সময় আমরা টানা পাঁচ বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ছিলাম। তারা দেশকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জঙ্গিবাদী দেশ হিসেবে পরিচিতি দিয়েছিল। আমরা জঙ্গিবাদ দমন করেছি। এখন প্রায় প্রতি সপ্তাহেই আমরা জঙ্গি ধরছি।
জয় বলেন, বিএনপির সময়ে আমরা ছিলাম ফেইলর স্টেট। আর এখন বলা হয়, বাংলাদেশ হচ্ছে নেক্সট ইলেভেন। আর এটা হয়েছে মাত্র পাঁচ বছরে।
তিনি বলেন, সব সময় শোনা যায়—দুই নেত্রী, দুই নেত্রী। দুই দলই তো ক্ষমতায় এসেছে। তুলনা করে দেখুন—কে দেশকে এগিয়ে নিয়েছে, আর কে দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে।
বর্তমান সরকারের আমলে ‘মারাত্মক উন্নতি’ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, গত সাড়ে চার বছরে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হয়ে এক হাজার ৪৪ ডলার হয়েছে। মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে। ভেবে দেখুন আমরা কোথায় ছিলাম, আর এখন কোথায় আছি। দুর্নীতি অর্ধেকে নেমে এসেছে। দুর্নীতিতে আমরা কোথায় ছিলাম, এখনো কোথায় এসেছি। বিএনপি সরকারের আমলে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ শীর্ষ ছিল, এখন সে অবস্থান ৪৪তম। এটা মারাত্মক উন্নতি।
জয় বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের অনেক সমালোচনা রয়েছে। কিন্তু তারা কখনও বলে না তারা ভবিষ্যতে কী করবে? তারা কোনো ভবিষ্যতের পরিকল্পনা দেয় না। তারা বলে না, অর্থনীতি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের জন্য কী করবে?
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ না এলে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে, তা আবার শেষ হয়ে যাবে। এই যে আজকের বিদ্যুত্ তা দুই বছরে শেষ হয়ে যাবে। সন্ত্রাসীরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিএনপি এলেই আবার তারা চলে আসবে। এজন্য দেশের মানুষকে সচেতন হতে হবে। তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের দেখতে হবে কী সুযোগ আছে সামনে। শুধু তাই নয়, কী ভয় আছে সামনে।
বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে এসে ‘রূপকল্প ২০২১’ নিয়ে কথা বলেন জয়। বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে আওয়ামী লীগ দেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে চায়। গত পাঁচ বছরে দেশের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে আরও দ্বিগুণ করা হবে। আমাদের জিডিপি বাড়াতে হবে। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই এটা পারবে।
জয় বলেন, থ্রিজি আনা আমাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। ক্ষমতায় এলে ফোরজি আনা হবে।
অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত, সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা ট্রিবিউটনের সম্পাদক জাফর সোবহান, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, শেখ রেহানার ছেলে রেজোয়ান সিদ্দিকী ববি, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, ব্যান্ড শিল্পী মাকসুদুল হক উপস্থিত ছিলেন।